পুরুষোত্তম মাস

পুরুষোত্তম মাস

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, “হে রমাপতি! আমি যেরূপ এই জগতে পুরুষোত্তম নামে বিখ্যাত এই অধিমাসও দ্রুপ ত্রিলোকে পুরুষোত্তম বলে বিখ্যাত হবে। আমাতে যে সমস্ত গুণ আছে, সে সব আমি এই মাসে অর্পণ করলাম। আমার সদৃশ হয়ে এই অধিমাস অন্য সকল মাসের অধিপতি হবে।হিন্দু পঞ্চাঙ্গ অনুসারে ২০২৩ সালে মলমাস বা অধিক মাস শুরু হবে ১৮ জুলাই থেকে। চলবে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত।

অহমেতৈীর্থলোকে প্রথিতঃ পুরুষোত্তমঃ ।
তথায়মপি লোকেষু প্রথিতঃ পুরুষোত্তমঃ ॥
অস্মৈ সমর্পিতাঃ সর্বে যে গুণাময়ি সংস্থিতাঃ ।
মৎসাদৃশ্যমুপাগম্য মাসানামধিপো ভবেৎ ॥

পুরুষোত্তম মাস   বাংলা বর্ষপঞ্জিতে মোটামুটি দুই থেকে তিন বছর পরপর একটি অধিক মাস দেখা যায়। চান্দ্র ও সৌরবর্ষের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত একটি মাস হিসাব করা হয়। এই অতিরিক্ত মাসটিকেই পুরুষোত্তম মাস বলা হয়। এটি অনেকটা ইংরেজি অধিবর্ষের মতো। যেহেতু অধিমাসে কোনো পালনীয় তিথি বিদ্যমান থাকে না, তাই কোনো বৈদিক কর্মকাণ্ড এই মাসে পালিত হয় না।

সেজন্য স্মার্ত পণ্ডিতেরা অধিমাসকে ‘মলমাস’ বা ‘মলিনমাস’ বলে ঘৃণা করেন। কিন্তু পরমার্থশাস্ত্র এ অধিমাসটিকে সর্বোপরি শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেছে। যেহেতু এ মাসটি সকল প্রকার সকাম কর্মশূন্য, তাই সেটি হরিভজনের জন্য অধিক উপযোগী। স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পরমপবিত্র বৈশাখ, কার্তিক ও মাঘ মাস অপেক্ষা এই অধিমাসকে অধিক মহিমা প্রদান করেছেন। এবং একে নিজ নাম ‘পুরুষোত্তম দ্বারা অলঙ্কৃত করেছেন।

 পুরুষোত্তম মাস  কেন হয়। প্রাচীন জ্যোতিষ-গ্রন্থাবলিতে অধিক মাস সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়েছে। আমরা যে গৌরাব্দ পঞ্জিকা ব্যবহার করি এটি সরাসরি চান্দ্রীয় বর্ষগণনা পদ্ধতির নয়, আসলে চান্দ্র ও সৌরবর্ষের একটি মিশ্রণ। এ বিষয়ে জানতে হলে প্রথমে সৌর ও চান্দ্রমাসের সম্পর্ক সম্বন্ধে জানতে হবে। সৌর ও চান্দ্রমাস : ‘রাশি সংক্রমণাৎ সৌর’- রাশিচক্রে যে বিন্দু হতে গ্রহসমূহের অবস্থান নির্ণয় করা হয়, তাকে আদিবিন্দু বলে। গৃহীত স্থির আদিবিন্দু হতে ত্রিশ অংশ অন্তরে সূর্যকেন্দ্র আসলে তাকে সংক্রান্তি বলা হয়।

এক সংক্রান্তি থেকে অপর সংক্রান্তি পর্যন্ত সৌরমাস গণনা করা হয়। গড়ে প্রতি সৌরমাসের দৈর্ঘ্য ৩০ দিন, ১০ ঘণ্টা, ৩০ মিনিট, ৪৬ সেকেন্ড। ১ সৌরবর্ষে মোট ৩৬৫.২৫৮৭ দিন। আবার, ‘দর্শান্তশ্চান্দ্রমাসকঃ’ কোনো সৌরমাসে যে অমাবস্যা হয়, তার পরবর্তী দিন থেকে যে মুখ্য চান্দ্রমাস ধরা হয়, তার নাম ঐ সৌরমাসের নামে নামাঙ্কিত করা হয়। গড়ে প্রতি চান্দ্রমাস ২৯ দিন, ১২ ঘণ্টা, ৪৪ মিনিট, ৩ সেকেন্ডে পূর্ণ হয়। চান্দ্র বছরে মোট ৩৬০টি তিথি থাকে। লক্ষণীয় যে, প্রতি চান্দ্রমাস ও সৌরমাসের দৈর্ঘ্যের পার্থক্যের কারণে প্রতি মাসে ১৯ থেকে ২৬ ঘণ্টার (গড়ে ২৩ ঘণ্টা, ৩৭ মিনিট ও ২৮ সেকেন্ড) একটি ব্যবধান থেকে যায়।

 অর্থাৎ চান্দ্রবর্ষের ৩৬০টি তিথিতে সর্বমোট ৩৫৪.৩৬ সৌরদিন লাগে। ফলে প্রতি বছর চান্দ্র ও সৌরমাসের মধ্যে ১০ দিন, ২১ ঘণ্টা, ৩৫ মিনিটের পার্থক্য হয়। এই অতিরিক্ত ১০ দিন ২১ ঘণ্টা (২৯.৫৩*১০.৬৩) গড়ে ২.৭১ বছর বা ৩২.৫ মাসে সমন্বয় করা হয়। ৩২টি সৌরমাসের জন্য ৩৩টি চান্দ্রমাস। মোটকথা, চান্দ্র ও সৌর বর্ষের মধ্যে সমন্বয় রাখার জন্য তিনটি সৌর বছরের মধ্যে একটি অতিরিক্ত মাস সমন্বয় করতে হয়।

সাধারণত, প্রতি ১৯ বছরে ৭টি অধিমাস পরে। এটি নির্ভর করে গ্রহসঞ্চারের সময়ের ওপর ভিত্তি করে। কখনো সেটি ২৮ মাস, কখনো ৩১, ৩২, ৩৩ বা ৩৫ মাস হতে পারে। এজন্য মহাভারতে পাচ বছরে দুটি অতিরিক্ত মাসের কথা বলা হয়েছে। কেননা প্রতি তিনবছর পর পর এমনটি সময় আসে যখন সূর্যের একটি রাশিতে ভ্রমণের সময়ে বা একটি সৌরমাসে দুটি অমাবস্যা বা তিনটি প্রতিপদ চলে আসে। প্রথম প্রতিপদের পর থেকে অধিক মাস শুরু হয়। দ্বিতীয় অমাবস্যা পরবর্তী প্রতিপদ থেকে প্রকৃত সৌরমাস হিসাব করা হয়।

অধিক মাসে সৌর সংক্রান্তি হয় না। অধিক মাসকে সৌরবছরের কোনো মাসের সাথে সংযুক্ত করে নামকরণ করা হয়।  যে চান্দ্র মাসে সূর্য একটি রাশি থেকে অন্য রাশিতে গমন করে না, বরং মাসজুড়ে একটি নির্দিষ্ট রাশিতেই অবস্থান করে, তাহলে সেই মাসটির নাম পরবর্তী মাসের নাম। অনুসারে হয় এবং এর সাথে ‘অধিক’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়।  

আরো পড়ুন      জীবনী  মন্দির দর্শন  ইতিহাস  ধর্ম  জেলা শহর   শেয়ার বাজার  কালীপূজা  যোগ ব্যায়াম  আজকের রাশিফল  পুজা পাঠ  দুর্গাপুজো ব্রত কথা   মিউচুয়াল ফান্ড  বিনিয়োগ  জ্যোতিষশাস্ত্র  টোটকা  লক্ষ্মী পূজা  ভ্রমণ  বার্ষিক রাশিফল  মাসিক রাশিফল  সাপ্তাহিক রাশিফল  আজ বিশেষ  রান্নাঘর  প্রাপ্তবয়স্ক  বাংলা পঞ্জিকা