অন্নপূর্ণা স্তোত্র | Annapurna Stotram

অন্নদাত্রী দেবী অন্নপূর্ণা। দেবী দুর্গার আরেক রূপভেদ। দেবী দ্বিভূজা, গাত্রবর্ণ ঈষৎ রক্তাভ। স্তনভারনম্রা। দেবীর বামহাতে থাকে সোনার অন্নপাত্র। ডানহাতে দর্বী অর্থাৎ চামচ বা হাতা। মাথায় বিরাজিত অর্ধচন্দ্র। তিনি ক্ষুধার্ত মহাদেবকে অন্নদান করছেন স্মিতহাস্যে। পুরাণ মতে চৈত্রমাসে শুক্লা অষ্টমী তিথিতে কাশীতে আভির্ভূতা হয়েছিলেন দেবী। সেই সূত্রে এই তিথিতে দেবী অন্নপূর্ণার বাৎসরিক পুজো (Annapurna Puja)। আগমবাগীশের তন্ত্রসার গ্রন্থে অন্নপূর্ণা পুজোর বিশদ বিবরণ রয়েছে। অন্নদার মাহাত্ম্যগাথা নিয়ে রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচনা করেছিলেন ‘অন্নদামঙ্গলকাব্য’।
অন্নপূর্ণা পুজো বাংলার একটি প্রাচীন পুজো। এই পুজো এসেছিল কাশী থেকে। বাংলার সঙ্গে কাশীর যোগ বহুকালের। বাঙালির কাছে গয়া-কাশী-বৃন্দাবনের ভূমিকা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বারাণসী শুধু বাবা বিশ্বনাথের ধাম নয়। বাঙালির বার্ধক্যের কাশী। সেকালে অধিকাংশ ধার্মিক ধনাঢ্য পরিবারের বিধবারা কাশীবাসী হতেন। আর এই কাশী হল মা অন্নপূর্ণার অধিষ্ঠানক্ষেত্র। শৈব ও শাক্ত-সংস্কৃতির অপূর্ব মিলনস্থল।
মার্কেণ্ডেয় পুরাণের কাশীখণ্ড দেবীভাগবতে ও অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থাদিতে কাশীর অন্নপূর্ণা সম্পর্কে নানা উপাখ্যান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাশীপ্রতিষ্ঠার কাহিনি। লোককাহিনি অনুসারে, শিব যোগীরাজ হলে কী হবে আদতে ভিক্ষুক। রোজগারের মুরোদ নেই। রাজার দুলালী গৌরীর তাই একেবারে হাঁড়ির হাল। এই নিয়ে অহরহ শিব-দুর্গার কলহ। ক্ষোভে দুঃখে গৌরী একদিন চলে গেলেন বাপের বাড়ি। জয়া-বিজয়া তাকে পরামর্শ দিলেন যে ভিখিরি শিবকে জব্দ করতে হবে। সেই মোতাবেক দেবী জগতের সমস্ত অন্ন হরণ করলেন। শিব তখন খিদের চোটে নাকাল। যেখানেই যান হা অন্ন! হা অন্ন! শেষে লক্ষ্মীর পরামর্শে কাশীতে এলেন শিব। অন্নপুর্ণার হাত থেকে অন্ন খেয়ে পরিতৃপ্ত হলেন। কাশীতে স্বয়ং মহাদেবের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হল দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির। চৈত্র শুক্লাষ্টমীতিথিতে শুরু হল দেবীর পুজো। এইভাবে কালক্রমে কাশীর দেবী অন্নপূর্ণা হয়ে উঠলেন বাঙালির ঘরের মেয়ে।
বাসন্তী পুজো অবশ্য এখন কয়েকটি ছোট পুজোতেও ভাগ হয়ে গিয়েছে। যেমন অন্নপূর্ণা পুজো। বাসন্তী পুজোরই অঙ্গ। কিন্তু এই পুজো এখন অনেক বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে নিয়ম মেনে ৫ দিনের পুজোর ধকল অনেকেই নিতে পারেন না। এর সঙ্গে সময়েরও একটি সম্পর্ক আছে বলে মনে হয়। আগে বসন্ত কালে বহু গ্রাম বসন্ত রোগে উজাড় হয়ে যেত। এ সময় তাপমাত্রাও থাকে এক অসহনীয় মাত্রায়। তুলনায় শরৎ কাল অনেক বেশি মোলায়েম। সব মিলিয়ে উৎসবের জন্য আদর্শ সময়। আৎ দুর্গা পুজো শুধুমাত্র যে পুজো নয়, উৎসবে পরিণত হয়েছে তা কে না জানে।