অনুপ্রেরণার আর এক নাম বাঁকুড়ার ছোটন কর্মকার

অনুপ্রেরণার আর এক নাম বাঁকুড়ার ছোটন কর্মকার

 

খড়্গপুর আইআইটি-র (Kharagpur IIT) গেটের সামনে এসে ইতস্তত করছিলেন তরুণ। সাজপোশাক দেখে যেন তেমন ‘সম্ভ্রম’ জাগে না। পিঠে একটা বিশাল ভারী ব্যাগ। চোখেমুখে প্রশ্ন। তাই দেখে নিরাপত্তাকর্মী পথ আটকে দাঁড়ালেন। কী ব্যাপার, কাকে চাই? তরুণ জানালেন, এখানে ভর্তির জন্য ডাকা হয়েছে তাঁকে। দেশের নানা প্রান্তের উজ্জ্বলতম পড়ুয়ারা যেখানে ভর্তি হতে আসেন বুক ফুলিয়ে, সেখানে ভর্তি হবেন এই সাদামাঠা তরুণ!

তখন পকেট থেকে বার করে ভর্তির কাগজ দেখালেন তিনি। দেখেই সসম্মানে পথ ছাড়লেন নিরাপত্তাকর্মী। বুধবার এই ঘটনার সাক্ষী থাকল আইআইটি খড়্গপুর। তবে ওই তরুণের পরিচয় জানার পরে চমকে ওঠেন সকলেই। তিনি আদতে গ্রামের রাস্তায় সাইকেলে চেপে ঘোরা এক ফেরিওয়ালা! তাঁর নাম ছোটন কর্মকার।

বাঁকুড়া ( Bankura )  জেলার শালতোড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম  পাবড়া, সেখানেই বাস ছোটন কর্মকারের। বাবা কানাই কর্মকারও একজন ফেরিওয়ালা। বাবা মা ছেলের সংসার।  হাল ধরতে বাবার মতোই ফেরি করতেন ছোটন। সর্বভারতীয় স্তরে প্রবেশিকা পরীক্ষায় সে সাফল্য পায় এবং বৃহস্পতিবার সন্ধেয় তাঁর সামনে খুলে যায় সেই স্বপ্নের দরজা - আইআইটি খড়্গপুর (Indian Institute of Technology Kharagpur)।

তিনি গ্রামে গ্রামে সাইকেলে চেপে ফিতে-চুড়ি-খেলনা ইত্যাদি বিক্রি করেন  এমনই পরিবার থেকে পড়াশোনা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ছোটন। শেষমেশ সুযোগ পেয়েছেন খড়্গপুর আইআইটি-তে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। সে জন্যই বুধবার আইআইটি ক্যাম্পাসের সামনে হাজির সাধারণ পোশাকের এই অসাধারণ ছাত্র।

শালতোড়ার পাবড়া গ্রামেই একটি বাংলামাধ্যম সরকারি স্কুলে পড়াশোনা ছোটনের। বাড়িতে আছেন বাবা, মা ও দাদা। তাঁর বাবা কানাই কর্মকারও পেশায় ফেরিওয়ালা। গ্রামে গ্রামে ঘুরে জিনিসপত্র ফেরি করেন। তিনি জানেনই না, আইআইটি কী জিনিস! তাঁর ছেলেই নাকি বিটেকে ভর্তি হয়েছেন আইআইটিতে!

ভর্তির পরে ছোটন জানিয়েছেন, জেইই মেনের পরে অ্যাডভান্সড-এ বসেছিলেন তিনি। ব়্যাঙ্কিং ভাল ছিল। তবে ভর্তির টাকা ছিল না, শেষমেশ তাও জোগাড় হয় এক শিক্ষক ও কয়েকজন সমাজকর্মীর সহায়তায়। অবশেষে আইআইটি-তে দাঁড়িয়ে আছেন ছোটন– এ যেন নিজেই এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না!