জন্মছকে পিতার বিচার কোন ভাব থেকে করা হয়

ছন্দ উপনিষধে ঋষি গৌতম প্রশ্ন করছেন সত্যকামকে, তুমি এখানে এসেছ ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করতে। কিন্তু তোমার পরিচয় কী? গোত্র কী? কুল কী? পিতার নাম কী? বালক সত্যকাম সরলভাবে অকপট চিত্তে বলেছিল, পিতার নাম কী জানি না, গোত্র কী জানি না, কুল কী জানি না।
শুধু এটুকূ জানি, আমার মায়ের নাম জবালা। মা আমাকে বলেছেন, যৌবনে পরিচর্যা করে আমাকে পেয়েছেন। আমার বাবার নাম মা জানেন না। এই মুহূর্তে আমার পরিচয়, জবালা পুত্র সত্যকাম। ঋষি গৌতম সত্যকামের অকপট ও সরল ভাবে বলাতে স্তম্ভিত ও বিস্মিত।
শেষে সত্যকামকে নিজের শিষ্য হিসেবে বরণ করে নেন। এই কাহিনি আমাদের অনেকেরই জানা। সত্যকামের মতো আমাদের প্রশ্ন, পিতার বিচার কোন ভাব বা রাশি থেকে করা সমীচীন? নবম ভাব না দশম ভাব? অথচ প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যে যারা জ্যোতিষ চর্চা করেন, এমন সকলে মাতৃভাবের বিচার চতুর্থ ভাব থেকেই করে থাকেন। মাতার স্বামী মানেই সপ্তম ভাব।
মাতার সপ্তম ভাব মানেই জাতক/জাতিকার দশম ভাব। এটাই নিয়ম। কিন্তু ক্লাসিক্যাল প্রাচীন যত পুস্তক আছে, সেখানে বলা হচ্ছে, পিতার বিচার নবম ভাব থেকে করতে। এমনকি এ যুগের বরেণ্য জ্যোতিষ চর্চাকারী কৃষ্ণমূর্তিও কোথাও কোথাও নবম ভাব হতে পিতার বিচার করেছেন।
প্রাচীনকালের সামাজিক ধারায় নবম ভাব থেকে পিতার বিচারে কিছু যুক্তি থাকলে থাকতেও পারে। কিন্তু এটা জেনেটিক্সের যুগ, ডিএনএ পরীক্ষার যুগ। এখানে প্রমাণ দিতে হবে। ছাপার লেখাকে অভ্রান্ত ধরলে হবে না। “একজন পণ্ডিত বলেছেন, মা বাস্তব আর বাবা হচ্ছে সত্য।”
কারণ ব্যাখ্যা করতে গেলাম না। যুগ পরিবর্তিত হয়েছে, পরিবর্তনের সঙ্গে বিবাহের সংজ্ঞাও পাল্টে গিয়েছে। এখন সিঙ্গেল মাদার সিস্টেম পরিবার কোথায় কোথায় দেখা যাচ্ছে। সারগেট মাদার আসছে। টেস্ট টিউব বেবি জন্ম নিচ্ছে। দত্তক নেওয়া হচ্ছে। ক্লোনে শিশু জন্মাবে। এই সব ক্ষেত্রে পিতার ভূমিকা কোন ক্ষেত্রে কেমন হবে, এ সব তো জ্যোতিষকেই ভাবতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে কোনও জাতকের মেষ লগ্নে জন্ম হলে নীচের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেমন ফল দাঁড়ায় দেখা যাক। (এক) এ ক্ষেত্রে জাতকের জন্ম হয়েছে সেই বাবা মায়ের ঘরে যে বাব-মা অবৈধভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এরকম ক্ষেত্রে জাতকের মেষ লগ্নে জন্ম হলে মাতৃস্থান হবে কর্কট রাশি, মায়ের অবৈধ স্বামী মানে সপ্তম ভাব, মকর রাশি।
(দুই) টেস্ট টিউব বেবির জন্ম যদি স্বামীর শুক্রাণু নিতে হয়ঃ এখানে “এগ” ফার্টিলাইজ হচ্ছে বাইরে টেস্ট টিউবে। এখানেও দশম ভাব মকর।(তিন) কৃত্রিমভাবে ডোনারের বীর্য সংগ্রহ করে আরটিফিসিয়াল ইন্সেমিনেশানের মাধ্যমে মা গর্ভবতী হয়। পুরো ব্যাপারটা গোপন রাখতে হবে মেডিক্যাল এথিকস অনুসারেঃ এখানে আগের মতোই মেষ লগ্ন ধরে জাতকের মাতা একই আছে। মাতা যখন একই আছে পিতা তা হলে দশম মকর হবে। মহাভারতের এই পদ্ধতিতে কুন্তি পঞ্চপান্ডবের জন্ম দিয়েছিলেন।
(চার) সারোগেট মাদার যেখানে শিশু ভ্রুণ ভাড়া করা মায়ের ইউটেরাসে ডেভেলপ হচ্ছেঃ এখানে বাবা দশম অর্থাৎ মকর, বাবার বীর্য সারোগেট মাদারের বা ভাড়া করা মায়ের দেহে পুষ্ঠ হচ্ছে। (পাঁচ) ক্লোনিংয়ে বাবা সেই মকর দশম ভাব, বাবার ডিএনএ কোষ নিয়েই ক্লোনিং হয়েছে।
(ছয়) পতিতালয়ে যে জাতকের জন্মঃ এখানে মায়ের গর্ভে যে সন্তান জন্ম নিতে চলেছে তার পিতা কে? এমনকি মা নিজেও জানে না, সত্যকামের মা জবালা জানতেন না সত্যকাম কার সন্তান। পতিতালয় প্রায় এই রকম ভাবে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে।
এখানে জাতকের পিতা হবে অষ্টম পতি। মেষ লগ্ন হলে বৃশ্চিক রাশি। এখানে জাতকের জন্ম মায়ের ভালবাসা থেকে। কেউ কেউ এই সব জাতককে ‘লাভ চাইল্ড’ বলে থাকে। চতুর্থ ভাব যদি মা হয়, আর মায়ের প্লেজার বা আনন্দের ঘর অর্থাৎ পঞ্চম ভাব মানে জাতকের অষ্টম ভাব।
(সাত) যেখানে জাতকের জন্ম হয় পরিত্যাগ করার পর, তার মানে মাকে সহবাস করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়ঃএক্ষেত্রে মাকে তাড়িয়ে দেওয়ার পূর্বে সহবাস করা হয়। ভুলিয়ে বা অসহায়তার সু্যোগ নিয়ে বা ধর্ষণ করে, পরবর্তীতে মা গর্ভবতী হয়ে জাতকের জন্ম দেয়।
এখানে পিতা দশম অর্থাৎ মকর। লজিকের দিক থেকে এটা জানা গেল, কোনও ভাবেই পিতার বিচার নবম ভাব থেকে হয় না। পিতার বিচার সব সময় দশম ভাব থেকে মাত্র একটি ক্ষেত্র ছাড়া।