পশ্চিম মেদিনীপুরে নারী দিবসের আগে বছর কুড়ির এক তরুণীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা

বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে অশান্তি লেগে থাকত। এরপরই রবিবার বছর কুড়ির এক তরুণীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের আঙুল শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানার এলাকার চাউলি গ্রামের ওই গৃহবধূ এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে হাসপাতালের বেডে। যদিও শ্বশুরবাড়ির দাবি, ওই তরুণী নিজেই গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
কিন্তু কেন এই ঘটনা? ওই তরুণীর পরিবারের দাবি, মেয়েকে তাঁর ননদের বর খারাপ চোখে দেখত। নানা সময় নোংরা প্রস্তাব দিত। কিন্তু মেয়ের তাতে সায় না থাকায় প্রায়শই শ্বশুরবাড়িতে ঝামেলা হত বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে প্রশাসনকে জানানো, একাধিকবার মিটিংও হয় বলে ওই তরুণীর বাড়ির লোকের দাবি। এরই মধ্যে রবিবার দুপুরে তাঁদের কাছে খবর আসে, মেয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি। পাঁশকুড়া থানার আমারাগোহাল গ্রামের প্রিয়াঙ্কা গুছাইতের বিয়ে হয় চাউলি গ্রামে।
পরিবারের কথায়, অল্প বয়সেই বিয়ে করেন প্রিয়াঙ্কা। তাঁর একটি তিন বছরের সন্তানও রয়েছে। প্রিয়াঙ্কার বাড়ির লোকের অভিযোগ, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গোলমাল শুরু হয়। প্রায়ই ঝামেল লাগে প্রিয়াঙ্কার স্বামী জয়ন্ত গুছাইতের জামাইবাবু গণেশ মণ্ডলকে নিয়ে। অভিযোগ, গণেশ বিভিন্ন সময় প্রিয়াঙ্কাকে নোংরা আকারইঙ্গিত করেন।
এমনকী কুপ্রস্তাবও দেন। ওই তরুণী তা না মানায় অশান্তি লেগে যায়। প্রিয়াঙ্কার পরিবারের দাবি, এ নিয়ে একাধিকবার সালিশি সভা হয়েছে। প্রিয়াঙ্কা ভেবেছিলেন হয়ত সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। বাচ্চার মুখ চেয়ে স্বামীর ঘরে থেকে যান। অভিযোগ, রবিবার দুপুরে অশান্তি চরমে ওঠে। প্রিয়াঙ্কা তাঁর বাবা মৃত্যুঞ্জয় সামন্তকে ফোন করে বিষয়টি জানান। কিন্তু এরপর যে মেয়ের সঙ্গে এত বড় ঘটনা ঘটতে চলেছে তা আন্দাজও করতে পারেনি সামন্ত পরিবার।
প্রিয়াঙ্কার বাবা মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত বলেন, “আমরা ফোন মারফত্ জানতে পারি আমাদের মেয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। হাসপাতালে এসে মেয়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি ওর শাশুড়িই গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।” এরপরই খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছয় ঘাটাল থানার পুলিশ। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন প্রিয়াঙ্কার বাবা মা।
প্রিয়াঙ্কার পরিজনদের দাবি, মেয়ে কুপ্রস্তাব মেনে না নেওয়ার জন্যই এই দাম দিতে হল। প্রিয়াঙ্কার মা সন্ধ্যা সামন্ত বলেন, “সাড়ে ১২টার সময়ও ফোন করেছে। বলছে, তোমার জামাই বাজে কথা বলে। মরতে বলে আমাকে। তার পাঁচ মিনিট পরই মেয়ের কাকিশাশুড়ি ফোন করে বলছে গায়ে আগুন দিয়েছে ও।” প্রিয়াঙ্কার দাদা দীপক সামন্তের কথায়, “ওর নন্দাইকে নিয়েই বাড়িতে সমস্যা। বোনের সঙ্গে ও শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে চায়। বোন রাজি না হওয়ায় বারবার ঝামেলা হয়েছে। সালিশি সভাও হয়েছে এই একটা ব্যাপার নিয়েই। বলেছিল, নন্দাইকে ও বাড়িতে ঢুকতে দেবে না। কিন্তু কোথায় কী!”