বাবা হরভজন সিং মন্দির দর্শন

বাবা হরভজন সিং মন্দির দর্শন

মন্দির বলতে সাধারণত আমরা বিভিন্ন দেব-দেবীর মন্দিরের কথাই বুঝে থাকি। মন্দিরের মধ্যে যে দেবতার বিগ্রহকে পুজো করা হয়, সেই দেবতার নামেই সাধারণত মন্দিরের পরিচয় হয়ে থাকে। কিন্তু ভূতের মন্দির শুনেছেন কখনো? মন্দির আর ভূত ব্যাপারটাই যেখানে পরস্পর বিরোধী সেখানে ভূতের মন্দির ব্যাপারটা কেমন আজগুবি শোনায় না? আজগুবি হলেও বাস্তবে কিন্তু সত্যি সত্যিই এরকম একটি মন্দিরের অস্তিত্ব ভারতে রয়েছে। সিকিমের নাথুলা পাস -এ অবস্থিত এই মন্দিরটির নাম ‘বাবা মন্দির’ (Baba Harbhajan Singh Temple)।

এই মন্দিরে কোনও দেব-দেবীর নেই—বদলে মন্দিরের গর্ভগৃহে আছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক মৃত সৈনিক হরভজন সিংহের ছবি, আর তাঁর জীবিতকালে ব্যবহার করা জামাকাপড় জুতো এবং অন্যান্য ব্যবহৃত জিনিস। এগুলোকেই রোজ পুজো করা হয়। ১৯৬২ সালে নাথুলা পাহাড়ে ডিউটি করার সময়ে এক গিরিখাতে পড়ে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে হরভজন সিং-এর অপঘাতে মৃত্যু হয়। কথিত আছে তাঁর আত্মাকে সেই থেকে ওই পাহাড়ি অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। নাথুলা পাস (১৪,৪০০ ফুট) পেরোলেই ভারতীয় সীমারেখার বাইরে চিন অধিকৃত তিব্বত।

লোকমুখে প্রচলিত সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত ভারতীয় সৈনিকদের কর্তব্যে ফাঁকি দেখলেই নাকি হরভজন সিং-এর আত্মা জওয়ানদের রীতিমত সাজা দেয়। একঘেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ডিউটি দিতে দিতে ভারতীয় জওয়ানদের কেউ হয়ত অসময়ে একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে, ঠিক তখনই হরভজনের থাপ্পড় এসে পড়েছে তাঁর গালে। একবার নয় বার বার নাকি এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে বিপদে হরভজন সিংয়ের আত্মা জওয়ানদের রক্ষাও করে। বহুবারই চিনা সৈন্যদের পাতা ফাঁদের হাত থেকে ভারতীয় জওয়ানদের নাকি হরভজন সিংয়ের আত্মা রক্ষা করেছে।

নাথুলায় কর্তব্যরত ভারতীয় জওয়ানরা আজও তাই বিশ্বাস করে যে ‘বাবা হরভজন থাকতে তাঁদের চিনা সৈন্যদের হাতে কোনও বিপদের আশঙ্কা নেই। ১৯৪৬ সালের ৩০ আগস্ট পাঞ্জাবের কাপুরথালায় জেলার ব্রন্ডাল নামক এক গ্রামে হরভজন সিংয়ের জন্ম হয়। ১৯৬৬ সালে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সিপাই হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন তিনি। ১৯৬৮ সালে হরভজন কর্মরত ছিলেন পূর্ব সিকিমের নাথুলাতে। এক বৃষ্টি মুখর রাতে খচ্চরের পিঠে জিনিসপত্র নিয়ে তাঁদের ব্যাটালিয়নের হেড কোয়ার্টার টুকু লা থেকে ডংচুকলায় যাওয়ার পথে খচ্চরের পিঠ থেকে এক খরস্রোতা পাহাড়ী ঝোরায় পড়ে যান তিনি।

দুদিন ধরে খোঁজার পরেও তাঁর দেহ কোথাও পাওয়া যায়নি। জনশ্রুতি একদিন হরভজন সিং তাঁর এক সহকর্মী প্রীতম সিংহকে  স্বপ্নে দেখা দেন এবং বলে দেন কোথায় গেলে তাঁর দেহ পাওয়া যাবে। এছাড়াও  তিনি স্বপ্নে অনুরোধ করেন ঐ স্থানে যেন তাঁর একটি সমাধি মন্দির বানানো হয় ভারতীয় সেনা এরপর নির্দিষ্ট স্থানে তল্লাশি চালিয়ে তাঁর দেহ উদ্ধার করে এবং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী নাথুলাতে তাঁর স্মৃতিতে একটি সমাধি মন্দির তৈরী করে। কিংবদন্তি অনুযায়ী পূর্ণিমার রাতে তাঁকে নাকি ঘোড়ার পিঠে টহল দিতে দেখা যায়।

তাঁর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর জুতো থেকে। তাঁর জুতোয় নাকি মাঝে মাঝেই ধুলোবালি লেগে থাকতে দেখা যায়। ১৯৬৮ সালে মারা গেলেও, কিছুকাল আগে অবধি ভারতীয় সেনার খাতায় ‘কর্তব্যরত’ হিসাবে তাঁর নাম আছে। মাসে মাসে তাঁর মাইনের টাকা পঞ্জাবে আত্মীয়দের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হত। সেনাবাহিনীর নিয়ম-মাফিক ডিউটিতে তাঁর প্রোমোশনও হয়েছে । বছরে একবার একমাসের ছুটিতে তিনি তাঁর গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটাতে যেতেন। ট্রেনে তাঁর নামে বার্থ রিজার্ভেশন করা হত।

মন্দিরে রাখা তাঁর জুতো জোড়াকে ট্রেনে করে তাঁর গ্রামের বাড়িতে দিয়ে আসা হত। ছুটি শেষে সেই জুতো জোড়াকে আবার নাথুলার মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হত। রীতিমতো সামরিক কায়দায় সেনাবাহিনীর গাড়ি স্টেশনে উপস্থিত থাকত বাবা হরভজনের জুতো পৌঁছতে ও নিয়ে আসার জন্য। সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনী এই প্রথাটি বেশ কিছু বছর হল বন্ধ করেছে।  গ্যাংটক থেকে প্রায় বাহান্ন কিমি দূরে, নাথু আর জেলেপ লা পাসের মাঝে অবস্থিত ‘বাবা মন্দিরের রীতি হল মন্দিরে জলের বোতল রেখে আসার। যে কোনও দেব-দেবীর মন্দিরের মতো এই মন্দিরেও সন্ধ্যায় মঙ্গলারতির প্রদীপ জ্বালানো হয়, আরতির ঘণ্টা-ধ্বনি শোনা যায় দূর-দূরান্ত থেকে। 

আরো পড়ুন      জীবনী  মন্দির দর্শন  ইতিহাস  ধর্ম  জেলা শহর   শেয়ার বাজার  কালীপূজা  যোগ ব্যায়াম  আজকের রাশিফল  পুজা পাঠ  দুর্গাপুজো ব্রত কথা   মিউচুয়াল ফান্ড  বিনিয়োগ  জ্যোতিষশাস্ত্র  টোটকা  লক্ষ্মী পূজা  ভ্রমণ  বার্ষিক রাশিফল  মাসিক রাশিফল  সাপ্তাহিক রাশিফল  আজ বিশেষ  রান্নাঘর  প্রাপ্তবয়স্ক  বাংলা পঞ্জিকা