অবৈধ পথে ইউরোপে প্রবেশের শীর্ষে তালিকায় বাংলাদেশ

উন্নত জীবনের আশায় স্বল্পোন্নত বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছর হাজারো মানুষ ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসেই অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন ৪৭ হাজার ৪২৫ অভিবাসনপ্রত্যাশী। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশিরা৷ কেন অব্যাহত এই মানুষের ঢল, কীভাবে কোন পথে আসছেন বাংলাদেশিরা। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ইউরোপে অবৈধ পথে প্রবেশ করেছেন ৪৭ হাজার ৪২৫ অভিবাসনপ্রত্যাশী। এর মধ্যে ৪৪ হাজার ৯৩জন এসেছেন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচএসিআরের তথ্য অনুযায়ী, মোট অভিবাসনপ্রত্যাশীর ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ তিন হাজার ৩৩২জন বাংলাদেশি।
এরপর রয়েছে যথাক্রমে টিউনিশিয়া (১২.৯ %), সিরিয়া (৭.৬%) ও আইভরি কোস্ট, মিশর, ইরিট্রিয়া, সুদান, আফগানিস্তানের মতো দেশ। আইওএম-এর ডিসপ্লেসমেন্ট ট্র্যাকিং ম্যাট্রিক্স বা ডিটিএম-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে চার হাজার ৫১০ বাংলাদেশি জল ও স্থলপথে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেন। চলতি বছরের প্রথমার্ধ্বেই এই সংখ্যার কাছাকাছি চলে এসেছে ইউরোপে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা। বিপজ্জনক ভূমধ্যসাগরীয় পথে চলতি আগের চেয়ে মৃত্যুর হারও বেড়েছে৷ তবুও কেন থামছে না এই পথে ইউরোপে প্রবেশ করতে বাংলাদেশিদের আগ্রহ? জানা গেছে, কয়েকটি পথ ধরে লিবিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেন বাংলাদেশীরা।
এর প্রথমটি হলো ঢাকা থেকে দুবাই হয়ে লিবিয়া। তারপর সেখান থেকে ইউরোপ। দ্বিতীয়টি হলো তুরস্ক হয়ে সরাসরি ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে আবার লিবিয়া হয়ে যাওয়ার চেষ্টা। আরেকটি হলো দক্ষিণ সুদানের মরুভূমি থেকে লিবিয়া হয়ে ইউরোপ প্রবেশ। এ পথগুলো দিয়ে গমনেচ্ছুদের ঢাকা পার করার সময় একটি চক্রের অধীনে রাখা হয়। এরপর দুবাই বা ইস্তানবুল অথবা সুদানে তাদের হস্তান্তর করা হয় দ্বিতীয় চক্রের হাতে। সেখান থেকে উড়োজাহাজে করে লিবিয়া যাওয়ার পর তৃতীয় চক্রের হাতে যান বাংলাদেশীরা। সেখান থেকে নৌকায় উঠিয়ে দেয়ার পর চতুর্থ চক্র ও সর্বশেষ ইউরোপ নেমে পঞ্চম চক্রের হাতে পড়েন বাংলাদেশীরা। এ পথগুলো দিয়ে লিবিয়া পৌঁছতে জনপ্রতি ৫ থেকে ৯ লাখ টাকা করে খরচ করতে হয়।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব স্থানে অর্থ পরিশোধ করা না হলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের মুক্তিপণ ও অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটে। আবার কখনো কখনো মানব পাচারকারী চক্রের হাতে নির্দয়-নিষ্ঠুর পরিণতি বরণ করে নিতে হয় অভিবাসন প্রত্যাশীদের। কিসের টানে বাংলাদেশিরা বিপজ্জনক এই পথে যাত্রা করেন, এ প্রশ্নের উত্তরে ইনফোমাইগ্রেন্টস এবিষয়ে কথা বলে ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসানে জানান ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশের ক্ষেত্রে অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম আসায় তা আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
মধ্য আয়ের দেশসহ বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করা হলেও যুদ্ধ চলমান দেশগুলোর মানুষের অবৈধভাবে প্রবেশের সঙ্গে বাংলাদেশীরা কেন প্রবেশ করছে, আন্তর্জাতিক ফোরামে তার উত্তর দিতে আমাদের বেগ পেতে হয়। ফ্রন্টেক্সের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে হাসান জানান যে, ২০০৯ সাল থেকে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশের মোট নয়টি পথ দিয়ে মোট ৬২ হাজার ৫৮৩জন বাংলাদেশি সেখানে ঢুকেছেন। এই সংখ্যার একটা অংশ ইউরোপে প্রবেশ করতে পারলেও সাগরপথের বিপজ্জনক পরিস্থিতিসহ অন্যান্য প্রতিকূলতার কারণে প্রাণ হারাতে হয়েছে বহু বাংলাদেশিকে। হাসান জানান, এবিষয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যা হলফ করে বলা যায় না৷ কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাগরে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে যে তথ্য দেখা যাচ্ছে, তার ভিত্তিতে গড়ে প্রতি বছর শ'পাঁচেক বাংলাদেশি এই পথে প্রবেশ করতে গিয়ে মারা যান বলে ধারনা করেন বিশেষজ্ঞরা, জানালেন শরিফুল হাসান।
ইউরোপের যে স্বপ্নকে ধাওয়া করে দেশ ছাড়েন বাংলাদেশিরা, সেই স্বপ্ন তৈরি করতে একটা বড় ভূমিকা পালন করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পরিবারের সদস্যরা, জানান তিনি। হাসান বলেন, "আমরা যদি শরিয়তপুরের একটা গ্রামের উদাহরণ দেখি, যে গ্রামের নামই হয়ে গেছে 'ইটালি পাড়া', তাহলে আমরা বুঝতে পারব ঠিক কতটা সামাজিক চাপ থাকে এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ওপর। যে আত্মীয়-স্বজনরা সফলভাবে ইটালি বা ইউরোপের অন্য কোনো দেশে থেকে জীবনযাপন করেন, তারা অনেক সময় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বলেন যে কোনো মতে ইউরোপে চলে আসতে। ফলে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মনে একটা ধারণা সৃষ্টি হয় যে, যেকোনো উপায়ে ইউরোপে ঢুকতে পারলেই তার সকল সমস্যার অবসান হবে৷ " বাংলাদেশের তিনটি অঞ্চলকে ইউরোপগামী অভিবাসন-প্রবণ বলে চিহ্নিত করেছে ব্র্যাক, জানান শরিফুল হাসান। সিলেট বেল্ট, যার মধ্যে রয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার। তারপর রয়েছে ফরিদপুর বেল্ট, যেখানে রয়েছে ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর এবং সবশেষে রয়েছে মধ্য ঢাকার বেল্ট যার মধ্যে রয়েছে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ইত্যাদি অঞ্চল। মূলত এই তিনটি অঞ্চল থেকেই ইউরোপগামী বাংলাদেশিদের ঢল এসে থাকে।
বিশেষত অবৈধ পথে যাঁরা ইউরোপে পাড়ি জমাতে চান, তাঁদের অনেকে একটা সময় লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি অথবা গ্রিস কিংবা আজারবাইজান থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিস এবং গ্রিস থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করতেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইতালি ও গ্রিসের কোস্টগার্ড বাহিনীর তৎপরতার কারণে এবং একই সঙ্গে পালেরমো প্রটোকলের কারণে এখন সহজে কেউ সাগরপথে এ রুট দিয়ে ইতালিতে বা গ্রিসে প্রবেশ করতে পারেন না। যদিও এ রুট দিয়ে প্রতিনিয়ত এখনো অনেক মানুষ ইউরোপের মাটিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। বর্তমানে এ দুইটি রুটের পাশাপাশি আরও একটি রুট ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বিশেষত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং একই সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে গঠিত কমন বর্ডার ফ্রেম অর্থাৎ সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত কোনো রাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য মোক্ষম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। রুটটি হচ্ছে বলকানের রুট।
তুরস্ক হয়ে অবৈধভাবে যাঁরা গ্রিসে প্রবেশ করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতি এবং একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিস্তোতাকিসের অভিবাসন বিষয়ে অতি ডানপন্থী কিছু নীতির কারণে দেশটিতে স্থায়ী হতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে তাঁদের গ্রিস থেকে ইউরোপের ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল কিংবা স্পেনে পাড়ি জমানোর চিন্তা করতে হচ্ছে। যেহেতু এখন চাইলে আগের মতো গ্রিস থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই বিকল্প পথে ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল কিংবা স্পেনে পৌঁছানোর কথা চিন্তা করতে হচ্ছে। এ জন্য অনেকে বলকান অঞ্চলকে ব্যবহার করছেন গ্রিস হয়ে ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল কিংবা স্পেনে পৌঁছানোর রুট হিসেবে। অভিবাসন বিষয়ে নমনীয় বেশ কিছু নীতির কারণে সবার লক্ষ্য থাকে ইউরোপের চার দেশ ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল ও স্পেন। অবৈধভাবে ইউরোপে এসে প্রথমে সবাই চেষ্টা করেন অ্যাসাইলাম বা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ইতালির প্রাক্তন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ম্যাতেও সালভিনি প্রশাসনের গৃহীত বেশ কিছু নীতির কারণে অভিবাসন বিষয়ে এখন আর আগের মতো দেশটি নমনীয় নেই বললেই চলে।
বলকান অঞ্চলটি দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের ঐতিহাসিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গমস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এ অঞ্চলটি ইউরোপের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। বুলগেরিয়া থেকে পূর্ব সার্বিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত বলকান পর্বতমালার নামে এ অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বলকান’। সমগ্র আলবেনিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া, মন্টিনিগ্রো, গ্রিস, কসোভো, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং রোমানিয়া ও হাঙ্গেরির সামান্য অংশ বলকানের অন্তর্গত। গ্রিস থেকে মেসিডোনিয়া হয়ে কিংবা গ্রিস থেকে আলবেনিয়া ও কসোভো, মন্টিনিগ্রো, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা হয়ে প্রথমে সবাই সার্বিয়াতে পা রাখার চেষ্টা করেন। সার্বিয়াতে পা রাখার পর সেখান থেকে দুইভাবে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগালসহ সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত দেশে প্রবেশ করা যায়। প্রথমটি হচ্ছে হাঙ্গেরি হয়ে।
হাঙ্গেরির সঙ্গে সরাসরি সার্বিয়ার সীমান্ত সংযোগ রয়েছে। অন্যটি হচ্ছে সার্বিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়া হয়ে স্লোভেনিয়া। এ ছাড়া বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা কিংবা মন্টিনিগ্রো থেকে ক্রোয়েশিয়া ও অতঃপর ক্রোয়েশিয়া থেকে স্লোভেনিয়া—এভাবেও অনেকে সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত কোনো রাষ্ট্রে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত কোনো রাষ্ট্রে কোনোভাবে প্রবেশ করতে পারলে সহজে এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত কোনো রাষ্ট্রে যাতায়াত করা যায়। বিশেষ করে সীমান্ত উন্মুক্ত থাকায় এবং একই সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকায় চেক পড়ার সম্ভাবনা না থাকায় সড়ক ও রেলপথে সহজে সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে যাওয়া যায়।
অনেকে তুরস্ক থেকে গ্রিসে না গিয়ে বুলগেরিয়াতে প্রবেশের চেষ্টা করেন এবং বুলগেরিয়া থেকে রোমানিয়া অথবা ইউক্রেন হয়ে হাঙ্গেরি কিংবা বুলগেরিয়া থেকে সার্বিয়া হয়ে হাঙ্গেরি অথবা ক্রোয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। প্রথমত, ইউরোপের অন্যান্য অংশের তুলনায় বলকান অঞ্চলের দেশগুলো অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে দুর্বল। একই সঙ্গে দুর্নীতি ও আইনের অনুশাসনের অভাবে এ অঞ্চলে অপরাধপ্রবণতার মাত্রা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষত সার্বিয়ার অবস্থান এ সূচকে সবার নিচে। বলকান দেশগুলোকে ঘিরে বর্তমানে ইউরোপে মানব পাচার চক্রের এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। হেঁটে, ঘন বন-জঙ্গল পাড়ি দিয়ে কিংবা পাহাড় বেয়ে এমনকি খরস্রোতা নদীতে সাঁতার কেটে রাতের অন্ধকারে কাঁটাতারের সীমানা পেরিয়ে অনেকে ইউরোপে পা রাখতে চান।
ভঙ্গুর অর্থনীতির সার্বিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, আলবেনিয়া, কসোভো, মেসিডোনিয়াতে সেনজেন দেশগুলোর তুলনায় অনেক সহজে ভিসা মেলে। আর এ সুযোগটি বর্তমানে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন অনেকে। সার্বিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা ও মন্টিনিগ্রো থেকে ক্রোয়েশিয়া হয়ে অনেকে এখন স্লোভেনিয়াতে প্রবেশের চেষ্টা করছেন এবং স্লোভেনিয়া থেকে এ রুটে সহজে ইতালি পৌঁছানো যায়। ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া অর্থনৈতিক খাতকে পুনর্বাসন করতে ইতালি সম্প্রতি কৃষি খাতসহ বেশ কিছু সেক্টরে কাজ করা ১২ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বৈধ করার ঘোষণা দিয়েছে। স্পেন ও ফ্রান্সের পার্লামেন্টে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এ ইস্যুকে পুঁজি করে অবৈধভাবে ইউরোপ প্রবেশের বিভিন্ন রুটে হিউম্যান ট্রাফিকিং আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন।
জার্মানিভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহকারী সংস্থা স্ট্যাটিস্টা প্রকাশিত তথ্য বলছে, চলতি বছরে প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশ করে বাংলাদেশী পরিচয়ে আত্মসমর্পণ করে নিবন্ধিত হয়েছে ২ হাজার ৬০৮ জন। এ সংখ্যা ছয় মাসে মোট আত্মসমর্পণকারীর ২১ শতাংশ। ইতালিতে ছয় মাসে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে তিউনিশিয়ার নাগরিকরা। ২ হাজার ১১৩ জন তিউনিশিয়ার নাগরিক ইতালিতে প্রবেশ করেছে, যা মোট সংখ্যার ১৪ শতাংশ। অভিবাসনপ্রত্যাশীর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আইভরি কোস্ট। দেশটির মোট ১ হাজার ৪১০ নাগরিক ইতালিতে পৌঁছে নিবন্ধন করেছে। এছাড়া ইরিত্রিয়া থেকে গিয়েছে ৯৭১ জন, মিসর থেকে ৯৫৮, গিনির ৯৪৫, সুদানের ৯০৫, মরক্কোর ৬২৩, মালির ৫৬৮ ও আলজেরিয়া থেকে ৪৫৬ জন নাগরিক ইতালিতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে বছরের প্রথম ছয় মাসে।
ইউএনএইচসিআরের গত মার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসের তুলনায় ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার হার বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় লিবিয়া উপকূল থেকে ইতালি যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে ১৪৩ শতাংশ। গত বছর সাড়ে চার হাজার শরণার্থী লিবিয়া থেকে ইতালি গেলেও এ বছর তিন মাসে গেছেন প্রায় দেড় হাজার। এ বছর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালি প্রবেশকৃতদের মধ্যে ৬১ শতাংশই লিবিয়া থেকে এসেছে। পাশাপাশি লিবিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী ইতালি ও মাল্টায় প্রবেশ করেছেন, সংখ্যায় যা ৭৯৪। সর্বশেষ গত ২৪ জুন ভূমধ্যসাগর থেকে ভাসমান অবস্থায় ৩৬৭ জনকে উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে ৩৬৪ জনই বাংলাদেশী। এর আগে একইভাবে ইতালি প্রবেশের চেষ্টা চালানোর সময় গত ১০ জুন ১৬৪ জন, ২৭ ও ২৮ মে ২৪৩ এবং ১৮ মে ৩৬ জন বাংলাদেশীকে উদ্ধার করা হয়। মে মাসে আলজেরিয়ার সীমান্তবর্তী মরুভূমি থেকে অপহরণকারীদের কবল থেকে ৮৬ বাংলাদেশীকে উদ্ধার করা হয়।