অবৈধ অভিবাসনে বিশ্বের শীর্ষে বাংলাদেশিরা

নৌযানডুবিতে ঘটছে প্রাণহানি। এরপরও থেমে নেই প্রাণ হাতে নিয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ইউএনএইচসিআর জানায়, ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২১ লাখ মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এভাবে সাগরপথ পাড়ি দিতে গিয়ে এ সময়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যে সংখ্যক মানুষ অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেছেন তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন তিউনিশিয়ার অধিবাসীরা।
সর্বশেষ লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌযানডুবিতে কমপক্ষে ১৭ বাংলাদেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। ২১ জুলাই তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্টের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, দেশটির কোস্টগার্ড সদস্যরা সাগর থেকে ৩৮০ জনের বেশি আরোহীকে উদ্ধার করেছে। লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিম উপকূলের জুয়ারা থেকে সিরিয়া, মিসর, সুদান, মালি ও বাংলাদেশের অভিবাসীদের নিয়ে রওনা দেয় নৌযানটি। রেড ক্রিসেন্ট জানায়, ১৭ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। ৩৮০ জনের বেশি অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা লিবিয়ার জুয়ারা থেকে ইউরোপের পথে রওনা দিয়েছিলেন।
সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে অভিবাসনের প্রত্যাশায় আশ্রয় নেয়া লোকের সংখ্যা গত এক বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়৷ ইতালিতে গত বছরের ১ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ৪৯ হাজার ২৮০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রবেশ করেছেন৷ তার আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৬১৬ জন৷ সে হিসেবে এক বছরে দেশটিতে সাগর পাড়ি দিযে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা শতকরা ১২৮ভাগ বেড়েছে৷ অভিবাসনের প্রত্যাশায় ইতালিতে আসা ব্যক্তিদের বেশিরভাগই তিউনিসিয়ার নাগরিক৷ উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটি থেকে ১৪ হাজার ১৫৩জন ইটালিতে পৌঁছেছে৷ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ৷
উল্লেখিত সময়ে মোট ৬ হাজার ২৭জন বাংলাদেশি অভিবাসনের প্রত্যাশায় সাগার পাড়ি দিয়ে ইটালিতে পৌঁছায়৷ এ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশিরভাগই নিজের উদ্যোগে ইতালিতে গিয়েছেন৷ আর বাকিদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে ইতালি নিয়ে আসা হয়৷ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করে৷ ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী পশ্চিম ইউরোপের দেশ ইতালি তাই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রাথমিক গন্তব্যস্থল হয়ে ওঠে৷
ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় আরো জানায়, গত এক বছরে অভিবাসনের প্রত্যাশায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে আসা লোকেরা আফ্রিকার দেশ লিবিয়া ও তিউনিসিয়া থেকে যাত্রা করেছেন৷ অভিবাসনপ্রত্যাশীরা মানব পাচারকারীদের সহায়তায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন৷ পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে ইতালি সরকার৷ গত এক বছরে দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ১৪৮ জন মানবপাচারকারীকে আটক করেছে বলে জানা গেছে৷ গত এক দশকে এভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় আটক হয়েছেন ৫৫ হাজার বাংলাদেশি। মানবপাচারের সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট এটি। ভূমধ্যসাগর দিয়েই ইউরোপে ঢুকতে হয়।
গত সাত বছরে ২২ লাখ মানুষ অবৈধভাবে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। অনেকেই আবার অ্যাসাইলাম (আশ্রয়) চেয়েছেন। এ সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। দেড় থেকে দুই লাখ। যারা অবৈধভাবে ইউরোপ পাড়ি দেন তাদের অধিকাংশের বয়স ৩১ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এদের সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ। এরপর আছেন ৩৬ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। তাদের সংখ্যা ২১ শতাংশ। ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসেই অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশিরা৷ কেন অব্যাহত এই মানুষের ঢল, কীভাবে কোন আসছেন বাংলাদেশিরা, বিশ্ব খুঁজছে সেই প্রশ্নের উত্তর।