বরানগর | Baranagar

বরানগর বা বরাহনগর কলকাতার উত্তরসীমান্তে অবস্থিত কলকাতা একটি প্রাচীন জনপদ, পৌরশহর ও বিধানসভা কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার একটি অন্যতম প্রসিদ্ধ ইতিহাস বিজড়িত জনপদ হল Baranagar বরানগর। কলকাতার অনতিদূরে অবস্থিত এই জনপদের একাংশ Baranagar বরানগর মিউনিসিপ্যালিটির অধীনে এবং একাংশ কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের অধীনে রয়েছে। ভৌগোলিক দিক থেকে ২২.৬৪০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৩৭০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত বরানগর জনপদটি।
হুগলি নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থিত বরানগরের পূর্বদিকে শিয়ালদহ, পশ্চিমে গঙ্গা, উত্তর দিকে রয়েছে দক্ষিণেশ্বর এবং দক্ষিণে আছে কাশীপুর ও সিঁথির মোড়। সবার আগে বরানগরের নামকরণ কীভাবে এরূপ হল তা জানতে ইচ্ছে করে অনেকেরই। এই নামকরণ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কলকাতার উত্তর দিকে গঙ্গাতীরবর্তী এই জনপদকে কেউ বলেন বরাহনগর। কেউ আবার বলেন বরানগর। এই প্রাচীন নগরের নামকরণ নিয়ে অল্পসংখ্যক প্রবাদ প্রচলিত আছে। কথিত আছে বহু আগে এই গ্রামে বরাহ মুনি নামের এক সিদ্ধপুরুষ বাস করতেন।
তাঁর নামানুসারেই এই গ্রামের নাম বরাহনগর। কেউ কেউ আবার বলে থাকেন উক্ত বরাহ মুনিই বিক্রমাদিত্যের নবরত্ন সভার বরাহমিহির। তবে বরাহ শব্দের অর্থ শূকর থেকে বরাহনগরের উৎপত্তির যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তার ভিত্তি খুব একটা জোরালো নয়। পাশাপাশি অনেক গবেষকরা দাবি করেন যে হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষে বরহা বলে যে শব্দটা পাওয়া যায় তার অর্থ ময়ূরপুচ্ছ।
তিন চারশো বছর আগের থেকেই এই গ্রামে ময়ূর ও ময়ূর পুচ্ছের বাজার ছিল। বরাহনগর পার্শবর্তী চিড়িয়া মোড় সেই কারণেই নামকরণ করা হয়েছে অনুমান । তাই মনে করা হয় গ্রামটির আদি নাম ছিল বরহান নগর।তবে আশ্চর্য হয়ে যেতে হয় এই জনশ্রুতিতে যেখানে বলা হচ্ছে বিক্রমাদিত্যের রাজসভার নবরত্নের অন্যতম রত্ন বরাহমিহিরের নাম থেকেই নাকি এসেছে ‘বরাহনগর’ বা বরানগর। ঔপনিবেশিক পর্বে বরানগর ছিল ওলন্দাজ বা ডাচদের ঘাঁটি।
১৬৫৮ সালে প্রথম তারা এখানে কুঠি স্থাপন করেন। তারপরে পর্তুগিজরাও এখানে নিজেদের কুঠি তৈরি করেন, এই বরানগরে; সেটাও মোটামুটি ১৮৬২ সাল নাগাদ। এই কারণেই এখানে নির্মিত হয় কুঠিঘাট। তার পাশেই বহু প্রাচীন ব্রিটিশদের তৈরি করা স্কুল ‘ভিক্টোরিয়া স্কুল’। শোনা যায়, এই স্কুলের ভিতর বিশেষ স্থানে এক দীর্ঘ সুড়ঙ্গপথের মাধ্যমে গঙ্গার ওপারে যাতায়াত করতে পারতেন ব্রিটিশরা। যদিও এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় ১৭৫৯ সালে বিদরার যুদ্ধে ডাচদের থেকে ইংরেজরা বরানগরের দখল নেন।
যদিও পরে ১৭৬১, ১৭৮১, ১৭৯৫ সাল জুড়ে ইংরেজ আর ডাচদের মধ্যে দখলদারির টেনিস কোর্টে বরানগরের ক্রমান্বয়ে হস্তান্তর হয়ে গেছে। ১৮১৭ সালে ইংরেজরা আবার ডাচদের হাতে তুলে দেয় বরানগরের দায়ভার। ১৮২৫ সালে পুরোপুরিভাবে ওলন্দাজরা দেশ ছাড়লে ব্রিটিশ আধিপত্যের সূচনা হয় এই জনপদে। ১৮৮৯ সালে এই জনপদের নাম পাকাপাকিভাবে বরানগর রাখা হয়। ১৫২ বছর অতিক্রম করেও এই বরানগর এখন গ্লোবালাইজড দুনিয়ায় বর্ধিষ্ণু।
এখনকার কুঠিঘাটের কাছে জয় মিত্র কালীবাড়ির (জয়নারায়ণ মিত্রের নামে) আশেপাশেই ছিল ওলন্দাজদের কুঠিয়াল-প্রাসাদ, বিচারালয়, কারাগার ইত্যাদি আর এই কালীবাড়ির উত্তরদিকে ওলন্দাজদের বাসস্থান ছিল যার চিহ্নস্বরূপ আজও বহু প্রাচীন বাড়ি দেখা যায়। অধুনা কুঠিঘাট রোডের দু’ধারে সেইসময় তুলো ইত্যাদি পণ্যের গুদাম ছিল। ওলন্দাজ কিংবা ব্রিটিশ আমলে বরানগর বিখ্যাত ছিল তাঁতিদের গুণমাহাত্ম্যে। বিভিন্ন বৃত্তিধারী জীবিকাধারী মানুষজনের বসবাসের কারণে বরানগরে গড়ে উঠেছিলো তাঁতিপাড়া, কামারপাড়া, মালীপাড়া, বারুইপাড়া, দর্জিপাড়া, বেহালাপাড়া ইত্যাদি। বেহালাপাড়ার শিল্পীদের তৈরি বেহালা বাদ্যের খ্যাতি আজও অমলিন।
কুঠিঘাটের কথা প্রসঙ্গেই বলতে হয় গঙ্গাতীরবর্তী বরানগরে প্রায় ২০টি ঘাট রয়েছে যার মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘাট ইতিহাসবিজড়িত, যদিও এখন সেইসব স্মৃতি লুপ্তপ্রায়। ঐতিহাসিক অজিত সেনের তথ্য থেকে জানা যায় ১৭৮৯ সালের ৩০ এপ্রিল বরানগরের ‘সতীদাহ ঘাট’-এ শেষ সতীদাহ হয়, এখানে এখন রামমোহনের মূর্তি বিদ্যমান। কথিত আছে যে, বরানগরের প্রসিদ্ধ তুলো ব্যবসায়ী ছিলেন দত্তরাম চট্টোপাধ্যায়। এক রাতে তাঁর বাড়িতে ডাকাত পড়ে। নগদ ১০ হাজার টাকা সহ বহু দামি জিনিস ডাকাতি করে ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার সময় দত্তরাম বাধা দেন আর তাঁকে ডাকাতরা তাকে একাধিকবার রামদা দিয়ে আঘাত করে। তিনি মারা যান, তাঁর স্ত্রী তারপর ‘সতী’ হন। সেটাই ‘সতীদাহ ঘাট’-এ শেষ সতীদাহ।
শ্মশানের কাছেই রয়েছে বিখ্যাত ‘রতন বাবুর ঘাট’। জমিদার রতন রায়ের বাগানবাড়ির ভগ্নাবশেষটি কিছুদিন আগে দেখা গেলেও এখন লুপ্ত। তার নামেই ঘাট। রতন রায়ের পুত্র ছিলেন অখ্যাত দুই কবি তুষার রায় এবং ফাল্গুনী রায়। শেষজীবনে মানসিক বিকারগ্রস্ত তুষার রায়কে অনেকে অভাবের তাড়নায় জমিদারবাড়ির মার্বেল পাথর হাতে করে বিক্রি করতে নিয়ে যেতেও দেখেছেন। আর এইসমস্ত ‘ঘাটের কথা’ বলতে বলতে গল্পগুচ্ছের সেই প্রথম গল্পটির মতো তার লেখকের স্মৃতিও চলে আসে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!
এই বরানগরও তাঁর পদধূলি থেকে বঞ্চিত হয়নি। গোপাল লাল ঠাকুর রোডের কাছে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের বাগানবাড়ি ‘শশীভিলা’য় ১৯৩১ থেকে ১৯৩৬ পর্যন্ত মাঝেমধ্যেই এসে থাকতেন রবীন্দ্রনাথ। প্রশান্তচন্দ্রের লেখা থেকে জানা যায় এই বাড়ির একটি ঘরের নামকরণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ‘নেত্রকোণা’ আর সেই ঘরে বসেই কবি পড়ে শুনিয়েছিলেন ‘চার অধ্যায়’, হেমন্তবালা দেবীকে পাঠিয়েছিলেন ‘নীহারিকা’ কবিতাটি। এ নিয়ে দীর্ঘ কাহিনি রয়েছে। বিখ্যাত মানুষদের মধ্যে একা রবীন্দ্রনাথ নন, বরানগরের ইতিহাসের অংশীদার হিসেবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, শিশির ভাদুড়ি, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর চক্রবর্তীও সমানভাবে স্মর্তব্য।
রবীন্দ্রনাথের ‘শশীভিলা’য় ভগ্নপ্রায় দশাতেও এখন চলছে মূক বধির বিদ্যালয় আর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িটা এখন নেই, তাঁর নামাঙ্কিত রাস্তাটি রয়েছে শুধু তাঁর স্মৃতি নিয়ে। জয় মিত্র কালীবাড়ির কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্ময়ের হলেও সত্য যে, বরানগরের এই কালীমন্দির দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দিরের থেকেও প্রাচীন। স্বয়ং রামকৃষ্ণদেব এখানকার ‘কৃপাময়ী’ কালীকে মাসি বলে ডাকতেন এবং বহুবার দেবীদর্শনে এসেছিলেন এখানে। বর্তমানে এর ভগ্নপ্রায় অবস্থা, শুধু নাটমন্দিরের প্রাচীন বৃহৎ স্তম্ভগুলি দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের দৃষ্টান্ত হয়ে। রামকৃষ্ণদেবের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় বরানগরের কাশীপুর শবদাহ ঘাটে, এখন যার নাম রামকৃষ্ণ মহাশ্মশান।
বরানগর বাজারের মোড়েই যে বিখ্যাত ‘মুখোরুচি’ তেলেভাজার দোকান, শোনা যায় সেখানে নাকি রামকৃষ্ণদেব আসতেন নিয়মিত জিলিপি-সিঙাড়া খেতে। বরানগরের ইতিহাসের সঙ্গে রামকৃষ্ণদেবের সূত্রেই যুক্ত হয়ে গেছেন স্বামী বিবেকানন্দও। বরানগর মঠ প্রতিষ্ঠা এবং পরে বরানগর মিশন প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে সেবাকর্মের ব্রতে তিনি বরানগরের ধুলো-মাটির সঙ্গে মিশে গেছেন ওতপ্রোতভাবে। ১৮৮৬ সালের ১৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই বরানগর মঠ। ‘মুন্সীদের ভাঙাবাড়ি’ বলে পরিচিত এই ভুতুড়ে বাড়িতেই দীর্ঘ পাঁচ বছর স্বামীজি তাঁর গুরুভাইদের নিয়ে সেখানে থাকতেন, সাধনা করতেন। মঠে থাকাকালীন স্বামীজিরা নিত্যস্নান ও অন্যান্য কাজের জন্য প্রামাণিক ঘাটে যেতেন।
পরে ১৮৮২তে আলমবাজারে মঠ স্থানান্তরিত হয়। তবে এখনো বরানগর মঠসংলগ্ন স্থান ‘মুন্সীর মাঠ’ নামে খ্যাত। বাংলার বিপ্লবী অভ্যুত্থানের অগ্নিযুগে বরানগরের কুঠিঘাটের রামগোপাল বসুর বাড়ি, কাঁথাধারীর মঠে লোকচক্ষুর আড়ালে গরে উথেছিল বিপ্লবীদের কুস্তির আখড়া। গোপনে এখানে রিভলভার চালাতে শেখানো হতো। ১৯১৪ সালের ২৬ আগস্ট বিখ্যাত রডা কোম্পানির অস্ত্র লুঠ করার পর তার মধ্যে ১২টি মাউজার পিস্তল রাখা হয়েছিল বরানগরের খগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ে হেফাজতে। শোনা যায় খগেন্দ্রনাথ নাকি সেই গঙ্গার ধারের কাঁথাধারী মঠের পুরোহিতের অগোচরে নিতাই-গৌরাঙ্গের মূর্তির পিছনে একটি কাঠের বাক্সে লুকিয়ে রেখেছিলেন রিভলভার।
এই খগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বরানগরের ‘আত্মোন্নতি সমিতি’র মূল কাণ্ডারি, পরে যদিও তিনি সপার্ষদ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পুলিশের নজর এড়িয়ে ১৯২৯ সালের ৯ এপ্রিল বরানগরের যোগেন্দ্র বসাক রোডের বাড়িতে নিরালম্ব স্বামী অর্থাৎ যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন স্বয়ং ভগত সিং। বাংলার প্রথম বৈপ্লবিক নেতা একর্থে শ্রীচৈতন্যদেব। এই প্রাচীন জনপদটি তাঁরও পদচারণায় ধন্য হয়েছে। শ্রীশ্রী বৃন্দাবন দাসের ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত’ গ্রন্থে বরানগরের উল্লেখ পাওয়া যায়।
জানা যায় যে, ১৫১১ সালে চৈতন্যদেব পা রেখেছিলেন বরানগরের মালিপাড়ায়, রঘুনাথ উপাধ্যায়ের বাড়িতে। পরে এখানেই তৈরি হয় পাঠবাড়ি আশ্রম। চৈতন্যের খড়ম জোড়া রয়েছে এখানে। এই খড়ম তিনি রঘুনাথকে দিয়েছিলেন তাঁর ভাগবতপাঠে খুশি হয়ে। দেখা যাবে, বরানগরের ইতিহাস মোটামুটিভাবে পাঁচশো বছরের পুরনো। বরানগরের শিক্ষাঙ্গনগুলির মধ্যে স্কুলের সংখ্যাই বেশি। বনহুগলি হাই স্কুল, বরানগর নরেন্দ্রনাথ বিদ্যামন্দির, বরানগর বিদ্যামন্দির, বরানগর রাজকুমারী গার্লস হাই স্কুল, বরানগর মোহন গার্লস হাই স্কুল, বরানগর রামেশ্বর হাই স্কুল, জ্যোতিনগর বিদ্যাশ্রী নিকেতন, বরানগর মায়াপীঠ গার্লস হাই স্কুল ইত্যাদি সবই রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীনে বাংলা মাধ্যম স্কুল।
এগুলি ব্যতিরেকে বেলুড় মঠ পরিচালিত বরানগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় বরানগরের দুটি বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের মধ্যে বিধান পার্কের ক্যালকাটা পাবলিক স্কুল, খালসা মডেল হাই স্কুল এবং সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুল খুবই জনপ্রিয়। উচ্চশিক্ষার সুবিধের জন্য এখানে গড়ে উঠেছে ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র কলেজ এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বনহুগলিতে অবস্থিত ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান। দুর্গাপুজো, রাস উৎসব, চৈতন্যপ্রভুর জন্মদিন এমনকি কালীপূজাও এখানে খুব ধুমধাম করে পালিত হয়।
বরানগর মঠে শ্রী রামকৃষ্ণদেব, মা সারদা এবং স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিরাট উৎসব হয় যেখানে বহু দূর-দূরান্ত থেকে অগণিত ভক্তের সমাবেশ ঘটে। বরানগর বললেই মনে পড়ে যায় যে দৃষ্টান্তগুলি তার তালিকা বেশ দীর্ঘ। বরানগর মঠ, বরানগর পাঠবাড়ি, কুঠিঘাট-এর পাশাপাশি জয় মিত্র কালীবাড়ি, কাচের মন্দির ইত্যাদি আরো কত কি!এছাড়াও যদি কখনো কেউ ঘুরে আসতে চান বরানগরের ইতিহাস-গন্ধমাখা অলিগলি, তাকে দেখতেই হবে কাচের মন্দির, যেতে হবে পাঠবাড়ির সংগ্রহশালায় – বরানগর মঠের সন্ধ্যারতিকালীন ‘খণ্ডন ভব বন্ধন’র মূর্চ্ছনায় মোহিত হতে হতে কোনো এক ব্রাহ্মমুহূর্তে তিনি আবিষ্কার করতেই পারেন এই জনপদের প্রাচীন বনেদি বাড়িগুলির স্থাপত্য শিল্পে ডোরিক, আইয়োনিক ও করিন্থিয়ান ইত্যাদি গ্রিক স্থাপত্যরীতির দৃষ্টান্ত।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে জয়মিত্র কালীবাড়ি, কাঁথাধারী মঠ, রবীন্দ্রনাথের এককালীন বাসস্থান অধুনা ভগ্নপ্রায় ‘শশীভিলা’ ইত্যাদিও উল্লেখযোগ্য। একদিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিযজ্ঞ, বিপ্লবীসমিতির বাড়বাড়ন্ত; অন্যদিকে শতাব্দীপ্রাচীন ওলন্দাজ বণিকের পায়ের ছাপ মেখে সুপ্রাচীন এই জনপদ বরানগর নিজেই এখন মূর্তিমান ইতিহাস। শহর কলকাতার উত্তরে অনতিদূরে কিংবা খানিক সংলগ্ন হয়েই বরানগর তার স্বীয় মহিমায় ভাস্বর। ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে বরানগরের মোট জনসংখ্যা ২৫০,৬১৫।
এর মধ্যে পুরুষ ৫৩ শতাংশ এবং মহিলা ৪৭ শতাংশ। বরানগরের গড় সাক্ষরতার হার ৮২ শতাংশ, যা জাতীয় গড় ৫৯.৫ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি। শহরে জনসংখ্যার ৮ শতাংশের বয়স ছয় বছরের নিচে। সি.পি.আই (এম) নেতা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর নির্বাচন কেন্দ্র এই বরানগর। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত জ্যোতি বসু এই কেন্দ্র থেকে বিধানসভা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। বরানগর বিধানসভা কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়ক হলেন তাপস রায় (তৃণমূল কংগ্রেস), তিনি ২০১১ ও ২০২১ সালে এই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। আরএসপি-র মতীশ রায় ১৯৭৭, ১৯৮২, ১৯৮৭ ও ১৯৯১ সালে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। বরানগর বিধানসভা কেন্দ্রটি দমদম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।