Sierra Leone| সিয়েরা লিওন যে দেশের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা

Sierra Leone|  সিয়েরা লিওন যে দেশের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা

রিপাব্লিক অফ সিয়েরা লিওন Sierra Leone, আফ্রিকার পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত এই দেশটিতে আফ্রিকার সব থেকে বেশি হিরের খনি আছে। দেশটির উত্তর ও উত্তর-পূর্বে গিনি, দক্ষিণ-পূর্বে লাইবেরিয়া এবং পশ্চিম ও দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও হিরের খনির মতো প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও দেশটি একসময় গৃহযুদ্ধে জর্জরিত হয়ে ছিল। ইংরেজদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর একটি দেশ বিভিন্ন ভুল মানুষের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার পর দারিদ্র্যতা, বেকারত্ব, দুর্নীতি সহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্ম কিভাবে গৃহযুদ্ধের দিকে একটা গোটা জাতীকে ঠেলে দিয়েছিল সেই গল্পই শোনাবো আজ-

সিয়েরা লিওন Sierra Leone পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। সিয়েরা লিওনের Sierra Leone  সাংবিধানিক নাম সিয়েরা লিওন প্রজাতন্ত্র। ভূ-রাজনৈতিকভাবে Sierra Leone সিয়েরা লিওনের উত্তর সীমান্তে গিনি, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে লাইবেরিয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের দিকে আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। সিয়েরা লিওনের বৃক্ষহীন তৃণভূমি অঞ্চল থেকে রেইনফরেস্ট পর্যন্ত একটি বিচিত্র পরিবেশের গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু বিদ্যমান।

Sierra Leone সিয়েরা লিওনের মোট আয়তন ৭১,৭৪০ বর্গকিলোমিটার (২৭,৬৯৯ বর্গমাইল) এবং এর মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬ মিলিয়ন (২০১১ জাতিসংঘ পরিসংখ্যান অনুসারে)। ফ্রিটাউন Sierra Leone সিয়েরা লিওনের রাজধানী, সর্ব বৃহত্তম শহর এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র। বো সিয়েরা লিওনের Sierra Leone দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ১ লক্ষের বেশি জনসংখ্যাভূক্ত অন্যান্য শহরসমূহ হল : কেনেমা, ম্যাকেনি, কাইদু। সিয়েরা লিওন উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল চারটি ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত, যেগুলো আবার ১৪টি জেলায় বিভক্ত।

সিয়েরা লিওন Sierra Leone ১৯৬১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। সরকারের দুর্নীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের অব্যবস্থাপনার ফলে Sierra Leone সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধ হয় (১৯৯১ - ২০০২), যার জন্য এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশে ধংসযজ্ঞ চলে। এ যুদ্ধে ৫০,০০০ বেশি মানুষ মারা যায়, দেশের অবকাঠামো প্রায় ধংস করে, এবং দুই মিলিয়ন মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরনার্থী হিসাবে বাস্তুহারা হয়। গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে সিয়েরা লিওনের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে ।

কিন্তু এসব কিছুই নির্ভর করছে সরকারের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ নীতির উপরে, কেননা অনেকেই ধারণা করেন যে এই গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে সরকারের দুর্নীতি অনেক বড় একটা নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিল । Sierra Leone সিয়েরা লিওনের মুদ্রার নাম লিওন। জাতীয় ব্যাংকের নাম ব্যাংক অফ সিয়েরা লিওন। সিয়েরা লিওন একটি কৃষি ভিত্তিক দেশ। দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৫৮ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রধান শস্য পণ্য হল ধান, প্রায় ৮৫ শতাংশ কৃষক ধান চাষ করেন। দেশে বছরে জনপ্রতি ৭৬ কেজি ধান খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।

সিয়েরা লিওন খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে হীরা, এটি অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। এছাড়াও রয়েছে অন্যতম পণ্য টাইটানিয়াম ও বক্সাইট, অন্যতম প্রধান পণ্য সোনা, এবং রয়েছে রুটাইল এর পৃথিবীর বৃহত্তম মজুদের একটি অংশ। সিয়েরা লিওনে রয়েছে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক হারবর। এত প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার পরেও সিয়েরা লিওনের ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমায় বসবাস করে। সিয়েরা লিওন খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে হীরা, এটি অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি।  

সিয়েরা লিওনে Sierra Leone মোট চারটি প্রদেশ রয়েছে, এগুলো হল- উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ, দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ, পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ । এর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশকে দুটি জেলায় এবং বাকি প্রদেশগুলোকে ১২ টি জেলায় ভাগ করে মোট ১৪ টি জেলা নিয়ে প্রশাসনিক অঞ্চল নির্ধারণ করা হয়েছে । Sierra Leone সিয়েরা লিওনের মোট জনসংখ্যা ৭৩ লক্ষ ৯৬ হাজার ১৯০ জন, যা জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে ১০৩ তম । প্রায় ১৫.৪০% (২০০৪-২০১৪ সালের হিসাব) জনসংখ্যার হার নিয়ে এর প্রতি কিলোমিটার এলাকায় ৭৯.৪০ জন লোক বসবাস করে । গড় আয়ু ৫৭.৩৯ বছর, পুরুষ গড় আয়ু ৫৪.৮৫ বছর এবং মহিলা গড় আয়ু ৬০ বছর ।

সিয়েরা লিওন জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন, ওআইসি, ইকোওয়াস, কমনওয়েলথ সহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র। ইংরেজি ভাষা সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা। এখানে আরও প্রায় ২০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে মেন্দে ভাষা ও তেমনে ভাষা উল্লেখযোগ্য। প্রায় ১০% লোক ইংরেজি ভাষাভিত্তিক একটি ক্রেওল ভাষা ক্রিও-তে কথা বলেন। এই ক্রেওলটি সিয়েরা লিওনের প্রায় সবার দ্বিতীয় ভাষা। মেন্দা ভাষা দক্ষিণাঞ্চলে, তেমনে ভাষা মধাঞ্চলে এবং ক্রিও ভাষা প্রায় সর্বত্র সার্বজনীন ভাষা বা লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আন্তর্জাতিক কাজকর্মে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। জানিয়ে রাখি ১৯৬১ সালে এই দেশটি স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার ঠিক তিন দশক পরে, ১৯৯১ সালে প্রবল দুর্নীতি ও দেশের সম্পদ নষ্ট করার প্রতিবাদে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। টানা ২০০২ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলেছিল। গৃহযুদ্ধ থামাতেই হস্তক্ষেপ করে রাষ্ট্রসঙ্ঘ এবং এই পর্যায়েই রাষ্ট্রসঙ্ঘের পিসকর্পের প্রতিনিধি হিসেবে সিয়েরা লিওনে আসেন প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশি সৈনিক। পিসকর্পের অবদানেই শেষ পর্যন্ত শান্তি ফিরে আসে সিয়েরা লিওনে এবং এই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সে দেশের রাষ্ট্রপতি আলহাজ আহমেদ তেজান কাবাহ্ 'বাংলা' ভাষাকে সিয়েরা লিওনের 'সাম্মানিক সরকারি ভাষা' হিসেবে স্বীকৃতি দেন।