ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্যবাড়ির কালো দুর্গা পুজো

ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্যবাড়ির কালো দুর্গা পুজো

দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার অন্যতম বনেদি বাড়ির পুজো হল ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো। আমরা সাধারণত মা দুর্গাকে গৌরবর্ণ রূপে দেখেই অভ্যস্ত। কিন্তু কলকাতা আর পশ্চিমবঙ্গে দু'টি এমন বাড়ি আছে, যেখানে মা দুর্গার রূপ কালো। সেখানে কালো রূপেই মা দুর্গা পূজিত হয়ে আসছেন। মা এখানে কৃষ্ণবর্ণের, কিন্তু তিনি কালী নন।

একটি ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্যবাড়ির ৪৩৭ বছরের পুজোআর পাঁচটা বনেদি বাড়ির তুলনায় এই ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোর বিশেষত্ব সম্পূর্ণ আলাদা। ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের পাইনখাড়া গ্রামে। ১৫৮৫ সালে, অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৪৩৭ বছর আগে। সেসময় গৌর বর্ণেই দেবী পূজিত হতেন।

মায়ের কালো রূপের পূজা হচ্ছে ২২০ বছর ধরে। দেশভাগের পর, ১৯৩৮ সালে ভট্টাচার্য পরিবার ক্যানিং চলে আসেন। মূলত জমিদারবাড়ির শোভা আর আভিজাত্য প্রদর্শনের জন্য দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয়।  ভট্টাচার্যবাড়ির বর্তমান সদস্যদের থেকে জানা যায় কালো রূপের দুর্গাপুজো করার ইতিহাস। তাঁদের মতে, পুজো শুরুর কয়েক বছর পরেই ঘটে এক ভয়ংকর দুর্ঘটনা।

বাড়ির দুর্গামন্দিরের পাশেই ছিল মা মনসার মন্দির। পুরোহিত মনসাপুজো করে দুর্গাপুজো করতে আসেন। তখন দেখা যায়, মনসা মন্দিরের ঘিয়ের প্রদীপের জ্বলন্ত সলতে নিয়ে উড়ে যাচ্ছে একটি কাক। ঠিক সেই সময় তার মুখ থেকে জ্বলন্ত পলতে দুর্গা মন্দিরের শণের চালের ওপর পড়লে দুর্গা মন্দির ও প্রতিমা পুড়ে যায়। এই ঘটনার পর বাড়ির সদস্যরা মনে করেন যে, মা হয়তো আর তাঁদের থেকে পুজো নিতে চাইছেন না।

তাই তারা পুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। এমন অবস্থায় এক রাতে বাড়ির গৃহকর্তা রামকান্ত ভট্টাচার্য মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান যে, মায়ের পুজো যেন কোনওমতে বন্ধ না হয়। তিনি ওই পোড়া রূপেই পূজিত হতে চান। এই স্বপ্নাদেশের পর থেকেই বছরের পর বছর ধরে মায়ের পোড়া মুখ আর ঝলসানো শরীরের মূর্তিতেই হয়ে আসছে ভট্টাচার্যবাড়ির পুজো। শুধু পোড়া রং নয়, মূর্তিতেও বৈচিত্র্য আছে।

এই বাড়িতে মায়ের ডানদিকে নয়, গনেশ থাকে বামদিকে আর সঙ্গে সরস্বতী। আর মায়ের ডানদিকে থাকে লক্ষ্মী আর কার্তিক, এবং কার্তিকের পাশেই থাকেন নবপত্রিকা। আগে এই বাড়ির পুজোয় মোষবলি দেওয়ার রীতি ছিল, এখন আর সেসব হয় না। নিয়ম রক্ষার জন্য চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো– এই বাড়ির পুজোয় নবমীর দিন চালের গুঁড়ো দিয়ে একটি মানুষের আদলে মূর্তি বানানো হয়, তারপর তাকে বলি দেওয়া হয়। এইভাবে নিজেদের শত্রুদের বলি দেন তাঁরা।

এছাড়াও যথারীতি নিয়ম মেনে দশমীতে মায়ের বিসর্জন হয়। বিসর্জনের পর মায়ের প্রতিমা জলের তলায় তিনদিন পুঁতে রাখা হয়, যাতে প্রতিমা গভীর জল থেকে ভেসে না ওঠে। এরপর সেই কাঠামো তোলা হয় লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন।আর পাঁচটা বাড়ির পুজোর মতো আর্থিক কারণে কিছুটা আড়ম্বর কমেছে। সেই ঘাটতি নিষ্ঠা দিয়েই মেটান বর্তমান পরিবারের সদস্যরা।

যে আন্তরিকতার টানে শুধু এলাকার বাসিন্দারা নন, দূরের মানুষ এই পুজোয় আসেন। ঢাকায় যে কাঠামোয় পুজো হত, এখনও সেভাবে একচালা মূর্তিতে পুজো হচ্ছে। আগে মহিষ বলি হলে,ও বর্তমানে ফল বলি হয়। মহানবমীতে হয় শত্রু বলি। আতপ চাল দিয়ে কাল্পনিক মানুষের মূর্তি বানিয়ে তাকে বধ করা হয়। এভাবেই কৃষ্ণ-মুখী দুর্গা পুজোর রং বদলে দিয়েছেন।

আরো পড়ুন      জীবনী  মন্দির দর্শন  ইতিহাস  ধর্ম  জেলা শহর   শেয়ার বাজার  কালীপূজা  যোগ ব্যায়াম  আজকের রাশিফল  পুজা পাঠ  দুর্গাপুজো ব্রত কথা   মিউচুয়াল ফান্ড  বিনিয়োগ  জ্যোতিষশাস্ত্র  টোটকা  লক্ষ্মী পূজা  ভ্রমণ  বার্ষিক রাশিফল  মাসিক রাশিফল  সাপ্তাহিক রাশিফল  আজ বিশেষ  রান্নাঘর  প্রাপ্তবয়স্ক  বাংলা পঞ্জিকা