হিন্দু ধর্মের পরিচয় বহন করে প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠাতা হয় বাংলায়

হিন্দু ধর্মের পরিচয় বহন করে প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠাতা হয় বাংলায়

বাংলার বুকে প্রথম মসজিদ বানালেন তিনি। এদিকে সেই মসজিদে ছড়িয়ে রয়েছে এমন অজস্র নিদর্শন, যা হিন্দু ধর্মের পরিচয় বহন করে। আবার বলা হয়, এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা নিজেই নাকি ছিলেন গঙ্গাদেবীর পূজক। এ যেন এক অপূর্ব সমন্বয়ের। কিন্তু গল্প নয়, আসলে তা সত্যিই। সেই সাতশো বছর আগেকার কথা। বাংলায় সেই সময়ই গড়ে ওঠে প্রথম মসজিদ।

এমনটাই মনে করেন গবেষকেরা। সাত শতক পেরিয়ে এসেও তা কোনও ভাবে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। ১২৯৮ সালে ত্রিবেণীতে তৈরি করা হয় এই মসজিদ। সৌজন্যে সপ্তগ্রামের শাসনকর্তা, জাফর খাঁ গাজী। ১৩১৫ সালে 'জাফর খাঁ গাজীর মসজিদ'-এর পাশে একটি দরগাও গড়ে ওঠে। আর এই দুই জায়গাতেই দেখা যায় এমন অনেক কিছু, যেখানে একান্তভাবেই হিন্দু ধর্মের ছোঁয়া রয়েছে।

যেমন ধরুন, দরগার ভিতরের সমাধিকক্ষে দেখা যায় বেশ কয়েকটি সংস্কৃত শিলালিপি। তাতে আঁকা রয়েছে রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন ঘটনা। ইসলাম ধর্মে মূর্তির কোনও স্থান নেই, অথচ মসজিদ ও দরগায় খোদাই করা আছে একাধিক মূর্তি। তাও যে কোনও মূর্তি নয়, বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীর অঙ্গহীন মূর্তি। এছাড়াও দরগায় রয়েছে বিষ্ণুমূর্তি, বুদ্ধমূর্তি ও জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের মূর্তিও।

কেবল হিন্দু দেবদেবীই নন, এই দরগায় একইসঙ্গে শেষশয্যায় শুয়ে আছেন জাফর খাঁ গাজীর এক পুত্র ও পুত্রবধূ, যিনি ছিলেন হুগলির রাজকন্যা। সেদিক থেকে দেখলে এই মসজিদ সত্যিই একরকম সম্প্রীতির কথা বলে। তবে, গবেষণা জানায়, তার আড়ালে রয়েছে এক অন্য গল্পও। এই মসজিদের জায়গায় একটি হিন্দু মন্দির ছিল বলে জানাচ্ছে 'কেমব্রিজ হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া' বইটি। সেই মন্দিরের কিছু কিছু উপাদান মসজিদ গড়ার কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে এও জানা যায়, সেই কৃষ্ণ মন্দিরটির নাকি ছিল একেবারেই ভগ্নপ্রায় দশা।

সুতরাং মসজিদ তৈরি করার জন্য জাফর খাঁ মন্দিরটি ভেঙে ফেলেছিলেন, এমন কথা বলা মুশকিল। কেননা জাফর খাঁ নিজেই যে পূজা করতেন গঙ্গাদেবীর। বেদব্যাস রচিত গঙ্গাষ্টক স্তোত্র সারাক্ষণ আওড়াতেন তিনি, যে কারণে এই শ্লোকটি তাঁরই লেখা বলেই মনে করতেন অনেকে। আসলে যে কোনও ঘটনারই দুটি দিক থাকে। এর মধ্যে কেউ মন্দির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার গল্প খুঁজতেই পারেন। কিন্তু একটি ভগ্নপ্রায় মন্দিরের অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়ার বদলে বেঁচে রয়েছে একটি মসজিদের মধ্যে দিয়ে, এমনটাও ভাবা যায় না কি? বাংলা তো সেই সমন্বয়ের গল্পই বলে, বলে এসেছে চিরকাল।