চার ধাম দর্শন

চার ধাম দর্শন

 

যমুনোত্রি ধাম :-  Chardham Darshan চার ধাম যাত্রার প্রথম ধাম, যমুনোত্রি আপনাদের প্রথম গন্তব্যস্থল। হরিদ্বার থেকে আপনাদের ভাড়া করা গাড়ি করে প্রথমে পৌঁছতে হবে বরকোট যার দূরত্ব হরিদ্বার থেকে ১৮০ কি.মি। সময় লাগতে পারে ৬ ঘন্টা। প্রথম দিন আপনাকে বরকোটেই হোটেলে থাকতে হবে থাকার মতো বরকোটে কিছু হোটেল এবং হোমস্টে ও পেয়ে যাবেন, কিন্তু ভাড়া এখানে কিন্তু সামান্য বেশি,

মোটামুটি ধরুন ১০০০ টাকা থেকে স্টার্ট। কারণ এখানে হোটেল ব্যবসা মাত্র ৬ মাসের জন্যই হয়। বরকোটে রেস্ট নিয়ে পরের দিন আপনাকে যেতে জানকী চট্টির উদ্দেশ্যে। এখান থেকেই আপনার যমুনোত্রির যাত্রা শুরু হবে মানে ট্রেক। ট্রেক কিন্তু বেশি না, মাত্র ৫-৬ কি.মি, সময় লাগবে ৩-৩.৩০ ঘন্টা । যে গাড়ি করে এসেছিলেন ওই গাড়ি করেই চলে আসুন জানকীচট্টি, তারপর হেঁটে পৌঁছে যান যমুনোত্রি। এখানেই যমুনা মাতার মন্দির অবস্থিত। আর এখানেই যমুনা নদীর উদগমস্থল।

এখানে পৌঁছে যমুনা মাতার মন্দিরের মাতার দর্শন করে, আসে পাশে কিছুটা সময় কাটিয়ে ছবি তুলে আবার হেঁটে ফিরে চলে আসুন জানকীচট্টিতে। যমুনোত্রি তে দেখার মতো আরো কয়েকটি জায়গা আছে যেমন - হনুমানচট্টি, হনুমান-গঙ্গা আর যমুনা নদীর সঙ্গম। সূর্যকুণ্ড, দিব্য-শিলা। রাস্তায় কিছু শুকনো খাওয়ার সাথে থাকলে ভালো, নাহলে জানকীচট্টি তে কিছু হালকা একটা খেয়ে গাড়ি করে চলে আসুন আবার বরকোটে আপনার হোটেলে। সেদিনের মত আবার রাতে ওখানেই রাত্রিবাস। মোটামোটি ধরুন যদি সকালে রওনা দেন তাহলে বিকেলের মধ্যে আবার ফিরে চলে আসতে পারবেন বরকোটে। এভাবেই আপনার চারধাম যাত্রার দ্বিতীয় দিনের সমাপ্তি ঘটবে।

বদ্রীনাথ ধাম :- অষ্টম দিনে আপনার যাত্রা শুরু হবে বদ্রীনাথের উদ্দেশ্যে। শোনপ্রয়াগ থেকে বদ্রীনাথের দূরত্ব ২৩০-২৪০ কি.মি। সময় ভালই লেগে যাবে ৭-৮ ঘন্টার মত। সেই জন্য আপনাকে খুব সকালেই বেরোতে হবে শোনপ্রয়াগ থেকে। বদ্রীনাথে পৌঁছে আপনাকে থাকার কোনো অসুবিধা হবে না। প্রচুর হোটেল, আশ্রম, ধর্মশালা আপনারা পেয়ে যাবেন।

সেদিন বদ্রীনাথে পৌঁছে পুরো রেস্ট নিন। নবম দিন সকালে উঠেই সকাল সকাল সকাল বদ্রী-বিশালের দর্শন করুন। কারণ ভিড় খুব হয়। বদ্রীনাথে মন্দির দর্শন করা ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে তার মধ্যে বসুধারা ফলস্, এবং ভারতের শেষ গ্রাম -'মানা'। বসুধারা ফলস্ আপনাকে ট্রেক করে যেতে হবে তারজন্য আরো একটা এক্সট্রা দিন লেগে যাবে।

মানা গ্রাম ঘোরার জন্য মোটামুটি ৩ ঘন্টা যথেষ্ট। মানা গ্রামে দেখার মত প্রচুর জায়গা আছে, মহাভারত কাহিনী সম্বন্ধিও বিভিন্ন জায়গা ভারতের শেষ চায়ের দোকান, সরস্বতী নদীর উদগমস্থল প্রভৃতি । নিজেদের ভাড়া করা গাড়ি থাকলে তো ভালোই, নাহলে ওখানে লোকাল গাড়ি ভাড়া করতে হবে আমাদের সময়ে 500 টাকা ভাড়া নিয়েছিলো। যাইহোক মানা গ্রাম ঘুরে এসে বদ্রীনাথে কিছু একটা খেয়ে বেরিয়ে পড়ুন যোসিযঠের উদ্দেশ্যে। দূরত্ব ৪৬ কি.মি। সময় লাগবে প্রায় ২ ঘন্টা।

নবম দিন আপনাকে যোসিযঠেই থাকতে হবে, আর হাতে যদি আরো সময়ে থাকে তাহলে আরো একটু এগিয়ে পিপলকোটি বলে একটা জায়গা আছে। ওখানে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন। কারণ পরের দিন আপনাকে হরিদ্বার পৌঁছতে কম সময় লাগবে। পরেরদিন সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট করে সন্ধের মধ্যে পৌছে যান হরিদ্বার। রাস্তায় পঞ্চপ্রয়াগের সব গুলোই দেখতে পাবেন। হরিদ্বার পৌঁছে সেদিন ওখানেই রাত্রিবাস। এভাবেই আপনার ৯ রাত ১০ দিনের চারধাম যাত্রার সমাপ্তি ঘটবে।পরের দিন বাড়ি ফেরার পালা। সকলেই চারধাম যাত্রার মধুর স্মৃতি নিয়ে ফিরে চলুন আপনাদের নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশে।

কেদারনাথ ধাম :- পঞ্চম দিন আপনাকে যেতে তৃতীয় ধাম, আমাদের সকলেরই জীবনে একবার ইচ্ছা থাকে এখানে যাওয়ার সেই কেদারনাথে। কেদারনাথ যাওয়ার জন্য আপনাকে উত্তরকাশি থেকে পৌঁছতে হবে শোনপ্রয়াগ, গুপ্তকাশি, সীতাপুর, ফাঁটা। এত গুলো জায়গার নাম কেনো বললাম তার কারণ আছে। গাড়ি আপনার শোনপ্রয়াগ পর্যন্তই যায়।

কিন্তু এবার কেদারনাথ যাওয়ার জন্য যতো ভিড় হচ্ছে তাতে শোনপ্রয়াগ বা গৌরীকুন্ডে হোটেল নাও পেতে পারেন পেলেও অনেক হাই রেট হবে। তাই কিছুটা আগে সীতাপুর বা গুপ্তকাশিতে তে থাকলে হোটেল এর availablity অনেক বেশী হবে সেই জন্যই এটা বলা। তাছাড়া আপনারা যদি হেলিকপ্টার তে যেতে চান তাহলে আপনাকে ফাটা বা গুপ্তকাশিতেই নামতে হবে।

কেদারনাথ নিয়ে সমস্ত তথ্য আলাদা একটা ব্লগ আছে নিচে তার লিঙ্ক দিলাম দেখে নেবেন, বিস্তারিত ভাবে সব বলা আছে- কেদারনাথ যাত্রার সম্পূর্ণ তথ্য পঞ্চম দিন আপনার শোনপ্রয়াগ, ষষ্ঠ দিন কেদারনাথে এবং সপ্তম দিন কেদারনাথ থেকে নেমে আবার শোনপ্রয়াগে স্টে করতে হবে আপনাকে।

গঙ্গোত্রী ধাম:-  পরের দিন আপনার যাত্রা শুরু হবে গঙ্গোত্রী ধামের উদ্দেশ্যে। সেইজন্য আপনাকে যেতে হবে উত্তরকাশি, উত্তরকাশি জেলাতেই অবস্থিত গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রি ধাম। যাইহোক বরকোট থেকে উত্তরকাশির দূরত্ব ৮০ কিমি। সময় লাগতে পারে ৩ থেকে সারে ৩ ঘন্টা। উত্তরকাশি তেই সেদিনকার মত আপনার রাত্রিবাস।

আমি আপনাকে পরামর্শ দেবো উত্তর কাশিতে সেদিন না থেকে আরো ১০-১৫ কিমি এগিয়ে হরসিলে থাকতে পারেন,আমরাও তাই করেছিলাম, ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত সুন্দর একটি জায়গা হরসিল, জায়গাটি আপেল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত হলেও আরো পপুলার হয়েছে একটি সিনেমার জন্য। সিনেমারটির নাম হলো 'রাম তেরি গঙ্গা ম্যালি'। এর পর থেকেই প্রচুর পর্যটক এখানে আসা শুরু হয়েছে, এখানে থাকার আরো একটা সুবিধে হল আপনি পরের দিন আরো তাড়াতাড়ি গঙ্গোত্রী পৌঁছে যেতে পারবেন।

তাছাড়া উত্তরকাশিতে যদি থাকতে চান, ওখানেও থাকতে পারেন ভাগীরথী নদীর তীরে সুন্দর সাজানো গোছানো একটা শহর, এখানে পৌঁছে কিছুটা সময় রেস্ট নিয়ে, ঘুরে আসুন কাশি বিশ্বনাথ মন্দির থেকে।, তাছাড়া এখানে একটা ভিউ পয়েন্ট আছে যেটা থেকে পুরো শহরটাকে দেখা যায়। এবং আরো প্রচুর দেখার মত মন্দির পেয়ে যাবেন। এভাবেই আপনার চারধাম যাত্রার তৃতীয় দিনের পরিসমাপ্তি ঘটবে।

চতুর্থ দিন সকাল সকাল উঠেই গাড়ি করে চলে আসুন গঙ্গোত্রী সেখানে মা গঙ্গার মন্দির থেকে দর্শন করে সকালের খাওয়ায়টা খেয়ে ফেলুন। পাশেই গঙ্গা নদী মানে ভাগীরথী, এখান থেকে গঙ্গা জল নিয়ে নিতে পারেন। তারপর আবার গাড়ি ধরে চলে আসুন উত্তরকাশি, চতুর্থ দিন আপনার উত্তরকাশি তেই স্টে করুন।