চারুসীতা চক্রবর্তী এর জীবনী

চারুসীতা চক্রবর্তী এর জীবনী

ভারতের এক অন্যতম মহিলা শিক্ষাবিদ এবং রসায়নবিদ চারুসীতা চক্রবর্তী (Charusita Chakrabarty)। ১৯৯৯ সাল থেকে দিল্লির ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি সংস্থায় রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে রসায়ন বিজ্ঞানে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তাঁকে শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এছাড়া ১৯৯৯ সালে বি. এম. বিড়লা বিজ্ঞান পুরস্কারেও ভূষিত করা হয় তাঁকে। ব্যাঙ্গালোরের জওহরলাল নেহেরু সেন্টার ফর কম্পিউটেশনাল মেটেরিয়াল সায়েন্স সংস্থার সহকারী সদস্য ছিলেন চারুসীতা চক্রবর্তী।

১৯৬৪ সালের ৫ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজে চারুসীতা চক্রবর্তীর জন্ম হয়। তাঁর বাবার নাম সুখময় চক্রবর্তী এবং মায়ের নাম ললিতা চক্রবর্তী। আমেরিকায় জন্ম হলেও ভারতের দিল্লিতেই বড়ো হয়েছেন তিনি। কুড়ি বছর বয়সে নিজের মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন চারুসীতা। তাঁর বাবা-মা দুজনেই ছিলেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার সুবাদে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছিলেন তিনি।

ছোটোবেলা থেকে নানাবিধ সাহিত্যগ্রন্থ বাড়িতে এলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয়েই তাঁর আগ্রহ জন্মায়। মূলত রসায়নের জগতেই তাঁর আগ্রহ জন্মালেও আজকের দিনের মতো কলাবিদ্যা ও বিজ্ঞানের মধ্যে কোনো স্পষ্ট বিভেদরেখা টানতে সম্মত ছিলেন না চারুসীতা। পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী রামা রামস্বামীকে বিবাহ করে ভারতেই স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেন তিনি। দিল্লির উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি এবং এরপরেই জাতীয় বিজ্ঞান মেধা অন্বেষণ পরীক্ষায় নির্বাচিত হন চারুসীতা চক্রবর্তী।

এরপরে রসায়ন বিষয়ে সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তি হন তিনি এবং ১৯৫৮ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। এরপরে কেমব্রিজে ন্যাশনাল সায়েন্স ট্রাইপোস সম্পূর্ণ করে ১৯৮৭ সালে স্নাতক পাশ করেন তিনি। কোয়ান্টাম বিচ্ছুরণ ও স্পেক্ট্রোস্কোপি বিষয়ে চারুসীতা এরপরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ডেভিড ক্ল্যারি। এরপরে সান্টা বারবারায় ক্যালিফোর্ণিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হোরিয়া মেটুর অধীনে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষক হিসেবে যুক্ত হন চারুসীতা চক্রবর্তী।

এর মাঝে ভারতে কিছুদিন কাটিয়ে তিনি পুনরায় কেমব্রিজের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কেমব্রিজে গুলবেঙ্কিয়ান জুনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। ১৯৯৪ সালে পাকাপাকিভাবে ভারতে থাকতে শুরু করেন চারুসীতা। তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও যেহেতু তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেননি, তাই ভারতের কোনো আইআইটি তাঁকে চাকরি দিচ্ছিল না। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে কানপুর আইআইটি তাঁকে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করে।

কিছুদিন পরে দিল্লি আইআইটি-র রসায়ন বিভাগেও তিনি অধ্যাপনা করতে শুরু করেন। দিল্লি আইআইটিতে ক্রমে চারুসীতা ২০০৬ সালে সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপকের পদে উন্নীত হন। আমৃত্যু তিনি এই সংস্থায় অধ্যাপনা করেছেন। দিল্লি আইআইটিতে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরেই নতুন দিল্লির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকে নিজের একটি গবেষণা প্রকল্প পাঠান তিনি। এত ভালো প্রস্তাব লেখার দরুন গবেষণার জন্য খুব সহজে অর্থ সংগ্রহ করতে সমর্থ হন তিনি, যদিও পরে অর্থাভাব ঘটলেও গবেষণা থামাননি তিনি। পারমাণবিক ও আণবিক ক্লাস্টার বিষয়ে প্রথম দিকে গবেষণা করতে শুরু করেন।

তাঁর কর্মজীবনের পুরো সময় ধরেই পারমাণবিক ও আণবিক ক্লাস্টারের উপর কোয়ান্টাম বলের প্রভাব কীরূপভাবে কাজ করে সে বিষয়েই তাঁর কাজ কেন্দ্রীভূত ছিল। তাঁর আগ্রহের বিষয়গুলির মধ্যে ছিল তাত্ত্বিক রসায়ন, তরলের গঠন ও গতিবিদ্যা, নিউক্লিয় বিভাজন ও স্ব-সংযোজন এবং রাসায়নিক পদার্থবিদ্যা। বহু দেশি-বিদেশি জার্নালে তাঁর প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। আজীবন নিজে একাই স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে গবেষণা সন্দর্ভ লিখেছেন তিনি। তবুও তাঁর কয়েকটি যৌথ গবেষণামূলক প্রবন্ধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ২০০৪ সালে প্রকাশিত ‘মাল্টিপল টাইম-স্কেল বিহেভিয়ার অফ দ্য হাইড্রোজেন বণ্ড নেটওয়ার্ক ইন ওয়াটার’,

২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘এস্টিমেটিং দ্য এনট্রপি অফ দ্য লিকুইডস ফ্রম অ্যাটম টু অ্যাটম র‍্যাডিক্যাল ডিস্ট্রিবিউশন ফাংশানস : সিলিকা, বেরিলিয়াম, ফ্লুওরাইড অ্যাণ্ড ওয়াটার’ এবং ২০১১ সালে প্রকাশিত ‘এক্সেস এনট্রপি স্কেলিং অফ ট্রান্সপোর্ট প্রপার্টিস ইন নেটওয়ার্ক-ফর্মিং আয়োনিক মেল্টস’। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতে নারীর কম যোগদানের বিষয়ে প্রায়ই কথা বলতেন চারুসীতা। ঘরে ও বাইরে কাজের যে দ্বিমুখী চাপ নারীদের সহ্য করতে হতো তা নিয়েও বক্তব্য রাখতেন তিনি।

তিরিশ বছর বয়সে একজন পুরুষ যেমন শুধুমাত্র তাঁর কর্মজীবন নিয়েই বেশি ভাবতে পারেন, একজন নারীকে সেদিক থেকে তাঁর সন্তান ও সংসারের বিষয়েও মনোনিবেশ করতে হয়। এই দ্বিমুখী চাপ সামলিয়েই ২০০০ সালে কন্যা কীর্তিকে মানুষ করার পাশাপাশি গবেষণা করেছেন চারুসীতা চক্রবর্তী। তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বহু পুরস্কার ও সম্মান অর্জন করেছেন চারুসীতা চক্রবর্তী। ১৯৯৬ সালে ইণ্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি-র পক্ষ থেকে ইয়ং সায়েন্সটিস্টস মেডেল অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৬ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ইতালির ট্রিস্টিতে আবদুস সালাম ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স সংস্থায় কাজ করে গিয়েছেন চারুসীতা।

১৯৯৯ সালে বি. এম. বিড়লা সায়েন্স অ্যাওয়ার্ড এবং অনিল কুমার বোস মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। ২০০৩ সালে ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের পক্ষ থেকে তিনি স্বর্ণজয়ন্তী সদস্যপদ অর্জন করেন তিনি এবং ২০০৬ সালে তিনি ইণ্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের পক্ষ থেকেও একটি সদস্যপদ পান তিনি। ২০০৯ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতে সবথেকে সম্মানীয় শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কারে ভূষিত হন চারুসীতা চক্রবর্তী এবং ব্যাঙ্গালোরের জওহরলাল নেহেরু সেন্টার ফর কম্পিউটেশনাল মেটেরিয়াল সায়েন্স সংস্থার সহকারী সদস্য হন তিনি। ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ দিল্লিতে মাত্র ৫১ বছর বয়সে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চারুসীতা চক্রবর্তীর মৃত্যু হয়। 

আরো পড়ুন      জীবনী  মন্দির দর্শন  ইতিহাস  ধর্ম  জেলা শহর   শেয়ার বাজার  কালীপূজা  যোগ ব্যায়াম  আজকের রাশিফল  পুজা পাঠ  দুর্গাপুজো ব্রত কথা   মিউচুয়াল ফান্ড  বিনিয়োগ  জ্যোতিষশাস্ত্র  টোটকা  লক্ষ্মী পূজা  ভ্রমণ  বার্ষিক রাশিফল  মাসিক রাশিফল  সাপ্তাহিক রাশিফল  আজ বিশেষ  রান্নাঘর  প্রাপ্তবয়স্ক  বাংলা পঞ্জিকা