চতুর্মাস চলাকালীন কি করবেন ও কি করবেনা

চতুর্মাস চলাকালীন কি করবেন ও কি করবেনা

সনাতন ধর্মে (Hinduism) চতুর্মাস (Chaturmas) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী থেকে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথি পর্যন্ত চলে চতুর্মাস। এই বছরে চতুর্মাস শুরু হবে ১০ জুলাই দেবশায়নী একাদশী (Devshayani Ekadashi) থেকে। অর্থাৎ শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিকের কিছুদিন চতুর্মাস থাকে। এই সময় ভক্তি, তপস্যা, পবিত্র স্নান, ত্যাগ এবং দান করার উপযুক্ত সময়। তবে এই সময়কালে বিবাহ ও মাঙ্গলিক আচার পালন অশুভ বলে বিবেচিত হয়। জৈন (Jainism) ও বৌদ্ধ ধর্মেও (Buddhism) চতুর্মাসের তাৎপর্য রয়েছে। 

হিন্দুধর্ম অনুসারে দেবশায়নী একাদশী থেকে যোগ নিদ্রা যান শ্রীবিষ্ণু। চার মাস পর দেবোত্থনী একাদশীতে তাঁর ঘুম ভাঙে। এই চার মাস বিষ্ণু নিদ্রিত থাকায় বিশ্ব সংসার রক্ষা ও পালন করার ভার থাকে রুদ্র বা মহাদেবের উপরে।চতুর্মাসকে উপবাসের সময় হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। এই সময় রুদ্র বিশ্বসংসারের ভার নিজের কাঁধে রাখায় তাঁর সতর্ক দৃষ্টি থাকে সবকিছুর উপরে।

সেই কারণে এই সময় কোনও ধার্মিক ক্রিয়াকলাপ করলে তাঁর পূণ্যফল সহজেই মেলে বলে বিশ্বাস। রুদ্র সহজেই রেগে যান, আবার অল্পেই তুষ্ট হন। তাই খারাপ কাজ করলে তিনি যেমন শাস্তি দেন, তেমন ভালো কাজ করলে তাঁর আশীর্বাদ পেতেও বিলম্ব হয় না। তাই দানধ্যান ও ধার্মিক ক্রিয়াকলাপের জন্য চতু্র্মাস উপযুক্ত সময়।  

চতুর্মাস চলাকালীন কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এই সময় আমাদের হজম ক্ষমতা অনেকটা কমে যায়। এই সময় জলও দূষিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই চতুর্মাসে জল-জনিত অসুখ ও পেটের গোলমাল দেখা দিতে পারে। সবুজ পাতাওয়ালা শাকসবজিতে এই সময় পোকা লেগে যায়। তাই সেগুলি রান্না করার আগে খুব ভালো করে ধুয়ে নেওয়া জরুরি। চিকিত্‍সাশাস্ত্র অনুসারে এই সময় বর্ষাকাল চলায় অসুখ বিসুখের প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে যায়।

তাই এই সময় সহজপাচ্য খাবার ও নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।   চতুর্মাসে বিষ্ণু নিদ্রিত থাকেন। তাই কোনও শুভ অনুষ্ঠানে তিনি আশীর্বাদ করতে পারেন না বলে প্রচলিত বিশ্বাস। এই কারণে চতুর্মাস চলাকালীন বিয়ে বা উপনয়নের মতো শুভ অনুষ্ঠান করতে নেই। আর বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখলে বর্ষার সময় বাড়িতে কোনও শুভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে তাতে নানা বিঘ্ন ঘটতে পারে।

চতুর্মাসের এই চার মাস হল শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক। এই চার মাসে বিবিধ ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। গণেশ চতুর্থী, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, দুর্গাপুজো, নবরাত্রি, দশেরার মতো ধর্মীয় উত্‍সব এই সময় পালন করা হয়। পুরাণ অনুসারে দেবশায়নী একাদশীতে শ্রীবিষ্ণু পাতাললোকে রাজা বালির গৃহে যান। তার আগে বিশ্বসংসার পালনের দায়িত্ব রুদ্রর হাতে সমর্পণ করেন তিনি। অন্য একটি পুরাণ কাহিনি অনুসারে কয়েক হাজার বছর ধরে শঙ্খচূড়ের সঙ্গে যুদ্ধের পর ক্লান্ত হয়ে তিনি এই সময় যোগনিদ্রায় যান।