Coffee | বক্সা পাহাড়ে চাষে নতুন দিশা দেখাচ্ছে কফি

Coffee | বক্সা পাহাড়ে চাষে নতুন দিশা দেখাচ্ছে  কফি

শীত পড়লেই বক্সা পাহাড়ের কমলার জন্য মন আনচান করে ডুয়ার্সবাসীর। পাশাপাশি আদা, গোলমরিচ, সুপারির চাষেও নাম আছে বক্সার। কিন্তু এসব কিছুকে ছাপিয়ে বক্সা পাহাড়ে এখন সুবাস ছড়াচ্ছে  কফি Coffee। বক্সার মতো রুক্ষ মাটিতেও যে কফি চাষ হয় তার দিশা দেখাচ্ছেন সেনজো ডুকপা। সেনজোর লাগানো গাছে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে Coffee কফি ফলছে। তিনি নিজেই ওই কফি গুঁড়ো করে পানীয় হিসেবে গ্রামবাসীদের খাওয়াচ্ছেন। Coffee কফি গুঁড়ো করার গন্ধ পেয়ে অন্যরাও জানতে পারছেন বক্সা পাহাড়ের এই অমূল্য রতনের কথা।

সেনজোকে দেখে বক্সা পাহাড়ের অন্য বাসিন্দারাও এখন কফি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। উত্তরবঙ্গ সংবাদের মাধ্যমে বক্সায় কফি চাষের খবর জানতে পেরে তা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই)-এর উত্তরবঙ্গ জোনের কর্তারাও। সংগঠনের অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং-এর চেয়ারম্যান মান্না চৌধুরী দারুণ উৎসাহিত। বলছেন, ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার কালিম্পং পাহাড়ে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ কফি বীজের প্যাকেট চাষিদের বিলি করেছে। সেখানে একটি হাব গঠন করা হয়েছে।

বক্সার মানুষ গোষ্ঠীগতভাবে কফি চাষ করতে চাইলে আমরা সব ধরনের সাহায্য করব। বীজ বণ্টন থেকে শুরু করে মার্কেটিং, সব ক্ষেত্রেই সহযোগিতার হাত বাড়িতে দিতে প্রস্তুত। - Advertisement - বক্সা ফোর্টেই বাড়ি কৃষক সেনজো ডুকপার। বিভিন্ন সময় তিনি কমলা, আদা, গোলমরিচ চাষ করেন। এমনকি পশুপালনের সঙ্গেও তিনি যুক্ত। তবে করোনাকালে চাষাবাদেও মন্দা নেমে আসে। এমনকি তাঁর কমলা বাগানেও পাঁচ-ছয় বছর ধরে তেমন ফলন হচ্ছিল না। এই অবস্থায় বিকল্প চাষের ভাবনা মাথায় আসে তাঁর।

যেমন ভাবনা, তেমনই কাজ। বছর তিনেক আগে দার্জিলিংয়ের এক আত্মীয়ে কাছ থেকে কিছু কফির বীজ এনেছিলেন তিনি। বাড়ির কমলা গাছের পাশেই বীজগুলি লাগিয়ে দেন। পরিচর্যাও করেছেন নিয়মিত। এখন ওই কফি গাছগুলিতেই  ফলন এসেছে। সবকয়টি গাছেই ঝাঁক ধরে কফি ফলেছে। সেনজোর এই কফির ফলন দেখতেই এখন লেপচাখা, তাসিগাঁও, আদমা সহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা আসছেন।

নিজের গাছের ফলা কফির বীজ গুঁড়ো করে দিচ্ছেন বাসিন্দাদের। কুয়াশামাখা সকালে সেনজোর কফি খেতে এখন অনেকেই তাঁর বাড়িতে ভিড় করছেন। সেনজোর কথায়, আমার কফি গাছ দেখে এখন গ্রামের অনেকেই কফি চাষ করতে চাইছেন। সরকারি সাহায্য পেলে আমরা বক্সায় কফি চাষ করতে প্রস্তুত। আলিপুরদুয়ার মহকুমা উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিক সন্দীপন মোহান্তি বলছেন, বক্সায় কফি চাষের কথা শুনেছি। খুব ভালো ফলন হয়েছে। তবে কফির বিষয়টি দেখার জন্য আলাদা বোর্ড রয়েছে।

যদি আমাদের কাছে কেউ টেকনিকাল সাপোর্ট চান তাহলে অবশ্যই তা দেব। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকার কালিম্পং পাহাড়ের আলগাড়া, লোলে, ভালুকপ প্রভৃতি গ্রামে কফি চাষে উত্সাহ দিচ্ছে। সেখান থেকে দার্জিলিং পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামেও কফি চাষ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাহাড়ের গ্রামের ছোট ছোট জমি মালিকদের একত্রিত করে কফি চাষে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

কফির বাণিজ্যিকীকরণের লক্ষ্যে চাষিদের নিয়ে কোঅপারেটিভ বানানো হয়েছে। পুরো কাজটি সিআইআই দেখাশোনা করছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কালিম্পংয়ে মতো আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা পাহাড়েও কফি চাষের অনুকূল জলবায়ু ও মাটি রয়েছে। তাই বক্সা পাহাড়েও উন্নতমানের কফি চাষ সম্ভব।

ম্যাক ইউলিয়াম হাইস্কুলের ভূগোলের শিক্ষক শংকর সাহার বক্তব্য, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ ফুট উচ্চতার যে কোনও জমিতে কফি চাষ সম্ভব। এছাড়াও পাহাড়ি উপত্যকা, ঝরনার পাশের জমিতেও কফি লাগানো সম্ভব। সঙ্গে বৃষ্টিও দরকার। এই সবই আছে বক্সা পাহাড়ের গ্রামগুলিতে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বক্সা পাহাড়ের অর্থনৈতিক উন্নতিতে দিশা দেখাতে পারে কফি চাষ। স্বাভাবিকভাবেই কমলার পর এবার বক্সা পাহাড়ের কফির স্বাদ পেতে মুখিয়ে রয়েছেন উত্তরের কফিপ্রেমীরা।