কমিউনিস্ট চীন ও ইসলামিক তালেবানে নতুন সমীকরণ

কমিউনিস্ট চীন ও ইসলামিক তালেবানে নতুন সমীকরণ

পাকিস্তানের মাধ্যমে বেশ কিছুদিন ধরেই চীন তালেবানের সাথে তলে তলে যোগাযোগ রক্ষা করছে, কিন্তু এই প্রথম এত উঁচু মাপের কোন তালেবান নেতা চীন সফরে গেলেন। এবং এই সফর এমন সময় হচ্ছে, যখন কিছুদিন আগেই তালেবান চীনের সীমান্তবর্তী আফগান প্রদেশ বাদাকশানের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলো কব্জা করেছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে তালেবান।

দেশটির ৮৫ শতাংশ নিজেদের দখলে নেওয়ার দাবি করছে সংগঠনটি। যে গতিতে তালেবান আফগানিস্তানের অধিকাংশ জায়গায় নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে চলেছে তাতে কাবুল দখলে নিতে সংগঠনটির খুব একটা বেগ পেতে হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুরোপুরি ক্ষমতা দখলের পর নিজেদের ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনাও ঠিক করে নিয়েছে তালেবান। চলতি সপ্তাহের শুরুতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে চীনের বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হবে বলে হংকং ভিত্তিক চায়না মর্নিং পোস্টকে জানিয়েছিল তালেবানের মুখপাত্র। তালেবান নেতার এই সফরের চারদিন আগে আফগান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করতে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমন্ত্রণ করেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশীকে।

চেংডু শহরে দুই মন্ত্রীর দীর্ঘ বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয় যে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে চীন ও পাকিস্তান যৌথভাবে কাজ করবে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, "আফগানিস্তানে যেকোন অস্থিতিশীলতার প্রভাব প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানে সরাসরি গিয়ে পড়বে।

aajbangla.in

ফলে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা অত্যন্ত প্রয়োজন।" আফগানিস্তানে নতুন করে কোন গৃহযুদ্ধ যাতে শুরু না হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে এবং আফগান বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মীমাংসা আলোচনায় সাহায্যের জন্য পাঁচ-দফা একটি কর্মপরিকল্পনা চেংডুর ওই বৈঠক থেকে ঘোষণা হয়। অগাস্টের মধ্যেই মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণার পর আফগানিস্তান নিয়ে সমস্ত প্রতিবেশী দেশগুলো অনিশ্চয়তা-উদ্বেগে ভুগছে।

নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে সবাই এখন সচেষ্ট। তবে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি তত্‍পর হয়ে উঠেছে চীন। বেইজিংয়ের দীর্ঘমেয়াদী আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান। চলতি বছরের মে মাসেই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান জানিয়েছিলেন,

আফগানিস্তানের সাথে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) সম্প্রসারণের জন্য ইসলামাবাদ ও কাবুলের সঙ্গে আলোচনা করেছে চীন। এমনকি তিন দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

চীন তালেবানের ব্যাপারে একেবারে বিরূপও নয়। ২০১৯ সালে বেইজিংয়ে শান্তি আলোচনায় সংগঠনটিকে স্বাগতও জানিয়েছিল চীন। এদিকে, চীনের জিনজিংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর সরকারের নিপীড়নের পরও দেশটির বন্ধু হতে মরিয়া ইসলামি সংগঠন তালেবান। চলতি মাসের শুরুতে তালেবানের এক মুখপাত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছিলেন,

মুসলমানদের উপর অত্যাচারের ব্যাপারে অবশ্যই আমরা চিন্তিত। তবে চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আমরা হস্তক্ষেপ করবো না। অন্যদিকে, চীনের প্রতি তালেবানের মনোভাবের ব্যাপারে পাকিস্তানের আইন প্রণেতা পাকিস্তান-চীন ইনস্টিটিউটের প্রধান মুশাহিদ হুসাইন বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে তালেবান বর্তমানে অনেক বেশি ‘নমনীয় আর বাস্তববাদী’।

ইসলামপন্থী সংগঠনটি চীনকে আফগানিস্তানের জন্য ‘বিশ্বাসযোগ্য স্টেকহোল্ডার’ হিসেবে দেখছে। ক্ষমতায় গেলে আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা স্থাপন এবং পুনর্গঠনে তালেবানের চীনের সহযোগিতা দরকার হবে। চীনের বিরাগভাজন হওয়া তালেবানের জন্য সুফল বয়ে আনবে না বলেও জানান মুশাহিদ।

অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানকে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বি আর আই) প্রকল্পে যুক্ত করার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছে চীন। সেই সাথে, আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদের ওপর চীনের লোভ রয়েছে বলে অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক মনে করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা র‌্যান্ড কর্পোরেশনের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান এ মাসের গোঁড়ার দিকে তার এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, "চীন নীরবে আফগানিস্তানে তাদের স্বার্থ রক্ষায় তত্‍পরতা শুরু করেছে। " তিনি লিখেছেন: চীন এরই মধ্যে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (সিপেক) সাথে আফগানিস্তানকে যুক্ত করার কথা বলছে।

পেশোয়ার এবং কাবুলের মধ্যে একটি মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কাবুল সরকারের সাথে বছর দু'য়েক ধরে কথা বলছে চীন, যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ হবে এই ভয়ে আফগান সরকার তাতে সায় দেয়নি। তাছাড়া, শিনজিয়াং প্রদেশের ওয়াকান করিডোর দিয়ে আফগানিস্তানের সীমান্ত পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করছে চীন।

 তবে কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, আফগানিস্তানে সরাসরি অর্থনৈতিক এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের চেয়ে আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা এখন চীনের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। "আফগানিস্তান এখন আর চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের জন্য অতি আবশ্যক নয়।

মধ্য এশিয়ায় ঢোকার জন্য বা তাদের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য আফগানিস্তানকে চীনের খুব বেশি প্রয়োজন নেই। পাকিস্তান এবং ইরানের সাথে চুক্তি করে সেই লক্ষ্য তারা হাসিল করছে।"চীনের এখন প্রধান চিন্তা যে আফগানিস্তানে যেকোন অরাজকতা হয়তো পাকিস্তানে এবং ইরানে তাদের শত শত কোটি ডলারের প্রকল্প - যা ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বিকল্প একটি বাণিজ্য রুট - হুমকিতে ফেলতে পারে।

২৪শে জুলাই বৈঠক করেন শাহ মাহমুদ কোরেশী এবং ওয়াং ই - পরে এক বিবৃতিতে বলা হয়, আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পাকিস্তান ও চীন যৌথভাবে কাজ করবে সাগর তীরবর্তী গোয়াদার গভীর সমুদ্র বন্দর এবং সেখান থেকে চীন পর্যন্ত একটি জ্বালানি পাইপলাইন বসানোসহ পাকিস্তানে ডজন ডজন অবকাঠামো প্রকল্পে চীন ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০ বিলিয়ন (৬,০০০ কোটি) ডলার ব্যয় করবে।

সেই সাথে, চীন ইরানের সাথে একটি চুক্তি করেছে যার আওতায় তারা বন্দর আব্বাসের আধুনিকায়ন এবং সম্প্রসারণসহ সেদেশের একগাদা অবকাঠামো এবং জ্বালানি প্রকল্পে আগামী ২৫ বছরে ৪০০ বিলিয়ন (৪০,০০০ কোটি) ডলার বিনিয়োগ করবে।

ফলে, পাকিস্তান এবং ইরানের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা চীনের কাছে এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চীনের ভয় হলো যে আফগানিস্তানে নতুন কোনও অস্থিতিশীলতার ধাক্কা ও দুই দেশে গিয়ে পড়তে বাধ্য। আফগানিস্তানের সঙ্গে চীনের যে ৯০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, তার ঠিক ওপাশেই রয়েছে উইগুর মুসলিম অধ্যুষিত চীনা প্রদেশ শিনজিয়াং।

উইগুর বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ইস্ট তুর্কেস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (এটিম) অনেক বছর ধরে এই সীমান্ত এলাকায় তত্‍পর। সীমান্ত পেরিয়ে তারা আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আশ্রয়-প্রশ্রয় পায়, এবং চীন বিশ্বাস করে পাকিস্তানে বিভিন্ন সময়ে চীনা নাগরিক এবং চীনা প্রকল্পে হামলার পেছনে এটিমের হাত রয়েছে।

জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, এটিমের সাড়ে তিন হাজার সক্রিয় যোদ্ধা রয়েছে, যাদের সাথে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে তত্‍পর কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যোগাযোগ রয়েছে। "এ কারণে তালেবানকে চীন বলছে, আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতায় তাদের বৈধতা চীন মেনে নেবে, আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে তারা তালেবানকে সাহায্য করবে, কিন্তু বদলে এটিম-সহ অন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।

 চীনা সরকারের মুখপত্র হিসাবে পরিচিত গ্লোবাল টাইমস সংবাদপত্র বলছে, তিয়ানজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তালেবান নেতা মোল্লাহ বারাদারের সাথে বুধবারের বৈঠকে ওয়াং ই তালেবানের কাছে দাবি করেছেন যে এটিম এবং অন্য সব সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে, এবং এসব গোষ্ঠী যাতে আফগানিস্তানে ঘাঁটি না গাড়তে পারে ,তা নিশ্চিত করতে হবে।

গ্লোবাল টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, মোল্লাহ বারাদার বৈঠকে চীনা মন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করে চীনের বিরুদ্ধে কাউকে কোনও তত্‍পরতা তালেবান চালাতে দেবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তালেবানের ওপর এত ভরসা কেন করছে চীন? তারা কি ধরেই নিচ্ছে যে তালেবানই আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসতে চলেছে?

বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান লিখেছেন, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে চীন আফগানিস্তানে জাতীয় আপোষ-মীমাংসার সমর্থন করছে, কিন্তু তারা আফগানিস্তানের ভবিষ্যত্‍ শাসক হিসাবে তালেবানকে বিবেচনা করতে শুরু করেছে। তবে শুধু চীন নয় বাকি বিশ্বও এক রকম নিশ্চিত যে তালেবানই আফগানিস্তানের ক্ষমতা নিচ্ছে বা অন্তত ক্ষমতার প্রধান শরীক হতে চলেছে।খোদ আমেরিকাও সেটা মেনে নিয়েছে।

আমেরিকা নিজেই ক'বছর আগে তালেবানের সাথে মীমাংসা শুরুর জন্য জালমে খালিলজাদকে দোহায় পাঠিয়েছে। ২০ বছর ধরে যুদ্ধের পর আমেরিকা বুঝেছে, যুদ্ধ করে তালেবানকে হারানো যাবে না এবং তারা মেনে নিয়েছে তালেবানই আফগানিস্তানের প্রধান শক্তি।" কিন্তু প্রশ্ন হলো, কট্টর সুন্নী একটি গোষ্ঠীর সাথে কমিউনিস্ট চীনের আস্থার সম্পর্ক কীভাবে সম্ভব? অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ২০ বছর আগে আল কায়েদাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া তালেবানের তুলনায় এখনকার তালেবান অনেক বাস্তববাদী।

তারা সমর্থনের জন্য মস্কোতে গিয়ে রাশিয়ার সাথে কথা বলেছে। এমনকি কট্টর সুন্নী ওয়াহাবী-পন্থী হয়েও তালেবান নেতারা শিয়া ইরানের সাথে কথা বলেছেন এবং ইরানের সমর্থন সহানুভূতি আদায়ে সক্ষম হয়েছেন বলেও জোর ইঙ্গিত রয়েছে। আবার তলে তলে ভারতের সাথেও তালেবানের কথা হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে একাধিক খবর বেরিয়েছে।

তালেবানকে নিয়ে চীনের ভরসা হয়তো সেখানেই। এছাড়া, তালেবানের ওপর ঘনিষ্ঠ মিত্র পাকিস্তানের প্রভাবও চীনের ভরসার আরেকটি কারণ। একই সাথে, তালেবানও বুঝতে পারছে যে ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং আফগানিস্তানে পুনর্গঠনে তাদের কাড়ি কাড়ি টাকা দরকার হবে এবং সেই টাকা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র চীনের।

ফলে এখন চীনের আস্থা অর্জন ছাড়া তাদের সামনে কোন বিকল্পও নেই।  ভারতও চায়, আগামী দিনে সে দেশে ক্ষমতার অলিন্দে যারাই পদচারণ করুক, তারা যেন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তা হাসিল করে, হিংসার মাধ্যমে নয়। পাশাপাশি কুড়ি বছর ধরে সে দেশের পুনর্গঠনে ভারত যেভাবে অংশ নিয়েছে, ৩৪টি প্রদেশে চার শতাধিক প্রকল্পে যে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, তা যেন সুরক্ষিত থাকে। 

সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ভারতকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করার পাশাপাশি ঘোর আঞ্চলিক অনিশ্চয়তাও সৃষ্টি করেছে। চীন-রাশিয়াও উৎকণ্ঠিত, যদিও কিছুটা প্রসন্নও। প্রসন্নতার কারণ, তাদের কাছে এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও একটা পরাজয়। যুক্তরাষ্ট্রের উসকানির কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটা সময় আফগানিস্তান থেকে দেশে ফিরতে হয়েছিল পরাজিতের তকমা কপালে সেঁটে।

মস্কো সেটা ভোলেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও একই হাল হওয়ায় বিষয়টা তাদের কাছে এখন শোধবোধের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেইজ্জতি চীনকেও খুশি করেছে, যেহেতু, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনকে রুখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টার অন্ত নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসম্মান একইভাবে খুশি করেছে তাদের হাতে কোণঠাসা ইরানকেও।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সিদ্ধান্তে স্বস্তির শ্বাস নিচ্ছে পাকিস্তান, যারা মনে করে মার্কিন বাহিনীর পিছু হটা তাদের সামরিক জয় এবং আফগানিস্তানে তাদের উপস্থিতি নিষ্কণ্টক করবে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশির সদর্প ঘোষণা, পৃথিবীর কোনো শক্তিরই পাকিস্তানকে অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়।

সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ বলেছেন, চার দশক ধরে বিশ্বের কাছে পাকিস্তানকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করে চলেছে ভারত। আফগানিস্তানের সম্ভাব্য পালাবদলের সন্ধিক্ষণে রাশিয়ার চেয়ে বেশি সক্রিয় চীন। ব্রিটেন, রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেশিশক্তি যা পারেনি, চীনের অর্থশক্তি তা পারবে কি না, সেটা নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জল্পনা ও আশার বুদ্‌বুদ।

একসময় সোভিয়েতের অঙ্গ থাকা তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তানের মতো দেশের এই মুহূর্তের চাহিদা চীন ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে আফগানিস্তানকে রাজনৈতিক স্থিতিশীল করে তোলা। চীনও এই সুযোগই কাজে লাগাতে চায়।

লক্ষ্য ‘চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’কে আফগানিস্তানে প্রসারিত করা। তারা চিন্তিত উইঘুর মুসলমানদের জঙ্গি মনোভাবে তালেবান উসকানি নিয়ে। এই আশঙ্কা রাশিয়ার পাশাপাশি ইরানেরও। দুশানবে সম্মেলনে আফগানিস্তানের জন্য চীন তাই সংযমের একটা গণ্ডি টেনে দিয়েছে। তবে পূর্ণ ক্ষমতাপ্রাপ্তির পর তালেবানের নতুন নেতৃত্ব কতটা সংযমী থাকবে, সে উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে।