Cuba| সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল কিউবা

সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে কিউবা। স্থানীয় সময় রবিবার দেশটিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ–ক্যানেলের পদত্যাগ দাবি করে।কয়েক বছর ধরে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে কিউবা। করোনা মহামারিতে পর্যটন খাত পুরোপুরি বন্ধ থাকায় তা আরও জোরদার হয়েছে। দেশটির সরকারের দাবি, করোনা মহামারি ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, চলমান সংকটের মূলে রয়েছে এই দুটো বিষয়। এসব কারণে গত বছর দেশটির অর্থনীতি ১০ দশমিক ৯ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। আর চলতি বছরের শুরু থেকে জুন পর্যন্ত এই হার ২। অর্থনৈতিক চাপ দেশটিতে খাবার, জ্বালানির মতো নিত্যপণ্যের সংকট তৈরি করেছে।
রাজধানী হাভানা থেকে সান্তিয়াগো, বেশ কয়েকটি বড় শহরে সরকারবিরোধী মিছিল হয়েছে। এসব মিছিলে হাজারো মানুষ যোগ দেয়। কয়েক দশকের মধ্যে এটাই কিউবায় সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ আর অর্থনৈতিক সংকট বেড়ে যাওয়া নিয়ে কিউবার জনগণের ক্ষোভ বাড়ছিল। বিশেষত, নিত্যপণ্যের ঘাটতি, নাগরিক অধিকার খর্ব হওয়া ও মহামারির লাগাম টানতে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার অভিযোগ দেশটির জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে, যার বহিঃপ্রকাশ এই বিক্ষোভ। রাজধানীর হাভানার ঐতিহসিক কেন্দ্রস্থলসহ শহরজুড়ে মিছিল হয়েছে। এ সময় জাতীয় পতাকা হাতে বিক্ষোভকারীরা মিছিল করে। ‘দিয়াজ–ক্যানেল পদত্যা। সরকারবিরোধী বিরল বিক্ষোভের পরদিন সোমবার কিউবার রাজধানী হাভানাসহ বিভিন্ন শহরের সড়ক শান্ত থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে কিউবায় সরকারবিরোধী এই বিক্ষোভের জেরে অন্তত ১০০ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ঘিরে হাভানায় নিরাপত্তা বাহিনীর স্পেশাল ফোর্সের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। মেশিনগান নিয়ে তাঁরা শহরে টহল দিচ্ছেন। বিশৃঙ্খলা এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ। যদিও করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আগে থেকেই শহরটিতে রাত্রিকালীন কারফিউ চলছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ছোট ছোট কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে হাভানায় পিপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ। আটক করা হয়েছে কয়েকজনকে।
হাভানায় পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লাতিন আমেরিকার ইতিহাসের সহকারী অধ্যাপক মাইকেল বুস্তামান্তে বলেন, ‘১৯৯৪ সালের পরে কিউবায় এত বড় পরিসরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়নি। শুধু রাজধানীতে নয়, পুরো কিউবায় বিক্ষোভ হয়েছে।’ দিয়াজ–ক্যানেল কিউবার প্রেসিডেন্টের ও কমিউনিস্ট পার্টিরও প্রধান। রাউল কাস্ত্রোর উত্তরসূরি হিসেবে ২০১৯ সালে কিউবার প্রেসিডেন্ট হন তিনি। কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হন চলতি বছরের এপ্রিলে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিউবার মতাদর্শিক বিরোধ চলে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটির বিরুদ্ধে চলমান নিষেধাজ্ঞা জোরদার করেছে ওয়াশিংটন।
চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ–ক্যানেল। রবিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীদের অনেকেই সচেতন। তবে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থকদের প্রচারে প্রভাবিত হয়েছেন। তিনি সতর্ক করে আরও বলেন, কোনো উসকানি সহ্য করা হবে না।