দার্জিলিং | সৌন্দর্যে মোড়া ভ্রমণ কেন্দ্র Darjiling

দার্জিলিং  |  সৌন্দর্যে মোড়া ভ্রমণ কেন্দ্র  Darjiling

পশ্চিমবঙ্গের অধীনস্থ  Darjiling দার্জিলিং জেলাটি হল সৌন্দর্যে মোড়া। এই জেলার সৌন্দর্য নিয়ে যতই বলা হবে কম বলা হবে। Darjiling দার্জিলিং পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শৈলশহর হওয়ায় শৈল শহরের রানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সমুদ্র পৃষ্ঠ ৬৭০০ ফুট উচ্চতায় এই শহর অবস্থিত। দার্জিলিং জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ব্রিটিশ রাজত্বের সময় থেকে। পূর্বে দার্জিলিং ছিল প্রাচীন গোর্খা রাজধানী। পরবর্তীকালে সিকিমের রাজা দার্জিলিং উপহার হিসেবে ব্রিটিশদের দেন। এখানকার বহু স্থান পর্যটকদের মুগ্ধ করে তুলেছে। 

ধুলোধোঁয়া মাখা নগরের বাসিন্দাদের কাছে দার্জিলিং একটি প্রিয় বিশ্রামের স্থান। ভ্রমণ প্রিয় মানুষ, ট্রেকার, পক্ষিবিজ্ঞানী, চিত্রগ্রাহক, উদ্ভিদবিজ্ঞানী কিংবা শিল্পী -- সকলের কাছেই দার্জিলিং এমন একটা বেড়ানোর জায়গা, যা তাদের স্মৃতিতে অক্ষয় হয়ে থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৭১০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত দার্জিলিঙের ম্যাল থেকে তুষারধবল কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য বিস্মিত করে। রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনে সক্কাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দৃশ্যমান থাকে সপরিবার কাঞ্চনজঙ্ঘা। দার্জিলিং অঞ্চলের শীর্ষতম স্থান (৮৪৮২ ফুট), শহর থেকে ১১ কিমি দূরে টাইগার হিল থেকে সূর্যোদয়ের স্মৃতি ভোলার নয়।

২৯৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত টাইগার হিল।  এটি দার্জিলিং থেকে ১১ কিমি দূরে অবস্থিত। এই স্থান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য বিস্তারিতভাবে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সূর্যদয়ের সময় কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর গুলি আলোকিত হয়ে এটির সৌন্দর্যকে বহু গুনে বাড়িয়ে দেয়। এই সৌন্দর্য দেখার টানে বহু পর্যটক টাইগার হিলে এসে উপস্থিত হন। 

দার্জিলিংয়ের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হল পদ্মাজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্ক। দার্জিলিং এ ৬৭.৫৬ একর স্থানজুড়ে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানা। ২১৩৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থানের কারণে ভারতের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত চিড়িয়াখানা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই চিড়িয়াখানাটি ১৯৫৮ প্রথম সালে চালু করা হয়। চিড়িয়াখানাটিতে পাহাড়ী অঞ্চলের প্রাণী স্নো লেপার্ড, হিমালয় অঞ্চলের বিপন্ন প্রজাতির নেকড়ে এবং লাল পান্ডা প্রভৃতি প্রাণী দেখা যায়। এই পার্কটির নাম সরোজিনী নাইডুর মেয়ে পদ্মাজা নাইডু এর নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে। 

দার্জিলিং ধর্মীয় স্থান রুপে উল্লেখযোগ্য হল এখানকার ধীরধাম মন্দির। এটি হল একটি হিন্দু মন্দির। এই মন্দির পরিসীমাকে হিন্দু দেবতা ভগবান শিবের বাসভূমি বলে মানা হয়। এটি দার্জিলিংয়ের সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির হিসেবে মানা হয়। নেপালের রাজা পূর্ণ বাহাদুর দ্বারা ১৯৩৯ সালে এই মন্দির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। এই মন্দিরের পিছন থেকে পাহাড় ও উপত্যকার একটি সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। 

দার্জিলিংয়ের আরেকটি সুন্দরতম স্থান রক গাডেন। দার্জিলিং থেকে ১০ কিমি দূরে অবস্থিত এই স্থান। পুরো জায়গাজুড়ে বিভিন্ন স্তরে পাথরের সমাহার থাকায় এই স্থানের নামকরণ করা হয়েছে রক গাডেন। পাহাড়ের কোলঘেঁষে রয়েছে সুন্দর জলপ্রপাত। এই পাহাড়ে উপর দিয়ে ওঠার জন্য পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে সিঁড়ি। 

 স্কটল্যান্ডের পৃষ্ঠপোষক সন্তের নামানুসারে সেন্ট অ্যান্ড্রুজ চার্চের নামকরণ করা হয়। দার্জিলিংয়ের  ১৮৪৪ সালের অক্টোবরে চার্চটির প্রথম পবিত্র সেবা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮৬৭ এর বিধ্বংসী বজ্রপাতের পরে, সমস্ত পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছিল, যেহেতু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ স্টিপল ভবনটিকে অনিরাপদ করে তুলেছিল।

দার্জিলিংয়ের দ্বিতীয় সবচেয়ে পুরনো চা বাগান হল হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান। ১৮৫৪ সালে হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান চালু হয়। দার্জিলিং শহরের ৩ কিলোমিটার দূরে এই চা বাগানটি অবস্থিত। দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিক ও কর্মচারী এখানে চা বাগানের কাজে নিযুক্ত থাকে। ২০০৮ সালে হ্যাপি ভ্যালি চা বাগানের হ্যান্ড-রোলড চা যুক্তরাজ্যের হ্যারোডসে বিক্রির জন্য নির্বাচিত হয়।

ভ্রমণকেন্দ্র ছাড়া ও এখানকার উল্লেখযোগ্য বিষয় হল পৃথিবী বিখ্যাত টয়ট্রেন। যা দেখার জন্য বহু পর্যটক এসে উপস্থিত হয়। আকাশপথে এখানকার কাছের এয়ারপোর্ট বাগডোগরা। শিলিগুড়ি থেকে নিয়মিত বাস সংযোগ ব্যবস্থা বর্তমান। নিউ জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি এখানকার নিকটস্থ রেল-স্টেশন। 

‘রয় ভিলা’ দার্জিলিঙের লেবং কার্ট রোডের ওপর একটি বাড়ি। এখানে ভগিনী নিবেদিতা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। ‘নৌকো ডুবে যাচ্ছে, কিন্তু আমি সূর্যোদয় দেখতে পাচ্ছি’- এটাই ছিল তাঁর শেষ কথা। তাঁর মৃত্যুর সময় ড‌ঃ নীলরতন সরকার, বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু, তাঁর স্ত্রী লেডি অবলা বসু, বিজ্ঞানী বশীশ্বর সেন এই বাড়িতেই ছিলেন।

১৯৫৪ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত এই বাড়িতেই হিমালয়্যান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টটিউটের দফতর ছিল। ২০১৩ সালের ১৬ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য্য় রয় ভিলা রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী এই বাড়ির চাবি মিশনের হাতে তুলে দেন ২০১৪ সালের ১০ জুলাই। বর্তমানে মিশন সেখানে গরিব শিশুদের সামগ্রিক বিকাশের একটি প্রকল্প চালাচ্ছে। এছাড়াও এখান থেকে দুঃস্থ বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধা ও স্থানীয় গরিবদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, গরিব মেধাবী শিশুদের বৃত্তিও প্রদান করা হয়ে থাকে।

পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিকাল পার্ক   এই চিড়িয়াখানায় রেড পান্ডা, স্নো লেপার্ড, তিব্বতীয় নেকড়ে সহ পূর্ব হিমালয়ের প্রচুর বিপদগ্রস্ত ও বিলুপ্ত পক্ষী ও প্রাণীদের দেখতে পাওয়া যায়।

ধীরধাম মন্দির   এটি কাঠমান্ডুর বিখ্যাত পশুপতিনাথ মন্দিরের অনুরূপ।

বেঙ্গল ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়াম   এই জাদুঘর গাছপালা ও পশুপাখিদের প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্দরে প্রবেশ করায়।

লাওডস্ বোটানিকাল গার্ডেন  এই উদ্যানে অর্কিড, রডোডেনড্রন, ম্যাগনোলিয়া, প্রিমুলা, ফার্ন সহ নানা জাতের হিমালয়ান উদ্ভিদ পাওয়া যায়।

লেবং রেস কোর্স   এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট এবং সর্বোচ্চ রেস কোর্স।

ঘুম বৌদ্ধ মনেস্ট্রি  এটি এই অঞ্চলের সর্ববৃহৎ মনেস্ট্রি।

অবজারবেটরি হিল   ধীরধাম মন্দির এবং বৌদ্ধ সংরক্ষণালয় এই পর্যবক্ষেণ পাহাড়ের উপর অবস্থিত।