ধরমপাল গুলাতি এর জীবনী

ধরমপাল গুলাতি এর জীবনী

ধরমপাল গুলাতি (Dharampal Gulati) যিনি মহাশয় ধরমপাল গুলাতি নামেই বেশী পরিচিত, একজন ভারতীয় ব্যবসায়ী যিনি এম.ডি.এইচ (MDH) মশলার প্রতিষ্ঠাতা এবং সি ই ও (CEO) ছিলেন। চটজলদি মশলা নির্মানে অগ্রণী ভূমিকার জন্য তাঁকে ‘মশলার রাজা’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।  ১৯২৩ সালের ২৭ মার্চ শিয়ালকোটে (অধুনা পাকিস্তানে) ধরমপাল গুলাতির জন্ম হয়।

তাঁর বাবা চুনিলাল গুলাতির মহাসিয়ান ডি হাট্টি নামে একটি মশলার দোকান ছিল যেটি ডেগগি মির্চ ওয়ালে নামেও পরিচিত ছিল। ১৯৩৩ সালে দশ বছর বয়সে গুলাতি স্কুল ছুট হওয়ার পরে তিনি ছুতার বৃত্তি, চাল ব্যবসা,লোহা লক্কড় বিক্রি ইত্যাদির কাজ করার পর  গুলাতি  তাঁদের পারিবারিক মশলা ব্যবসায় মন দেন। শিয়ালকোটে তাঁর বাবার মশলার দোকানে নিযুক্ত হওয়ার পর, গুলাতি তাঁদের ব্যবসাকে পাঞ্জাবের লাহোর, শেখুপুরা, নানকানা সাহিব, লায়াল্লাপুর, মূলতানে সম্প্রসারিত করেন।সেইসময়েই তাঁদের মশলার ব্যবসা থেকে দৈনিক ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার আয় হত।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তাঁদের পরিবারকে একরকম বাধ্য হয়েই শিয়ালকোট থেকে চলে এসে তাঁরা ভারতের অমৃতসরে এক উদ্বাস্তু ক্যাম্পে কিছু সময়ের জন্য আশ্রয় নেয়। এরপর তাঁর দিদির সঙ্গে থাকার জন্য গুলাতি তাঁর পরিবারসহ নতুন দিল্লীর পৌঁছন। সেখানে তিনি ৬৫০টাকায় একটি টাঙ্গা কিনে নতুন দিল্লী রেল স্টেশন, কুতুব রোড এবং করল বাগের আশেপাশে তা চালিয়ে দিন গুজরান করতে থাকেন।

ধরমপাল গুলাতি এরপর ১৯৫৮ সালে তাঁর বাবার মশলার দোকানকে নতুন ভাবে শুরু করার উদ্দেশ্যে নতুন দিল্লীর করলবাগে একটি ছোট দোকান স্থাপন করেন এবং সে দোকানটির নামও তিনি রাখেন মহাসিয়ান ডি হাট্টি তিনি জনপ্রিয় দৈনিক সংবাদপত্র প্রতাপ-এ বিজ্ঞাপন দেন তাঁর দোকানের পরিচিতি বাড়াতে।  ধরমপাল গুলাতি এরপর দ্বিতীয় দোকানটি খোলেন চাঁদনী চকে। এরপর তিনি ১৯৫৯ সালে নতুন দিল্লীর কীর্তি নগর অঞ্চলে জমি কেনেন এবং মশলা তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন।সে সময় অধিকাংশ ভারতবাসীই মশলা ঘরে বেঁটে তৈরি করতেন।

গুলাতিই প্রথম ভারতবর্ষে চটজলদি মশলার ধারনার পথিকৃৎ ছিলেন। তাঁর কোম্পানী ১৯৬৫ সালে এম.ডি.এইচ (MDH) নামে স্বীকৃত হয়। এম.ডি.এইচ কোম্পানীর বৃদ্ধির জন্য গুলাতির অবদান অনস্বীকার্য। ১৮টি মশলা তৈরীর কারখানা সহ লভ্যংশ হিসেবে ২০১৮ সালে ১০৯৫ কোটি টাকা আয় করে তাঁর কোম্পানি। এর আগের বছর ধরমপাল গুলাতি ছিলেন ভারতবর্ষের সর্বাধিক বেতনভূক সি ই ও যাঁর বেতন ছিল ২১ কোটি টাকার ওপরে।

এই সময়কালে তিনি ভারতবর্ষে শিল্পোদ্যোগে ব্র্যান্ড বিপণনে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন এবং একই সাথে তিনি ব্র্যান্ডের দূত হিসেবে পরিচায়ক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর জাতিগতভাবে লাল পাগড়ি পরিহিত, বিশাল গোঁফ, চশমা এবং মুক্তোর হার শোভিত ছবি তাঁর সমস্ত মশলার প্যাকেটে এবং বিজ্ঞাপনেও ব্যবহৃত হত। ব্র্যান্ডের পরামর্শদাতাদের মতে এই ছবি তাঁকে সবথেকে প্রিয় ও পছন্দের মশলার ব্র্যান্ডের দূত হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল।

ধরমপাল গুলাতি প্রায় ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন তার সাথে এম ডি এইচ আন্তর্জাতিক স্কুল, মহাশয় চুনীলাল সরস্বতী শিশু মন্দির, মাতা লীলাবতী কন্যা বিদ্যালয় এবং মহাশয় ধরমপাল বিদ্যা মন্দির প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। এছাড়াও নতুন দিল্লীতে গরীব মানুষদের জন্য ২০০ শয্যার হাসপাতাল এবং বস্তিবাসীর জন্য ভ্রাম্যমান চিকিৎসা কেন্দ্র তিনি স্থাপন করেন।

তাঁর বাবার নামে দাতব্য সংস্থা মহাশয় চুনীলাল দাতব্য ট্রাস্ট (Mahashay Chunnilal Charitable Trust) তাঁর বিভিন্ন দাতব্য কার্যাবলীর দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে। কোভিড অতিমারীর সময়ও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ সাহায্য করেন এবং কেন্দ্রশাসিত দিল্লীতে ৭৫০০ পি পি ই কিট স্বাস্থ্যকর্মীদের দান করেন। ধরমপাল গুলাতি ২০১৯ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন। ৯৮ বছর বয়সে ধরমপাল গুলাতির ২০২০ সালে ৩ ডিসেম্বর দিল্লীর মাতা কানন দেবী হাসপাতালে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যু হয়।