দেবী দুর্গার ধ্যানমন্ত্র

হিন্দু শাস্ত্রে সপ্তাহের প্রতিটি দিনই কোনও না কোনও দেব-দেবীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে। যেমন ধরুন সোমবার হল ভগবান শিবের দিনে, মঙ্গলবার শ্রী হনুমানের, তেমনি শুক্রবার হল মা দূর্গার আরাধনা করার দিন। আর এদিন যদি এক মনে মায়ের পুজো করতে পারেন এবং সেই সঙ্গে জপ করতে পারেন এই প্রবন্ধে আলোচিত মন্ত্রগুলি, তাহলে মনের ছোট থেকে ছোটতর ইচ্ছা পূরণ হতে দেখবেন সময় লাগবে না।
সেই সঙ্গে যে কোনও ধরনের সমস্যাও কমে যাবে চোখের পলকে। ফলে জীবন সুখ-শান্তিতে ভরে উঠবে। শুধু তাই নয়, মিলবে আরও অনেক উপকার, যে সম্পর্কে এই লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করা হল। তাই তো বলি বন্ধু, এই মানব জীবনকে যদি সবদিক থেকে সার্থক করে তুলতে হয়, তাহলে প্রতি শুক্রবার দেবীর পুজো করার পাশাপাশা মন্ত্রগুলি জপ করতে ভুলবেন না যেন!
ব্যাখ্যা:- দেবীর মাথায় জটা, সাথে অর্ধচন্দ্রের মত কপাল। পূর্ণিমার চাঁদের মত মুখ তাঁর ও গায়ের রঙ অতসীফুলের মতো। তিনি সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত এবং তাঁর সর্বাঙ্গ বিভিন্ন অলঙ্কার দ্বারা ভূষিত। ।২-৪। তাঁর দাঁত সুন্দর এবং ধারালো, স্তন সম্পূর্ণ। তিন ভাঁজে দাঁড়িয়ে তিনি দৈত্য নিধন করছেন। দশহাতভর্তি অস্ত্র তাঁর যা দেখতে শাখা-প্রশাখা সমন্বিত পদ্ম গাছের মতো। ডানদিকের উপরের হাতে অবস্থান করে ত্রিশুল, তারপর ক্রমান্বয়ে খর্গ এবং চক্র।
।৬-৮। দেবীর দক্ষিণের সর্বনিম্ন দুই হাতের অস্ত্র ধারালো তীর এবং বর্শা। দেবীর ধ্যানে বর্ণিত হয় তাঁর বাঁ হস্ত। সেদিকে সবচেয়ে নিচের হাতে থাকে চামড়ার ঢাল ও তার উপরের হাতে ধনুক। সেগুলির উপরের হাতে থাকে সর্প, অঙ্কুশ এবং কুঠার (ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে)। দেবীর পায়ের কাছে দৈত্যরাজের মাথার স্থান। ।১০-১২। মহিষের কাটা মাথা থেকে মহিসাসুরের দেহ অর্ধেক উত্থাপিত, হাতে তাঁর খর্গ এবং হৃদয়ে দেবীর ত্রিশূল দ্বারা বিদ্ধ।
তাঁর পেট থেকে নাড়িভূঁড়ি নির্গত হয়েছে। শরীর রক্তলিপ্ত। দেবীর হাতে ধরা সাপ দ্বারা অসুরের দেহ বেষ্টিত। তবে উত্থিত ভ্রূ তে দৈত্যের রূপও ভয়ঙ্কর। ।১৪-১৬। দেবী তাঁর বাম হাত দিয়ে দৈত্যরাজের চুল টেনে রেখেছেন। দেবীর ডান পা বাহন সিংহের উপরে এবং বাঁ পা কিঞ্চিৎ উর্ধে মহিষের উপরে অবস্থান করে। প্রবল যুদ্ধরত অবস্থাতেও দেবী তাঁর শান্তিপূর্ণ মুখাবয়ব ও আশীর্বাদী রূপ বজায় রেখেছেন এবং সমস্ত দেবতা দেবীর এই রূপের স্তুতি করেন। ।১৮-২২।
দেবীর উপরোক্ত রূপ দেবতাদের আট শক্তি উগ্রচন্ডা, প্রচন্ডা, চন্ডোগ্রা, চন্ডনায়িকা, চন্ডা, চন্ডবতী, চন্ডরূপ ও অতিচন্ডিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত। গৃহকর্তার মানব জীবনের সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ করেন এই দেবী। তাই ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভের জন্য জগন্মাতৃকা দেবী দুর্গার ধ্যানই মানবজাতির হওয়া উচিত। ।২৪-২৬। বি.দ্র. : দেবীর ধ্যানমন্ত্রের তৃতীয় ছত্রে দেবীর গায়ের রং অতসীপুষ্পের মতো বলে বর্ণিত হয়েছে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা যায়। ‘তপ্ত কাঞ্চন বর্ণাভাং’ অর্থাৎ তপ্ত বা গরম গলিত সোনার সঙ্গেও দেবীর গায়ের রঙের তুলনা করা হয়েছে বিভিন্ন শাস্ত্রে। তবে এই দুটিই বহুল প্রচলিত এবং দেবীপ্রতিমাতেও দু’রকম রঙেরই ব্যবহার দেখা যায়, ফলে যে কোনোটিই সঠিক বলে বিবেচিত।