মালদহের মানিকচক দিয়ারার শতবর্ষ প্রাচীন দুর্গাপুজো

মালদহের  মানিকচক দিয়ারার শতবর্ষ প্রাচীন দুর্গাপুজো

রাহুল মন্ডল,  মানিকচক ঃ  কখনও গঙ্গা গর্ভে চলে গিয়েছে দুর্গা মন্দির। আবার কখনও তলিয়ে গিয়েছে আস্ত গ্রাম। একবার বা দু'বার নয়, ভাঙনের গ্রাসে এপর্যন্ত চার- চারবার পুজোর ঠিকানা বদল করতে হয়েছে। মালদহের মানিকচকে গঙ্গা ভাঙনকে সাক্ষী/ সঙ্গী করেই চলছে শতবর্ষ প্রাচীন দুর্গাপুজো। মালদহ জেলার প্রাচীন পুজো গুলোর অন্যতম হলো মানিকচক দিয়ারা সার্বজনীন দুর্গোৎসব। কবে থেকে কিভাবে শুরু হয়েছিল পুজো, তার সঠিক ইতিহাস আজও অজানা।

তবে তথ্যে স্পষ্ট, ১৯০৫ সালে জমিদার গোপাল চন্দ্র চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায় জাঁকজমক পুজো হয় গঙ্গা পারের গ্রামে। এখানকার দুর্গোত্সবের পোশাকি নাম "মানিকচক দিয়ারা সার্বজনীন দুর্গাপূজা"। তবে এলাকায় বেশি পরিচিত "ভাঙনের দুর্গা" নামে। ১৯৯৪-৯৫ সাল থেকে গঙ্গা নদীর ভাঙ্গন তীব্র হয় মানিকচকের এ প্রান্তে। সেইসময় থেকেই শুরু ঠিকানা বদল। গত তিন দশকে চারবার স্থান বদল হয়েছে দুর্গাপুজোর। প্রতিক্ষেত্রে এর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গঙ্গা ভাঙন। অতীতে এমন বেশ কিছু এলাকায় দুর্গাপুজো হয়েছে যেসব এখন নিশ্চিহ্ন।

১৯৯৫ সালে প্রথমবার গঙ্গা ভাঙনে তলিয়ে যায় ডাল্লুটোলা গ্রামের স্থায়ী দুর্গা মন্দির। পুজো সরিয়ে আনা হয় খানিক দূরে বেচুটোলা গ্রামে। ভাঙনের ছোবলে এরপর পুজো সরে আসে পাশে পালপাড়া এলাকায়। ক্রমে সেসব এলাকাও  নিশ্চিহ্ন হতে শুরু করে। এরপর দুর্গাপুজোর ঠিকানা হয় হাড্ডাটোলা গ্রামে। দেবী দুর্গার পুজো স্থায়ী হয়নি এখানেও। শেষে ২০১৫-২০১৬ সাল থেকে পুজো সরে আসে বর্তমান জোতপাট্টা এলাকায়। কখনও আমবাগান, কখনও ফাঁকা মাঠে প্যান্ডেল খাটিয়ে দুর্গাপুজো হয়েছে।

এরপর স্থানীয় সুহৃদয় ব্যক্তি সুভাষ মন্ডলের দান করা জমিতে তিল তিল করে গড়ে তোলা হয়েছে স্থায়ী দুর্গামন্দির। তবু দুশ্চিন্তা কমছে কই। কারণ, ধীরে হলেও এগিয়ে আসছে গঙ্গা। বর্তমানে পাকা দুর্গা মন্দির থেকে গঙ্গার দূরত্ব মাত্র পাঁচশো মিটার। এবারের পূজা কমিটির  সম্পাদক নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মন্ডল, , কোষাধ্যক্ষ,অর্জুন মন্ডল,সদস্য উজ্জল কর্মকাররা জানায় গত কয়েক বছর ধরেই একইসঙ্গে নদী ভাঙন আর বন্যার আতঙ্ক গ্রাস করেছে মালদহের মানিকচকের নদীপাড়ের বাসিন্দাদ সহ আমাদের ।

এবারও কিছুদিন আগে পর্যন্ত বন্যার জলে ডুবে ছিল গোটা এলাকা। নদীর জল নামতেই জোরকদমে শুরু হয়েছে পুজোর আয়োজন। এবার এখানকার পুজো ১১৭ তম বছর আমাদের ।   প্রায় এক লক্ষ টাকা বাজেটে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। ঐতিহ্য মেনেই মন্দিরে গড়ে তোলা হচ্ছে একচালার সাবেকি প্রতিমা। বারবার ঠিকানা বদলে, আগে যাঁরা পুজোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকতেন, এমন অনেকেই আজ ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছেন। গ্রামের অনেক প্রবীণ মানুষ ছোটবেলা থেকেই এই পুজোর ঠিকানা বদলের সাক্ষী থেকেছেন।

তবে বারবার স্থান বদলেও কমেনি পুজো নিয়ে আবেগ। কিন্তু, এসবের মাঝেও আতঙ্ক থাকছেই, মন্দির টিকিয়ে রাখা যাবে তো ? সব মিলিয়ে   ভাঙনের দুর্গার পুজোর প্রস্তুতিতে এখন থেকেই মেতে রয়েছেন গ্রামের আট থেকে আশি। মূর্তি গড়ার দেখতে এখন থেকেই ভিড় করছেন বহু মানুষ। ঐতিহ্য মেনেই পুজোর উৎসবে মেতে উঠতে প্রস্তুত হচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ।