ওদের চোখে দুর্গাপুজো

মলয় দে শান্তিপুর:- বিগত তিন মাস ধরে নদীয়ার শান্তিপুর গবারচর এলাকায় বেশ কয়েক ধাপে গঙ্গা ভাঙ্গনকবলিত 22 টি পরিবারের একমাত্র আশ্রয় স্থল স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রশাসনিক সহযোগিতা বলতে, সেই রাতে লাইট ফ্যান বিহীন লকডাউন এর কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ স্কুল ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হয়েছিল তাদের হাতে। এরপর সংবাদ শিরোনামে আসার কারণে পরিবার পিছু একটি ত্রিপল এবং দুই একদিনের শুকনো সামান্য কিছু খাবার! তারপর থেকে স্কুলমুখী হর্নি কোনো জনপ্রতিনিধি বা সরকারি আধিকারিক।
উপ নির্বাচনের দামামা বেজে গেছে! ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব কর্মী-সমর্থকরা, হয়তো প্রচারের শেষ মুহুর্তে আবারো কিছু সামান্য সহযোগিতা নিয়ে করজোড়ে ভোট ভিক্ষায় দাঁড়াবেন বিভিন্ন দলের বিধায়ক পদপ্রার্থী। সরকারি টেক্স খাজনা দেওয়া নিজের নামের দলিলসহ চাষের জমি, বাপ ঠাকুরদার চৌদ্দপুরুষের ভিটেমাটি, গবাদি পশু রাখার ঘর, কর্মস্থল, বসতবাড়ি সবকিছু জলের তলায়!
পাড়ার একমাত্র পুজো প্যান্ডেলের বাঁশ পড়েছে, ছেলেমেয়েরা সেখানে খেলা করছে, অন্য বাচ্চাদের নতুন জামা কাপড় কেনার কথা শুনে, নিষ্পাপ শিশুর বায়না দীর্ঘদিন কর্মহীন, হয়ে থাকা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অভিভাবকরা । তারা জানান এ লজ্জা অসহনীয়। আর কদিন বাদে ঢাকের বাদ্যি বাজবে , কি জবাব দেবে দেবে তারা? ছোট ছোট শিশুদের কাছে! এ দুঃসময় কেউ টাকা ধারও দেবে না! সহযোগিতার ভয়ে বহু আত্মীয় হয়েছে পর।
তারই মধ্যে রাতের ঘুম কেড়েছে, উপনির্বাচন। ভোট মহোৎসবের কারণেই, তাদের বিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু যাবেন কোথায়? খাবেন কি! উত্তর জানা নেই কারো। বিগত চার পাঁচ বছর ধরে ওই অঞ্চলে, জামা কাপড় ফেরি করতে আসা মতিলাল রায় জানান, তিনি আগে গবারচর এলাকার বাসিন্দাই ছিলেন, জামা কাপড়ের ব্যবসায়, হাই উপায় একটু বৃদ্ধি পাবার পর গঙ্গা থেকে অনেক দূরে বাঘাযতীন পাড়ায় বাড়ি করেছেন।
তবে তার ভাইরা, প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজন সবাই এখনো এই অঞ্চলের বাসিন্দা আর সেই কারণেই পরিচিতদের মধ্যে তিনি বিক্রি করেন জামা কাপড়। গঙ্গার তীরবর্তী এই এলাকার অনেক মানুষ উঠে গেছেন অন্যত্র ,তবে এ বছর গঙ্গা ভাঙ্গনের কারণে এবং দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকার পর কারোর হাতে নগদ অর্থ নেই, ফলে জামা কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই কারও, অর্ধেক দিন বৌনি হচ্ছে না।