বিদেশে তাক লাগাচ্ছে জাকার্তা বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুজো

বিদেশে  তাক লাগাচ্ছে  জাকার্তা বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুজো

কথায় বলে ইচ্ছে থাকলে উপায় আছে হয়, শুনলে সোজা মনে হলেও সত্যি এতোটা সোজা নয়। ইন্দোনেশিয়ায় টানা ৩৮ বছর ধরে একমাত্র দুর্গা পুজো অনুষ্ঠিত করা। তবে সেটা সম্ভব করেছে জাকার্তা বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন। এই অপূর্ব প্রাকৃতিক ও খনিজ সমৃদ্ধশালী দেশের নমনীয় মনের উদার চিন্তাশীল নাগরিকদের সাহায্যে ১৯৮২ থেকে ইন্দোনেশিয়ার গোটা দেশের একমাত্র দুর্গাপুজো, যা সম্পূর্ণভাবে  পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলার দুর্গাপুজোর নিয়ম, নীতি ও সময় মেনে সম্পূর্ণ পাঁচ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

প্রতি বছর এমনকী, গত বছর এই ভয়ঙ্কর মহামারীর গ্রাসও জাকার্তার এই দুর্গোৎসবকে অনুষ্ঠিত হওয়ার থেকে আটকাতে পারেনি। কিছু উৎসাহী বাঙালি পরিবার আজ থেকে ৩৮ বছর আগে যে প্রথা শুরু করেছিল, আজও তা সম্পূর্ণ অব্যাহত রয়েছে। কলকাতার কুমারটুলী থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা থেকে শুরু করে কলকাতা থেকে পুরোহিত মশাইকে আকাশপথে উড়িয়ে নিয়ে আসা-কোন আয়োজনই বাদ নেই জাকার্তার বাঙালিদের এই দুর্গাপুজোতে।

নব্বইটা বাঙালি পারিবার মিলে যেভাবে তাঁদের মাতৃভূমির সংস্কৃতি ও বাঙালির প্রথাকে নিজের দেশের বাইরেও সমান ভাবে বাঁচিয়ে রেখে বয়ে নিয়ে চলেছে, তা সত্যি তাঁদের নিজেদের কাছেই নিজেদের এক অনন্য প্রাপ্তি। পরিবারের ছোটরাও সমানভাবে নিজেদের বেড়ে ওঠার সাথে সাথে বাংলার এই সঙ্গস্কৃতির সাথে নিজেকে সামিল করতে পারছে এই জাকার্তা বাঙালির অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুজো ও সারা বছর ব্যাপী বিভিন্ন সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে।  

৩৮ বছর আগে একটি বাড়ির গ্যারাজ থেকে এই পুজোর সূচনা হয়ে আজ জাকার্তার বাঙালিদের এই দুর্গাপুজো জাকার্তার প্লুইত অঞ্চলের হিন্দু শিব মন্দিরে তাঁদের প্রতিষ্ঠিত সাত ফুট উঁচু ফাইবারের 'মা দুর্গা' ও পরিবারের মূর্তির সামনে প্রায় হাজার খানেক বিভিন্ন জাতির দর্শনার্থীদের নিয়ে পাঁচ দিন ব্যাপী দুই বেলা ভোগ প্রসাদ বিতরণ করে, মহা সামাহরাহে অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে।

রাত জেগে প্যান্ডেল সাজানো, আল্পনা দেওয়া থেকে শুরু করে লাল পাড় শাড়ি ,ঢাকের বাজনা, শঙ্খ ও ইলু ধ্বনি, ধুনুচি নাচ ,একশো এক পদ্ম ফুল, কলা বউ , খিচুড়ি পায়েস ,দশমীর সিঁদুর খেলা, নৌকোতে করে মা এর ভাসান , বিজয়ার মিষ্টি মুখ , রসগোল্লা, বিজয়া সম্মেলনীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-কিছুই বাদ নেই এই দীর্ঘ দিনের দুর্গা পুজোতে। বলা যেতে পারে বাংলার বাইরে আরও এক পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের বাঙালিরা মিলে সাজিয়ে তুলেছেন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তাতে।

ভিন্ন ভিন্ন বছর কলকাতার বিভিন্ন সংগীত শিল্পীরা এসে জাকার্তা বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের বিজয়ার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। গত বছরও তারা এই মহামারীর সময় কলকাতার শিল্পীদের পাশে থেকেছেন, তাঁদের দিয়ে ভার্চুয়াল সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন, তাঁদের আর্থিক সাহায্যের জন্যে এগিয়ে এসেছেন। এই দুর্গাপুজোর রীতিকে অব্যাহত রেখে এই বারের দুর্গাপুজোয় জাকার্তার বহু পুরাতন বাঙালি ও এই পুজোর সাথে দীর্ঘ দিন থেকে জড়িয়ে থাকা মানুষ শ্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে ও এই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য শ্রী টিন্টো বক্সী ,

শ্রী সূর্যকান্ত চক্রবর্তীর সম্পাদনায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। জাকার্তা বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের ইন্দোনেশিয়ার সরকারি অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠিত এনজিও-তে পরিণত হয়েছে। তাদের বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজের মধ্যে দিয়ে, শুধু নিজেদের জন্যে না ভেবে সর্বোপরি ভারতবর্ষের "সেবাই বৃহৎ ধর্ম " উক্তিকে  বাঙালির হাত ধরে বাংলার থেকে ৬৩৩০ কিলোমিটার দূরে ভিন্ন দেশেও প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।