তুরস্কে নিযুক্ত ১০টি পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের নির্দেশ এরদোয়ানের

তুরস্কে নিযুক্ত ১০টি পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের নির্দেশ এরদোয়ানের

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিসহ তুরস্কে নিযুক্ত ১০টি পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। কারাবন্দী সুশীল সমাজের এক নেতার মুক্তি দাবি করায় স্থানীয় সময় শনিবার তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে এ নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।শনিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান এই হুঁশিয়ারি। এই দেশগুলির অন্যতম আমেরিকা (US)। মার্কিন মুলুকের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও আরও ন'টি দেশের রাষ্ট্রদূতকে তুরস্ক থেকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছেন এরদোগান।

তিনি জানিয়েছেন, আমেরিকা ছাড়াও যে দেশগুলির রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে তারা হল কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেন। জানা গিয়েছে, শনিবারই তাঁদের তুরস্কের বিদেশমন্ত্রকের তরফে ডেকে পাঠানো হয়। পরে তাঁদের বহিষ্কার করার বিষয়ে ঘোষণা করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। ২০১৭ সাল থেকে সেদেশের কাভালা জেলে বন্দি ওসমান কাভালা নামের ওই ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০১৩ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

পরে ২০১৬ সালে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে আর্থিক মদতও দিয়েছিলেন তিনি। ৬৪ বছর বয়সী কাভালা অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত ১৮ অক্টোবর কাভালার মুক্তি দাবি করে যৌথ বিবৃতি দেন আমেরিকা-সহ ১০টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ইচ্ছাকৃতভাবে কাভালার বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে।

এতে তুরস্কের বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক কাঠামো নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। এই বিবৃতি প্রকাশের পরই ওই রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানো হয় তুরস্কের বিদেশমন্ত্রকে। শনিবার এরদোগান জানিয়েছেন, 'আমি আমাদের বিদেশমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছি ওই ১০ রাষ্ট্রদূতকে যত দ্রুত সম্ভব 'অবাঞ্ছিত' ঘোষণা করতে। তুরস্ককে যদি ওরা চিনতে না পারে তাহলে এই দেশ ওদের ছাড়তে হবে।' স্বাভাবিক ভাবেই তুরস্কের প্রেসিডেন্টেরে এমন হুঁশিয়ারিকে ভালভাবে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দেশগুলি।

ইতিমধ্যেই জার্মানির বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, 'আমরা বাকি ন'টি দেশের সঙ্গে পুরো বিষয়টি নিয়েই আলোচনা চালাচ্ছি।' এদিকে নরওয়ের বিদেশমন্ত্রকের বক্তব্য, 'আমাদের রাষ্ট্রদূত এমন কিছু করেননি যে জন্য তাঁকে এভাবে বহিষ্কার করার হুঁশিয়ারি দেওয়া যায়।'এদিকে  ইসলামিক স্টেট-সহ একাধিক জঙ্গি সংগঠনকে আর্থিক সাহায্যের অভিযোগ রয়েছে তুরস্কের বিরুদ্ধে। 

এই তালিকায় তুরস্কের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সংস্থার সভাপতি মার্কাস প্লেইয়ার বলেন, দেশের ব্যাংকিং, আবাসন শিল্প এবং সোনা-হীরে ব্যবসায়ীদের উপর করা নজর রাখতে হবে তুরস্ক প্রশাসনকে। FATF-এর দাবি, রাষ্ট্রসঙ্ঘ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ও আলকায়দাকে অর্থ সাহায্য করছে তুরস্ক। তাদের এহেন পদক্ষেপই ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে। এই অর্থ সাহায্য রুখতে এর্দোগান প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এদিকে তুরস্ককে ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপকে চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন সে দেশের নেতৃ্ত্ব।

ইউরোপ এবং পাশ্চাত্যের দেশগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তুরস্কের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী সুলেমান সোলুর দাবি, 'এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।' তিনি আরও বলেন, 'আমরাই সন্ত্রাসের ভুক্তভোগী এবং লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ওরা তুরস্ককে দোষারোপ করছে।' একই সাফাই ইসলামাবাদের গলাতেও শোনা যায়। এবারও ধূসর তালিকা থেকে মুক্তি পায়নি পাকিস্তান। এর মাঝেই বন্ধু রাষ্ট্রেরও এই তালিকাই অন্তর্ভুক্তির জেরে সাঁড়াশি চাপে পড়েছে ইসলামাবাদ।