ফিফা বিশ্বকাপ ১৯৮২ এর ইতিহাস

দীর্ঘ দিন ধরে চলা ফিফা বিশ্বকাপে এমন অসংখ্য মুহুর্ত রয়েছে, যা অনেকেরই স্মৃতিতে ঘোরাফেরা করেছে। কিন্তু এমন অদ্ভুত কান্ডও রয়েছে, যা স্মৃতিতে বাধা নেই অনেকেরই। এমনই এক অবাক কান্ড ঘটেছিল ১৯৮২ ফিফা বিশ্বকাপে FIFA World Cup 1982। স্পেনে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে প্রথমবার অংশগ্রহণ করেছিল কুয়েতের জাতীয় দল। আর সেই একবারই আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল এই ছোট দেশ। অথচ এই এশীয় দেশ নিজের একমাত্র বিশ্বকাপে এমন কান্ড ঘটিয়ে বসেছিল, যা টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এর আগে কখনও হয়নি আর আজও হয়নি।
প্রথমবারের মতো, বিশ্বকাপের ফাইনাল ১৬ থেকে ২৪ টি দলে বিস্তৃত হয়েছে। এটি আফ্রিকা এবং এশিয়া থেকে আরও দেশকে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেয়। ১৯৬৬ সালের ৬ জুলাই লন্ডনে ফিফা কর্তৃক স্পেনকে স্বাগতিক দেশ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। একই সময়ে ১৯৭৪ এবং ১৯৭৮ টুর্নামেন্টের হোস্টিং অধিকার প্রদান করা হয়।
পশ্চিম জার্মানি এবং স্পেন একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল যেখানে স্পেন ১৯৭৮ সালের টুর্নামেন্টের জন্য পশ্চিম জার্মানিকে সমর্থন করবে এবং পশ্চিম জার্মানি স্পেনকে ১৯৮২ বিশ্বকাপের জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিড করার অনুমতি দেয়। স্পেন নির্বাচিত হওয়ার সময়, দেশটি ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর শাসনের অধীনে ছিল, কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগেই তার শাসনের অবসান ঘটেছিল এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের পর বিশ্বকাপ স্প্যানিশ সমাজে এর প্রভাব ফেলেছিল।
১৯৮২ ফিফা বিশ্বকাপ ছিল ১২ তম ফিফা বিশ্বকাপ , পুরুষদের সিনিয়র জাতীয় দলের জন্য একটি চতুর্বার্ষিক ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং ১৩ জুন এবং ১১ জুলাই ১৯৮২ এর মধ্যে স্পেনে খেলা হয়েছিল। টুর্নামেন্টটি ইতালি জিতেছিল , যারা পশ্চিম জার্মানিকে ৩-১ গোলে পরাজিত করেছিল। রাজধানী মাদ্রিদের সান্তিয়াগো বার্নাবেউ স্টেডিয়ামে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় । এটি ছিল ইতালির তৃতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা, কিন্তু ১৯৩৮ সালের পর তাদের প্রথম । ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ডে (তাদের গ্রুপে তৃতীয় এবং শেষ শেষ) থেকে বিদায় নিয়েছে। আলজেরিয়া , ক্যামেরুন ,হন্ডুরাস , কুয়েত এবং নিউজিল্যান্ড প্রথমবার ফাইনালে উঠেছিল।
ই বিশ্বকাপের আসর ১৩ জুন থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত স্পেনে অনুষ্ঠিত হয়। সর্বমোট ২৪টি দেশ এই খেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে বিজয়ী হয় ইতালি। ১৯৮২ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে নানান কারণে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে। ১৯৭৮ ফিফা বিশ্বকাপ ছিল শেষ বিশ্বকাপ যেখানে বিশ্বকাপে ১৬টি দেশের অংশগ্রহণের নিয়ম শেষবারের মত কার্যকরী হয়।
এরপর ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ থেকে ১৬টি দলের পরিবর্তে ২৪টি দেশ অংশগ্রহণের নিয়ম শুরু হয়। এই বিশ্বকাপেই প্রথম পেনাল্টি শুট আউট এর নিয়ম শুরু হয়। ১৯৩৪ এবং ১৯৬৬ সালের পর এটি ছিল তৃতীয় বিশ্বকাপ যেখানে সেমিফাইনালে ওঠা চারটি দলই ইউরোপীয় ছিল। এই বিশ্বকাপের ম্যাসকটটি ছিল স্পেনের জার্সি পরিহিত একটি কমলালেবু যা স্পেনের অত্যন্ত পরিচিত একটি ফল। ম্যাসকটটির নাম ছিল নারঞ্জিতো, কমলালেবুর স্পেনীয় নাম। এই বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত বলটির নাম ছিল – ট্যাঙ্গো এস্পানা।
এই বিশ্বকাপের ৫২টি ম্যাচে মোট ১৩৪টি গোল হয়। ২৪টি দলকে ছয়টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রথম গ্রুপে ছিল – ইতালি,পোল্যান্ড, ক্যামেরুন এবং পেরু। দ্বিতীয় গ্রুপে ছিল অস্ট্রিয়া, পশ্চিম জার্মানি, আলজেরিয়া এবং চিলি। তৃতীয় গ্ৰুপে ছিল – বেলজিয়াম, আর্জেন্টিনা,হাঙ্গেরি,এল সালভাদর। চতুর্থ গ্ৰুপে ছিল – ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, চেকোস্লোভাকিয়া এবং কুয়েত। পঞ্চম গ্ৰুপে ছিল – উত্তর আয়ারল্যান্ড, স্পেন, ইউগোস্লাভিয়া, হন্ডুরাস। ষষ্ঠ গ্ৰুপে ছিল – ব্রাজিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন, স্কটল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড।
ফিফা বিশ্বকাপ ১৯৮২ এর ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বিজয়ী হয় ইতালি। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান যথাক্রমে পোল্যান্ড ও ফ্রান্স অর্জন করে। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে অবস্থিত সান্তিয়াগো বার্নাবেউ স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচটি খেলা হয়। পশ্চিম জার্মানির পক্ষে একমাত্র গোলটি করেন ব্রেইটনার। ইতালির পক্ষ থেকে যথাক্রমে পাওলো রোসি, মার্কো তারদেলি এবং আলেসান্দ্রো আল্টোবেলি একটি করে গোল করেন। ইতালির পাওলো রোসি ৬টি গোল করে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারটি অর্জন করেন।
সেই টুর্নামেন্টে শক্তিশালী চেকোস্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করার পর ২১ জুন তারিখে মুখোমুখি হয়েছিল অন্যতম ফেভারিট ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। আর সেই ম্যাচে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, কুয়েত ম্যাচটি হেরে যাবে। আর সেই ঐতিহাসিক ম্যাচ দেখতে হাজির ছিলেন সে দেশের রাজপুত্র শেখ ফাহাদ আল আহমেদ আল জাবের আল সাবাহ, যিনি ছিলেন সেই দেশের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টও বটে। শুরুর ৩০ মিনিটে কুয়েত ভালো ডিফেন্স করেছিল।
কিন্তু বের্নার্ড গেঙ্ঘিনি গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন। এরপর ৪৩ মিনিটে মিশেল প্লাতিনি গোল করে ফ্রান্সের জয় নিশ্চিত করেন। আর তারপর ৪৮ মিনিটে ৩-০ করে ফেলে ফ্রান্স। যদিও ৭৫ মিনিটে আবদুল্লাহ আল বুলৌশি গোল করে কুয়েতকে কিছুটা সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে আসেন, কিন্তু ফরাসি মিডফিল্ডার আলাইন গিরেসে দলের চতুর্থ গোলটি তুলে আনেন।
আর তারপরেই শুরু হল ঝামেলা। চতুর্থ গোল নিয়ে কুয়েতের খেলোয়াড়রা অভিযোগ করেছিলেন, তারা ভেবেছিল সোভিয়েত রেফারি মিরোস্লাভ স্টুপার বাঁশি বাজিয়েছিলেন, যার জেরে তারা থমকে গিয়েছিল এবং ফ্রান্স সুযোগ বুঝে গোল করে। যদিও সেই বাঁশির আওয়াজ এসেছিল দর্শকদের থেকে। আর দেশের প্রতি এমন অন্যায় দেখে মাঠেই নেমে পড়েন রাজপুত্র ফাহাদ। এসে তিনি রেফারির সাথে তর্ক জুড়ে দেন, হুমকি দেন খেলা বন্ধের।
আর কার্যত সেই হুমকিতে রেফারি স্টুপার গোলটি বাতিল করে দেন এবং খেলা চালু করেন। আর সেই ম্যাচের পর রেফারিং থেকে নিষিদ্ধ হন স্টুপার।যদিও ৮৯ মিনিটে চতুর্থ গোলটি তুলে নেন ম্যাক্সিম বোসিস। ৪-১ ব্যবধানে হেরে লজ্জায় ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে হয়েছিল কুয়েতকে। এক গোল বাতিল করা সত্ত্বেও চার গোল হজম করতে হয়েছে তাদের। এরপর গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ০-১ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিল কুয়েত। সেই ঘটনা আজও কুয়েতিদের মনে ভিড়ে থাকে। নিজেদের একমাত্র বিশ্বকাপে এমন কান্ড ঘটিয়ে তারা এসেছিল খবরের শিরোনামে। যদিও তারপরে আরও কিছু বিতর্কে জড়ায় কুয়েত ফুটবল ফেডারেশন।
আরো পড়ুন জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস ধর্ম জেলা শহর শেয়ার বাজার কালীপূজা যোগ ব্যায়াম আজকের রাশিফল পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ জ্যোতিষশাস্ত্র টোটকা লক্ষ্মী পূজা ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজ বিশেষ রান্নাঘর প্রাপ্তবয়স্ক বাংলা পঞ্জিকা