ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৮৬ এর ইতিহাস

ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৮৬ FIFA World Cup 1986 ছিল ফিফা বিশ্বকাপের ত্রয়োদশ আসর। এই বিশ্বকাপের আসর ৩১ মে থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হয়। সর্বমোট ২৪টি দেশ এই খেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে বিজয়ী হয় আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে মূলত দিয়েগো মারাদোনার জন্য।
৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপ (ইংরেজি: 1986 FIFA World Cup) হল ফিফা বিশ্বকাপের ১৩তম আসর যা মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালের ৩১ মে থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত। এতে অংশগ্রহণ করে ২৪টি দেশ। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বকাপের এই আসর আয়োজনের জন্য কলম্বিয়াকে নির্বাচিত করেছিল ফিফা, কিন্তু অর্থনৈতিক কারণে ১৯৮২ সালে তারা তা প্রত্যাহার করে নেয়।
১৯৮৩ সালের মে মাসে নতুন আয়োজক হিসেবে মেক্সিকোকে নির্বাচিত করা হয়। বিশ্বকাপের এই আসরের শিরোপাধারী দল হল আর্জেন্টিনা (দ্বিতীয় শিরোপা)। দলের নেতৃত্ব দেন দিয়েগো মারাদোনা, যিনি একই কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কুখ্যাত “হ্যান্ড অফ গড” এবং “শতাব্দীর সেরা গোল” হিসেবে নির্বাচিত গোল দুইটি করেন। পুরো প্রতিযোগিতায় তিনি করেন পাঁচ গোল এবং সতীর্থদের দিয়ে করান আরও পাঁচটি গোল।
ফাইনালে মেক্সিকো সিটির ইস্তাদিও অ্যাজতেকায় পশ্চিম জার্মানিকে ৩–২ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা। পুরো প্রতিযোগিতায় মোট দর্শক উপস্থিতি ছিল ২,৩৯৩,০৩১, গড় হিসেবে প্রতি খেলায় ৪৬,০১৯। এই প্রতিযোগিতার ধরন ১৯৮২-এর চেয়ে ভিন্ন ছিল। দ্বিতীয় পর্বে গ্রুপের পরিবর্তে নক-আউট পদ্ধতি চালু ছিল। অংশগ্রহণকারী ২৪টি দলকে চারটি করে ছয়টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল (এ থেকে এফ)। প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল এবং ছয়টি গ্রুপ হতে তৃতীয় স্থানে থাকা চারটি শীর্ষ দল দ্বিতীয় পর্বের টিকিট পায়।
এটিই ছিল শেষ বিশ্বকাপ যেখানে একই মহাদেশের দলগুলোকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা না করে প্রথম পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতার পর নতুন নিয়মের অধীনে বিশ্বকাপের প্রতিটি গ্রুপে দুইটি বা তিনটি করে ইউরোপীয় দল বিদ্যমান থাকে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে, গ্রুপ বি-তে শুধুমাত্র একটি ইউরোপীয় দল ছিল (বেলজিয়াম)। ১৯৭৪ সালের জুনে আয়োজক হিসেবে কলম্বিয়াকে নির্বাচিত করে ফিফা।
তবে কলম্বিয়ান কর্তৃপক্ষ ১৯৮২ সালে জানায় যে অর্থনৈতিক কারণে ফিফার শর্তাবলীর অধীনে তারা বিশ্বকাপ আয়োজনে অপারগ। তাই ১৯৮৩ সালের ২০ মে, নতুন আয়োজক হিসেবে মেক্সিকোকে নির্বাচিত করে ফিফা। ফলে প্রথম জাতি হিসেবে দুইবার ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ লাভ করে তারা। ১৯৮৫ সালে বিশ্বকাপ শুরুর আট মাস আগে মেক্সিকোতে একটি তীব্র ভূমিকম্প আঘাত হানে। ফলে মেক্সিকোর বিশ্বকাপ আয়োজনের সামর্থ্য সন্দেহের মুখে পড়ে।
কিন্তু স্টেডিয়ামগুলোর কোনো প্রকার ক্ষতি না হওয়ায় তারা প্রস্তুতি চালিয়ে যায়। তিনটি দেশ প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে: কানাডা, ডেনমার্ক এবং ইরাক। হন্ডুরাসের বিপক্ষে ২–১ গোলে জয় লাভ করে কানাডা তাদের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। ইরান–ইরাক যুদ্ধের কারণে ইরাক তাদের প্রত্যেকটি হোম ম্যাচ নিরপেক্ষ মাঠে খেলে।১৯৫৪ সালের পর প্রথমবারের মত এবার অংশগ্রহণ করে দক্ষিণ কোরিয়া, প্যারাগুয়ে ১৯৫৮ সালের এবং পর্তুগাল ১৯৬৬ সালের পর প্রথমবারের মত অংশগ্রহণ করে। ২০১০ অনুসারে, এই শেষবারের মত হাঙ্গেরি, কানাডা, ইরাক এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড বিশ্বকাপের মূল পর্বে অংশগ্রহণ করে।
এই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মারাদোনার করা দুটি গোল বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে একই সঙ্গে যেমন অন্যতম বিতর্কিত গোলের দৃষ্টান্ত হয়ে আছে তেমনি একই সঙ্গে অন্য গোলটি শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গোল হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছে। এই বিশ্বকাপ থেকেই দর্শকদের মধ্যে খেলা চলাকালীন মেক্সিকান ওয়েভ নামের একটি বিশেষ রীতির প্রচলন শুরু হয় যা পরবর্তীকালে সারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই বিশ্বকাপেই প্রথম চামড়ার বলের বদলে সম্পূর্ণ সিন্থেটিক দ্বারা তৈরী বলে খেলার প্রচলন শুরু হয়।
এই বিশ্বকাপের ম্যাসকটটি ছিল মেক্সিকো ফুটবল দলের জার্সি পরিহিত একটি জালাপেনো লঙ্কা যা মেক্সিকোর খাদ্য রীতির একটি অপরিহার্য অঙ্গ। ম্যাসকটটির নাম ছিল পিক (pique), যেটি এসেছে স্পেনীয় নাম ‘পিকান্তে’ থেকে যার অর্থ ‘ঝাল’। এই বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত বলটির নাম ছিল – ‘অ্যাজটেকা’ এই বিশ্বকাপের ৫২টি ম্যাচে মোট ১৩২টি গোল হয়। ২৪টি দলকে ছয়টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রথম গ্রুপে ছিল -আর্জেন্টিনা, ইতালি,পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া।
দ্বিতীয় গ্রুপে ছিল – মেক্সিকো, প্যারাগুয়ে, বেলজিয়াম এবং ইরাক। তৃতীয় গ্ৰুপে ছিল – সোভিয়েত ইউনিয়ন, হাঙ্গেরি, ফ্রান্স এবং কানাডা। চতুর্থ গ্ৰুপে ছিল – স্পেন, ব্রাজিল, উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং আলজিরিয়া। পঞ্চম গ্ৰুপে ছিল – উত্তর ডেনমার্ক, পশ্চিম জার্মানি, উরুগুয়ে এবং স্কটল্যান্ড। ষষ্ঠ গ্ৰুপে ছিল – মরোক্কো, ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড, পর্তুগাল।
ফিফা বিশ্বকাপ ১৯৮৬ এর ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে বিজয়ী হয় আর্জেন্টিনা। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান যথাক্রমে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম অর্জন করে। মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে অবস্থিত এস্তাদিও অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচটি খেলা হয়। পশ্চিম জার্মানির পক্ষে দুটি গোল করেন যথাক্রমে রুমেনিগ্গে এবং ভলার। ইতালির পক্ষ থেকে যথাক্রমে ব্রাউন, বুরুচাগা এবং ভালদানো একটি করে গোল করেন। ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকার ৬টি গোল করে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারটি অর্জন করেন।
আরো পড়ুন জীবনী মন্দির দর্শন ইতিহাস ধর্ম জেলা শহর শেয়ার বাজার কালীপূজা যোগ ব্যায়াম আজকের রাশিফল পুজা পাঠ দুর্গাপুজো ব্রত কথা মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ জ্যোতিষশাস্ত্র টোটকা লক্ষ্মী পূজা ভ্রমণ বার্ষিক রাশিফল মাসিক রাশিফল সাপ্তাহিক রাশিফল আজ বিশেষ রান্নাঘর প্রাপ্তবয়স্ক বাংলা পঞ্জিকা