ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৯০ এর ইতিহাস 

ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৯০ এর  ইতিহাস 

ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৯০ FIFA World Cup 1990 ছিল ফিফা বিশ্বকাপের চতুর্দশ আসর। এই বিশ্বকাপের আসর ৮ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ইতালি- তে অনুষ্ঠিত হয়। সর্বমোট ২৪টি দেশ এই খেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে তৃতীয়বারের জন্য বিজয়ী হয় পশ্চিম জার্মানি। ১৯৯০ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে নানান কারণে উল্লেখযোগ্য  হয়ে আছে। 

১৯৯০ বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৪ সালের ১৯ মে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। সেখানেই ফিফার নিবার্হী কমিটি ইতালিকে নির্বাচিত করে। ইতালি পেয়েছিল ১১টি ভোট এবং তাদের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি সোভিয়েত ইউনিয়ন পেয়েছিল ৫টি ভোট।[৮] এর মাধ্যমে মেক্সিকোর পর দ্বিতীয় জাতি হিসেবে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ অয়োজনের সুযোগ পায় ইতালি।

এর আগে ১৯৩৪ সালে তারা বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল, যেখানে তারা তাদের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে। অস্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্রীস, পশ্চিম জার্মানি এবং ইয়োগোস্লাভিয়াও প্রতিযোগিতার আয়োজক হওয়ার জন্য প্রথমিক আবেদন জমা দিয়েছিল।  এক মাস পর, শুধুমাত্র ইংল্যান্ড এবং গ্রীস, ইতালি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে তাদের আবেদন বহাল রাখে এবং অন্যেরা আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়।  ১৯৮৩ সালের শেষ দিকে চারটি প্রস্তাবই ফিফা কর্তৃক গৃহীত হয়। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৮৪ সালে।

১৯৮৪ সালে প্রথম দিকে, ইংল্যান্ড এবং গ্রীসও তাদের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে, ফলে বাঁকি থেকে যায় শুধু ইতালি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৮৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক বয়কট করা হয়, যা বিশ্বকাপ আয়োজক নির্বাচনেও প্রভাব ফেলে এবং ইতালি প্রায় নিশ্চিতভাবেই নির্বাচনে জয় লাভ করে।  ১১৬টি দেশ ১৯৯০ বিশ্বকাপে প্রবেশ করে। এর মধ্যে ১১৪টি দেশকে খেলতে হয় বাছাইপর্ব (শেষ পর্যন্ত ১০৩টি দেশ বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ করে)।

আয়োজক দেশ হিসেবে ইতালি এবং ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা সরাসরি বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার সুযোগ পায়। অবশিষ্ট ২২টি ফাঁকা স্থান বিভিন্ন মহাদেশীয় কনফেডারেশনের জন্য ভাগ করা হয়। উয়েফার (ইউরোপ) দলগুলোর জন্য ১৩টি, কনমেবলের (দক্ষিণ আমেরিকা) দলগুলোর জন্য ৩টি, সিএএফ (আফ্রিকা) এর দলগুলোর জন্য ২টি, এএফসি (এশিয়া) এর দলগুলোর জন্য ২টি এবং কনকাকাফের (উত্তর ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান) দলগুলোর জন্য ২টি স্থান বরাদ্দ ছিল।

অবশিষ্ট স্থানগুলো নির্ধারিত হয় কনমেবল এবং ওএফসি (ওসেনিয়া) এর মধ্যে প্লে-অফের মাধ্যমে। মেক্সিকো এবং চিলি উভয় দলই বাছাইপর্ব টপকাতে ব্যর্থ হয়। তিনটি দেশ প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়: কোস্টা রিকা, আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় মিশর, যারা ১৯৩৪ সালের পর প্রথমবারের মত সুযোগ পায়।

১৯৫০ সালের পর প্রথমবারের মত সুযোগ পায় যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৬২ সালের পর প্রথমবারের মত সুযোগ পায় কলম্বিয়া। এছাড়া রোমানিয়াও সুযোগ পায়, যারা সর্বশেষ ১৯৭০ সালে ফাইনাল খেলেছিল। বিশ্বকাপের মূলপর্বে অংশগ্রহণে ব্যর্থ দলগুলোর মধ্য হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, পোল্যান্ড এবং পর্তুগাল উল্লেখযোগ্য। ২০১৪ সাল অনুসারে, সোভিয়েত ইউনিয়ন, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এই শেষবারের মত বিশ্বকাপের মূলপর্বে অংশগ্রহণ করে।

 বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য বারোটি শহরের বারোটি স্টেডিয়ামকে নির্বাচিত করা হয়। বারির স্তাদিও সান নিকোলা এবং তুরিনের স্তাদিও দেল্লে আলপি সম্পূর্ণ নতুন স্টেডিয়াম যা বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা হয়। প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি অনুসারে অন্য দশটি স্টেডিয়ামের ব্যাপক মানোন্নয়ন করা হয়। অধিকাংশ স্টেডিয়ামেই অতিরিক্ত আসন এবং ছাদ যোগ করা হয়। গাঠনিক সীমাবদ্ধতার কারণে, কিছু স্টেডিয়ামের কার্যত পুনঃনির্মাণ করা হয়, আবশ্যিক পরিবর্তন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।

অধিকাংশ প্রকল্পের ব্যয় তাদের আনুমানিক ব্যয়কে ছাড়িয়ে যায়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হয় ৫৫০ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি (প্রায় ৯৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। রোমের স্তাদিও অলিম্পিকো ছিল সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প, যেখানে প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। অপরদিকে উদিনের স্তাদিও ফ্রিউলি, মানোন্নয়নের জন্য সবচেয়ে কম খরচ হয়।

এই বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখনো অবধি একমাত্র বিশ্বকাপ যেখানে সব থেকে কম গোল হয়েছিল।  এছাড়াও এযাবৎ একমাত্র বিশ্বকাপ এটি যেখানে সমগ্র টুর্নামেন্টে মোট ১৬টি লাল কার্ড দেখানো হয়। এমনকি এই বিশ্বকাপেই প্রথম টুর্নামেন্ট ফাইনালে কোন খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়। এই বিশ্বকাপ ছিল দূর সম্প্রচারের ইতিহাসে সমগ্র বিশ্বের নিরিখে সব থেকে বেশি মানুষের দেখা কোন অনুষ্ঠান।  এটিই ছিল প্রথম বিশ্বকাপ যেটি হাই ডেফিনিশন ছবির মান সহ সম্প্রচারিত হয়। 

  এই বিশ্বকাপের ম্যাসকটটি ছিল ইতালির পতাকার রঙে সজ্জিত একটি লাঠি। ম্যাসকটটির নাম ছিল ’সিয়াও’ যা ইতালীয় ভাষায় ‘অভ্যর্থনা’ বোঝায়। এই বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত বলটির নাম ছিল – এট্রাস্কো ইউনিকো। এই বিশ্বকাপের ৫২টি ম্যাচে মোট ১১২টি গোল হয়।  ২৪টি দলকে ছয়টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রথম গ্রুপে ছিল – ইতালি,চেকোস্লোভাকিয়া,অস্ট্রিয়া, আমেরিকা।  দ্বিতীয় গ্রুপে ছিল, ক্যামেরুন, রোমানিয়া,আর্জেন্টিনা,সোভিয়েত ইউনিয়ন। তৃতীয় গ্ৰুপে ছিল – ব্রাজিল, কোস্টারিকা,  স্কটল্যান্ড সুইডেন।

চতুর্থ গ্ৰুপে ছিল -ইউগোস্লাভিয়া, পশ্চিম জার্মানি, কলম্বিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। পঞ্চম গ্ৰুপে ছিল – স্পেন, বেলজিয়াম, উরুগুয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া। ষষ্ঠ গ্ৰুপে ছিল -ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্র, নেদারল্যান্ড, মিশর। ফিফা বিশ্বকাপ ১৯৯০ এর ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ১ – ০ গোলে হারিয়ে বিজয়ী হয় পশ্চিম জার্মানি। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান যথাক্রমে ইতালি  ও ইংল্যান্ড অর্জন করে। ইতালির রাজধানী রোমে অবস্থিত স্টাডিও অলিম্পিকো তে ফাইনাল ম্যাচটি খেলা হয়।  পশ্চিম জার্মানির  পক্ষে একমাত্র গোলটি করেন ব্রেহমে।  ইতালির সালভাতোরে স্কিলাচি ৬টি গোল করে এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারটি অর্জন করেন। 

আরো পড়ুন      জীবনী  মন্দির দর্শন  ইতিহাস  ধর্ম  জেলা শহর   শেয়ার বাজার  কালীপূজা  যোগ ব্যায়াম  আজকের রাশিফল  পুজা পাঠ  দুর্গাপুজো ব্রত কথা   মিউচুয়াল ফান্ড  বিনিয়োগ  জ্যোতিষশাস্ত্র  টোটকা  লক্ষ্মী পূজা  ভ্রমণ  বার্ষিক রাশিফল  মাসিক রাশিফল  সাপ্তাহিক রাশিফল  আজ বিশেষ  রান্নাঘর  প্রাপ্তবয়স্ক  বাংলা পঞ্জিকা