ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৯৪ এর ইতিহাস 

ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ  ১৯৯৪ এর  ইতিহাস 

ফিফা বিশ্বকাপ ১৯৯৪ FIFA World Cup 1994 ছিল ফিফা বিশ্বকাপের পঞ্চদশ আসর। এই বিশ্বকাপের আসর ১৭ জুন থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়। সর্বমোট ২৪টি দেশ এই খেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। ফাইনালে ইতালিকে হারিয়ে চতুর্থবারের জন্য বিজয়ী হয় ব্রাজিল। ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে নানান কারণে উল্লেখযোগ্য  হয়ে আছে।  মূলত দিয়েগো মারাদোনা এবং আন্দ্রে এস্কোবার এই দুটি নাম এই বিশ্বকাপের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। 

মারাদোনা এই বিশ্বকাপে এফিড্রিন নামক নিষিদ্ধ মাদক ব্যবহার করে বিশ্বকাপ থেকে নির্বাসিত হন।  অন্যদিকে কলম্বিয়ার ফুটবলার আন্দ্রে এস্কোবার আমেরিকার সাথে ম্যাচ চলাকালীন আত্মঘাতী গোল করায় কলম্বিয়ার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে ইতি পড়ে যায়।  ফলস্বরূপ দেশে ফেরার পর তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও মরক্কো - এ তিন দেশ স্বাগতিক হবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। ৪ জুলাই, ১৯৮৮ তারিখে জুরিখে অনুষ্ঠিত ভোট প্রক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্ধেকেরও বেশি ভোট পেয়ে স্বাগতিক দেশ নির্বাচিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিযোগিতাটি ব্যাপকভাবে সফল হয়। ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকার ছোট্ট স্টেডিয়ামের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের স্টেডিয়ামগুলোর দর্শক ধারণ সক্ষমতায় ব্যাপকসংখ্যক দর্শকের সমাগম ঘটে যা ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের রেকর্ড ভঙ্গ করে।

১৯ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, ইতালি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শীর্ষ দলরূপে চিহ্নিত করে নেভাদার লাস ভেগাসে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ড্র অনুষ্ঠান হয়। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপের ন্যায় একই ধরনের পদ্ধতি বহাল রেখে ২৪ দলকে ৬ গ্রুপে বিভক্ত করে প্রতি গ্রুপে চার দল রাখা হয়। প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল ও তৃতীয় স্থানের সেরা চার দল নিয়ে ১৬ দলের নক-আউট প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। পরবর্তী বিশ্বকাপে ৩২ দল রাখায় এ পদ্ধতির সর্বশেষ ব্যবহার ঘটে।

প্রথমবারের মতো জয়ের জন্য দুই পয়েন্টের পরিবর্তে ৩ পয়েন্টের ব্যবস্থা করা হয়। এর প্রধান কারণ ছিল ১৯৯০ সালে ইতালিতে অনুষ্ঠিত রক্ষণাত্মক খেলার পরিবর্তে আক্রমণধর্মী খেলায় উৎসাহিত করা। চতুর্থবার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী আর্জেন্টাইন দিয়েগো মারাদোনা ওজন হ্রাসজনিত নিষিদ্ধ মাদক এফিড্রিনের রক্তে উপস্থিতি ও মাদক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কৃত হন। কলম্বিয়া দলের ডিফেন্ডার আন্দ্রেস এস্কোবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে আত্মঘাতি গোল করলে দলটি প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেয়। দশদিন পর মেডেলিনের উপকণ্ঠে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। 

এই বিশ্বকাপেই প্রথম সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গঠিত রাশিয়া এবং পূর্ব পশ্চিম জার্মানি সংযুক্ত হয়ে তৈরী হওয়া জার্মানি প্রথমবারের জন্য অংশগ্রহণ করে। এটাই ছিল প্রথম বিশ্বকাপ যেখানে বিজয়ী দলকে দুই নম্বরের বদলে তিন নম্বর দেওয়ার নিয়ম চালু হয়।  এই বিশ্বকাপেই প্রথম ফাইনাল ম্যাচ সম্পূর্ণ হয় টাইব্রেকার পেনাল্টি তে। এই বিশ্বকাপেই রুশ ফুটবলার ওলেগ সালেংকো একটি ম্যাচে পাঁচ গোল করেন। এখনো অবধি বিশ্বকাপের কোন একটি ম্যাচে একজন ব্যক্তির করা পাঁচ গোলের এই রেকর্ড অক্ষুণ্ন আছে।

এই বিশ্বকাপেই ক্যামেরুনের ফুটবলার রজার মিল্লা ৪২ বছর বয়সে খেলতে নেমে সর্বাধিক বয়সী ফুটবলার হিসেবে রেকর্ড করেন।  এই বিশ্বকাপের ম্যাসকটটি ছিল আমেরিকার জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি পরিহিত একটি কুকুর। ম্যাসকটটির নাম ছিল ‘স্ট্রাইকার, দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ পাপ(Striker, the World Cup Pup)। আমেরিকায় কুকুর পোষার ব্য[ব্যাপক চল আছে। 

মূলত এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই ম্যাসকটটি বানায় বিখ্যাত সিনেমা প্রযোজনা সংস্থা ওয়ার্নার ব্রাদার্স। এই বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত বলটির নাম ছিল – কোয়েস্ট্রা। এই বিশ্বকাপের ৫২টি ম্যাচে মোট ১৪১টি গোল হয়।  ২৪টি দলকে ছয়টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রথম গ্রুপে ছিল – রোমানিয়া, সুইজারল্যান্ড, আমেরিকা, কলম্বিয়া। দ্বিতীয় গ্রুপে ছিল –  ব্রাজিল, সুইডেন, রাশিয়া, ক্যামেরুন।

তৃতীয় গ্ৰুপে ছিল – জার্মানি, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, বলিভিয়া। চতুর্থ গ্ৰুপে ছিল –   নাইজেরিয়া, বুলগেরিয়া, আর্জেন্টিনা, গ্রিস। পঞ্চম গ্ৰুপে ছিল – আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্র, মেক্সিকো, ইতালি, নরওয়ে। ষষ্ঠ গ্ৰুপে ছিল – নেদারল্যান্ড, সৌদি আরব, মরোক্কো, বেলজিয়াম । ফিফা বিশ্বকাপ ১৯৯৪ এর ফাইনালে ইতালিকে টাই ব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে বিজয়ী হয় ব্রাজিল।

এটি ছিল ব্রাজিলের চতুর্থবার বিশ্বকাপ জয়।   তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান যথাক্রমে সুইডেন ও বুলগেরিয়া অর্জন করে। আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত পাসাডেনা শহরের রাইস বোল স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচটি খেলা হয়।  ব্রাজিলের পক্ষে তিনটি গোল করেন যথাক্রমে রোমারিও, ব্র্যাঙ্কো এবং দুঙ্গা এবং ইতালির পক্ষ থেকে দুটি গোল করেন – আলবার্তিনী এবং এভানি।   বুলগেরিয়ার রিস্টো স্টোইচকোভ এবং রাশিয়ার ওলেগ সালেংকো প্রত্যেকে  ৬টি গোল করে এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারটি ভাগ করে নেন। 

আরো পড়ুন      জীবনী  মন্দির দর্শন  ইতিহাস  ধর্ম  জেলা শহর   শেয়ার বাজার  কালীপূজা  যোগ ব্যায়াম  আজকের রাশিফল  পুজা পাঠ  দুর্গাপুজো ব্রত কথা   মিউচুয়াল ফান্ড  বিনিয়োগ  জ্যোতিষশাস্ত্র  টোটকা  লক্ষ্মী পূজা  ভ্রমণ  বার্ষিক রাশিফল  মাসিক রাশিফল  সাপ্তাহিক রাশিফল  আজ বিশেষ  রান্নাঘর  প্রাপ্তবয়স্ক  বাংলা পঞ্জিকা