ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৯৮ এর ইতিহাস 

ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৯৮ এর  ইতিহাস 

ফিফা বিশ্বকাপ ১৯৯৮ FIFA World Cup 1998 ছিল ফিফা বিশ্বকাপের ষষ্ঠদশ আসর। এই বিশ্বকাপের আসর ১০ জুন থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হয়। সর্বমোট ৩২টি দেশ এই খেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে বিজয়ী হয় ফ্রান্স। ১৯৯৮ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে নানান কারণে উল্লেখযোগ্য  হয়ে আছে। বত্রিশ দিন ধরে চলা এই বিশ্বকাপ এখনো অবধি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবথেকে দীর্ঘ টুর্নামেন্ট।

  এই বিশ্বকাপ থেকেই ২৪টি দলের নির্ধারিত সীমা বাড়িয়ে ফিফা বিশ্বকাপ খেলার জন্য ৩২টি দলকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়। এই বিশ্বকাপেই প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকা বর্ণ বৈষম্য প্রথার বিলোপ সাধনের পর ফুটবল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে।  রিকি মার্টিনের গাওয়া এই বিশ্বকাপের অফিসিয়াল গান – ‘দ্য কাপ অব লাইফ’ গানটি সারা বিশ্বে তুমুল জনপ্রিয় হয় এবং জনতার বিচারে কোন বিশ্বকাপ সংক্রান্ত সর্বাধিক জনপ্রিয় গানের তকমা পায়।

তারকা স্ট্রাইকার জিনেদিন জিদানের একক নৈপুণ্যে প্রথমবারের মতো ১৯৯৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নের খাতায় নাম লেখায় ফ্রান্স। দেশকে বিশ্বকাপ উপহার দিয়ে ফ্রান্সের নায়ক বনে যান জিদান। আগের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন বনাম স্বাগতিকদের মধ্যকার ফাইনাল খেলাটি জমজমাট একটি ম্যাচ হবে বলেই ধরে নিয়ে ছিলেন বিশ্ববাসী। কিন্তু সে দিনের খেলা দেখে মনে হয়েছে এক জিদানকেই সামলাতে হিমশিম খেয়েছে সাবেক চ্যাম্পিয়নরা।

কর্ণার থেকে পাওয়া বল দুই দুই বার হেড দিয়ে গোল করে প্রথমার্ধেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলের বড় ব্যবধানেই শিরোপা জেতে স্বাগতিকরা। কিন্তু ঐ ম্যাচে ব্রাজিলের তারকা স্ট্রাইকার রোনালদোর ভূমিকা নিয়েই বিশ্বব্যাপী আলোচনা কম হয়নি। ফাইনাল ম্যাচের কিছুক্ষণ আগে থেকে স্নায়ুরোগে ভুগছিলেন রোনালদো। তারপরও তাকে প্রথম লাইন আপে রাখা নিয়েও সমালোচনা হয়েছে।

 সেই সময়ের বিবিসির ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার জন মটসনের ভাষায়, ফাইনাল ম্যাচে রোনালদোকে খেলানো নিয়েই ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই নানা নাটকীয়তা মঞ্চস্থ হয়। তিনি বলেন, সেই সময়ে আমার রিপোর্টার সহকর্মী ধারাভাষ্য বক্সের সামনে পেলেকে দেখতে পেয়ে জানতে চায়—কী ঘটছে? জবাবে পেলে বলেছিলেন, আমি কিছুই জানি না। শেষ পর্যন্ত স্নায়ুরোগ নিয়েই মাঠে নামেন রোনালদো। কিন্তু মাঠে রোনালদোর কোনো প্রতিচ্ছবি-ই খুঁজে পায়নি দর্শক। কিন্তু আগের দিন রাতেই হোটেল রুমে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন রোনালদো।

কয়েক মিনিটের জন্য অজ্ঞানও ছিলেন। তাকে হাসপাতালেও নেওয়া হয়েছিল। ঐ ঘটনার ১৬ বছর পর ২০১৪ সালে এক সাক্ষাত্কারে রোনালদো বলেন, আমাকে তিন ঘণ্টা হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। সেখানে আমার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, আমাকে ওষুধ দেওয়া হয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর কোনো পরিসমাপ্তি মেলেনি। সেবার আমার এমন খিঁচুনি হয়েছিল যা আগে কখনোই হয়নি।

ফাইনাল ম্যাচের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষ দলের সবচেয়ে বড় তারকা খেলোয়াড়ের এমন অসুস্থতা তাই স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। ফ্রান্সের তারকা খেলোয়াড় এবং ১৯৯৮ বিশ্বকাপের অন্যতম কর্তা, আয়োজক কমিটির যুগ্ম প্রধান মিশেল প্লাতিনিও ২০১৮ সালে বলেছেন, ফ্রান্সকে চ্যাম্পিয়ন করতে আগে থেকেই তারা কিছু অসত্ পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।

ড্র তে ব্রাজিল ও ফ্রান্সকে এমন জায়গায় রেখেছিলেন, ফাইনালের আগে যাতে কোনোভাবেই ব্রাজিলের মুখোমুখি না হতে হয়। সেইভাবেই সব কিছু সাজিয়েছিলেন তারা। ফাইনাল ম্যাচে খেলতে আসার বাসেও ব্রাজিলিয়ানদের সবার মধ্যে উৎকণ্ঠা ছিল—রোনালদোকে খেলায় পাওয়া না পাওয়া নিয়ে। বাসে সবাই ছিলেন নিরব। কোনো উত্তেজনা ছিল না কারো মধ্যে। ফাইনাল ম্যাচের আগে পুরো ব্রাজিল দলকেই নিষ্প্রাণ মনে হয়েছে। ফাইনালে খেলতে নামা একটি দলের এমন নিষ্প্রাণ চেহারা এবং বিমর্ষ পারফরম্যান্স মানুষকে আজো ভাবায়। তাই ফাইনালের আগের রাতে বিপক্ষ দলের তারকা খেলোয়াড়ের এই অসুস্থতা এবং মাঠে তার পারফরম্যান্স রহস্যের ধূম্রজাল হয়েই রয়ে গেছে। 

এই বিশ্বকাপেই ফিফার অনুমোদনে ফিফা – ৯৮ ভিডিও গেমটি বাজারে প্রকাশ পায় যা পরবর্তীকালে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।     এই বিশ্বকাপের ম্যাসকটটি ছিল ফ্রান্সের জাতীয় দলের জার্সি পরিহিত একটি মোরগ। ম্যাসকটটির নাম ছিল ‘ফুটিক্স’। এই বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত বলটির নাম ছিল – ট্রাইকোলোরে। এই বিশ্বকাপের ৬৪টি ম্যাচে মোট ১৭১টি গোল হয়। 

৩২টি দলকে আটটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রথম গ্রুপে ছিল – ব্রাজিল, নরওয়ে, মরোক্কো, স্কটল্যান্ড। দ্বিতীয় গ্রুপে ছিল – ইতালি, চিলি, অস্ট্রিয়া, ক্যামেরুন।   তৃতীয় গ্ৰুপে ছিল – ফ্রান্স, ডেনমার্ক, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা। চতুর্থ গ্ৰুপে ছিল – নাইজেরিয়া, প্যারাগুয়ে, বুলগেরিয়া, স্পেন। পঞ্চম গ্ৰুপে ছিল – নেদারল্যান্ড, মেক্সিকো, বেলজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া। ষষ্ঠ গ্ৰুপে ছিল – জার্মানি, এফ আর ইউগোস্লাভিয়া, ইরান, আমেরিকা।

সপ্তম গ্ৰুপে ছিল – রোমানিয়া, ইংল্যান্ড, কলম্বিয়া, তিউনিশিয়া। অষ্টম গ্ৰুপ ছিল  – আর্জেন্টিনা, ক্রোয়েশিয়া, জামাইকা, জাপান।   ফিফা বিশ্বকাপ ১৯৯৮ এর ফাইনালে ব্রাজিলকে ০ -৩ গোলে হারিয়ে বিজয়ী হয় ফ্রান্স। এটি ছিল ফ্রান্সের প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান যথাক্রমে ক্রোয়েশিয়া ও নেদারল্যান্ড অর্জন করে। ফ্রান্সের সেন্ট ডেনিসে অবস্থিত স্টেইড দে ফ্রান্স স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচটি খেলা হয়।  ফ্রান্সের পক্ষে দুটি গোল করেন জিনেদিন জিদান এবং পেটিট করেন একটি গোল।   ক্রোয়েশিয়ার  ডাভর সুকের ৬টি গোল করে এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারটি ভাগ করে নেন।  

আরো পড়ুন      জীবনী  মন্দির দর্শন  ইতিহাস  ধর্ম  জেলা শহর   শেয়ার বাজার  কালীপূজা  যোগ ব্যায়াম  আজকের রাশিফল  পুজা পাঠ  দুর্গাপুজো ব্রত কথা   মিউচুয়াল ফান্ড  বিনিয়োগ  জ্যোতিষশাস্ত্র  টোটকা  লক্ষ্মী পূজা  ভ্রমণ  বার্ষিক রাশিফল  মাসিক রাশিফল  সাপ্তাহিক রাশিফল  আজ বিশেষ  রান্নাঘর  প্রাপ্তবয়স্ক  বাংলা পঞ্জিকা