দুই বাংলার আবেগে কাঁটাতার ভুলে আজও নস্করি মা উজ্জ্বল

দুই বাংলার আবেগে কাঁটাতার ভুলে আজও নস্করি মা উজ্জ্বল

আজও দুই বাংলার আবেগে থেকে গিয়েছে নস্করি মা। সীমান্তের কাঁটাতার, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ইনসাস রাইফেল, ভারী বুুুটের শব্দ নস্করি মায়ের মাহাত্ম্যের কাছে সবই ফিকে। তাইপুজোর ক'টা দিন কাঁটাতার ভুলে উমার আগমনে মেতে ওঠেন সীমান্তবাসী। শিউলি ফুলের বোঁটার রঙের রণংদেহি দেবী দুই দেশের ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে মিলনোৎসব গড়ে তোলে।

দুই পাড়ের মানুষের বিশ্বাস, মানত করলে মনস্কামনা পূর্ণ হয়। কাঁটাতারে প্রবল কড়াকড়ির মধ্যেও ওপারের প্রচুর মানুষ দেবী দর্শনে আসেন। তারা দেবীর পছন্দের দুধ, চিনি সন্দেশ সহ পুজোর উপকরণ দেন। ওপারের প্রচুর মূদ্রাও প্রণামীতে পড়ে।এখনও দুই বাংলার সীমান্তের জনপদের মানুষ নস্করিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আখ্যান-উপাখ্যানে বুঁদ হয়। বাংলা ৯৫০ সনে এই নস্করি মায়ের পুজো শুরু হয়েছিল।

কথিত আছে, নস্কর বর্মণ নামে এক সাধু এই পুজোর সূচনা করেন। বাংলাদেশের ভেড়ামারায় এক জমিদার বাড়িতে প্রতিমাকে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে প্রবল ঝড়, বৃষ্টি হয়। পুজো আটকে যায়।রাতে নস্কর সাধু স্বপ্নাদেশ পান। পুজো ওইখানেই করতে হবে। সেই মতোই পুজো শুরু করা হয়। তারপর থেকেই নস্করি মা'র পুজো নামে খ্যাতি লাভ করে। জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজো করে মায়ের প্রতিষ্ঠা শুরু হয়।

রীতি মেনেই কৃষ্ণনবমীতে নিমগাছ তলায় দেবীর বোধন হয়। গোটা এলাকায় একসময় ঘন জঙ্গল ছিল। শ্মশানও গড়ে ওঠে। সেখানেই পঞ্চমুণ্ডের আসনে বসে পুজো করা হত। এখন  জঙ্গল বা শ্মশান নেই। পুজোও তান্ত্রিক মতে হয় না। কুমড়ো, ফল দিয়েই হয় বলি। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে চট্টোপাধ্যায় পরিবার।চট্টোপাধ্যায় পরিবার সূত্রে জানা যায়, এক সময় নস্কর সাধু নিম গাছের নিচে বসে তপস্যা করত। তিনি মারা যাওয়ার পর এই বংশের প্রসন্ন রায়, শ্যামল চট্টোপাধ্যায়রা পুজোর হাল ধরেন। সপ্তমীর দিন অন্নভোগ, অষ্টমীতে লুচি, ক্ষীর হয়। নবমীতে খিচুড়ি, পাঁচ ভাজা, অন্নভোগ ও দশমীতে খই-দই ভোগ দেওয়া হয় মাকে।

নস্করি মায়ের পুজো এবার ৪৭৮ বছরে পড়ল। জেলা ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নস্করি মাকে দেখতে মানুষ আসেন। তাই দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে মিলনোৎসব হয়ে ওঠে। দশমীতে নস্করিতলা থেকে হোগলবেড়িয়া বাজার হয়ে কুঠিরঘাট পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার পথ নস্করি মাকে কাঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। বিসর্জনের আগে দেবীকে কুঠিরঘাট থেকে হোগলবেড়িয়া বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার পথ সাতবার অতিক্রম করা হয়। 

এ দৃশ্য দেখতে পথের দু’ধারে প্রচুর মানুষ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর নস্করিকে কুঠিরঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। নিষ্ঠা আন্তরিকতার সঙ্গে হওয়া জাগ্রত নস্করি মায়ের পুজোকে কেন্দ্র করে পুজোর দিনগুলো এবার আর নাগরদোলা, মেলা বসছে না। তবে সংখ্যায় কম হলেও চিনি সন্দেশের দোকান মন্দির থেকে দূরত্ব মেনে করা হবে।

আরো পড়ুন      জীবনী  মন্দির দর্শন  ইতিহাস  ধর্ম  জেলা শহর   শেয়ার বাজার  কালীপূজা  যোগ ব্যায়াম  আজকের রাশিফল  পুজা পাঠ  দুর্গাপুজো ব্রত কথা   মিউচুয়াল ফান্ড  বিনিয়োগ  জ্যোতিষশাস্ত্র  টোটকা  লক্ষ্মী পূজা  ভ্রমণ  বার্ষিক রাশিফল  মাসিক রাশিফল  সাপ্তাহিক রাশিফল  আজ বিশেষ  রান্নাঘর  প্রাপ্তবয়স্ক  বাংলা পঞ্জিকা