নয়া প্রতারণার ফাঁদে হলদিয়ার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক

নয়া প্রতারণার ফাঁদে হলদিয়ার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক

সাইবার ক্রাইম প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার খোয়ালেন তমলুক জেলা তৃণমূলের সাংগঠনিক সভাপতি তথা হলদিয়ার প্রাক্তন বিধায়ক তুষার মণ্ডল। জানা গিয়েছে, সুতাহাটা বাজারে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে পার্টি অফিসের ছাদে মিটিং চলাকালীন হঠাৎই তুষার মণ্ডলের মোবাইলে অপরিচিত নম্বর থেকে একটি ফোন আসে। ফোনে (সাইবার ক্রাইম প্রতারকেরা) বলেন, আপনার বাড়ির বিদ্যুতের বিল বাকি রয়েছে।

এই মুহূর্তে বিল না মেটালে আপনার বাড়ির লাইন কেটে দেওয়া হবে। এই বলে হুমকি দেন। মিটিং চলাকালীন তুষার বাবু জানতে চাইলেন কোন জায়গা থেকে ফোন করছেন? ওই ব্যক্তি জানান ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন তথা সিইএসসি দফতর থেকে। তারপরই পরপর ঘটে যায় ঘটনা! হলদিয়ার সুতাহাটার বাসিন্দা তুষার মণ্ডল বলেন, কয়েকদিন আগে অনলাইনে বিদ্যুতের বিল পেমেন্ট করেছেন।

প্রতারকদের সঙ্গে ফোনে প্রশ্ন-উত্তর চলেছে তুষার মণ্ডলের। প্রতারকরা বলেন অনলাইনের বিল মেটানোর আপডেট এখনও পর্যন্ত হয় না। শিল্পশহর এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক নেতা শেষ পর্যন্ত প্রতারকের ফাঁদে পড়েন। সাইবার ক্রাইম প্রতারকরা তুষার মণ্ডলকে একটি অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে বিল আপডেট হয়ে যাবে বলে টোপ দেয়। ওই অ্যাপ ইনস্টল করার পর বারবার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ক্লিক করতে বলা হয়।

একদিকে মিটিং চলছে ওই সময় তুষার বাবু বিরক্ত হয়ে যান। তাঁরা ধমক দিয়ে ফের ক্লিক করতে বলে। তিনি রেগে গিয়ে ফোন কেটে দেন। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে তুষার মণ্ডলের পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা লোপাট হয়ে যায়। তুষার মণ্ডলের মোবাইলে পর পর উইথড্র মেসেজ ঢুকতে থাকে। ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে সব মিলিয়ে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ২৪১ টাকা গায়েব হয়ে যায় মুহূর্তে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, রাত ন'টা থেকে দশটার মধ্যে ওই টাকা খোয়া গিয়েছে। তিনি সুতাহাটা থানার পুলিশের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন। এ দিকে পৃথক এক ঘটনায় খুব সম্প্রতি সাইবার ক্রাইম অপরাধীদের খপ্পরে পড়ে ২১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা খুইয়ে ছিলেন মহিষাদল ব্লকের কেশবপুর জালপাই গ্রামের বাসিন্দা, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বীথিকা মাইতি।

সাইবার ক্রাইম রুখতে সচেতনতা শিবিরের সভা জেলা জুড়ে বিভিন্ন কলেজ এবং গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক এলাকায় চলছে।  পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সাইবার থানার আধিকারিকরা জানিয়েছেন, জেলা জুড়ে বিভিন্ন কলেজে গিয়ে সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম প্রতারকদের প্রতারণা ঠেকাতে মাইকিং করা হচ্ছে এলাকাভিত্তিক। মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তারপরেও টাকা খোয়াচ্ছেন মানুষ।

কখনও ইলেকট্রিক বিল দেওয়া, কখনও আধার ও ভোটার কার্ডের লিঙ্ক করতে হবে, কখনও ব্যাংকে ও রান্নার গ্যাস কানেকশনে KYC আপডেট করতে হবে, কখনও 'কোন বানেগা ক্রোড়পতি'-তে লটারির টাকা পাওয়ার জন্য টোপ দেওয়ার ঘটনা। আবার কখনও অনলাইন অফার যেমন, দামী কোন জিনিস হোম থিয়েটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি অর্ধেক দামে পাইয়ে দেওয়ার টোপ দেয়। কখনও- কখনও সুন্দরী যুবতী মহিলাদের সঙ্গে ভিডিওতে একান্ত সাক্ষাৎকার করার নামকরে প্রতারিত করার পর অপরাধীরা টাকা লুট করে।

জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার প্রতিটি থানায় একটি নির্দেশ জারি করেছেন ,দু লক্ষ (২) টাকার কম হলে সাইবার ক্লাইম প্রতারিত ব্যক্তিরা লোকাল থানায় অভিযোগ দায়ের (FlR)করতে পারবে। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ব্যক্তিরা সাইবার ক্রাইম প্রতারকদের প্রতারণায় প্রতারিত হচ্ছে। তাদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে পুলিশ সুপার প্রতিটি থানায় অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন।