জয় মা মনসা| জেনে নিন মা মনসার পূজা পদ্বতি

জয় মা মনসা|  জেনে নিন মা মনসার পূজা পদ্বতি

আজবাংলা     আজ বাঙালীর ঘরে ঘরে শ্রদ্ধার সাথে পুজো হচ্ছে ভূজঙ্গনা দেবী মনসার। উল্লেখ্য, এই পুজোয় দেবীকে অতি শ্রদ্ধার সাথে পুজা করা হয় পাছে সর্প দংশন করে তাই সে দোষ কাটাতে আপামর বাঙালীর ঘরের মহিলা মাটির সরায় দুধ-কলা দিয়ে সর্পকে পুজো করেন। এদিন, মহিলারা উপবাস থাকেন ও পুজো শেষে শাগু-দুধ-কলা ইত্যাদি উপাদেয় উপকরন দিয়ে নিজেদের উপবাস ভাঙ্গেন।

আবার অনেক বাড়িতে দেবী মনসার বড় মূর্তি তুলে পুজো করা হয় পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের মানুষদের দেবীর পুজোর ভোগ খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়। আসলে মনসার পুজোর শুরু হলো কি করে তার কিছু ইতিহাস নিন্মে সংক্ষেপে উল্লেখিত করা হলো।মনসামঙ্গল কাব্যধারার একটি কিংবদন্তি চরিত্র।

তিনি ছিলেন প্রাচীন ভারতের চম্পক নগরের একজন ধনী ও ক্ষমতাশালী বণিক। বিপ্রদাস পিপলাই তাঁর মনসামঙ্গল কাব্যে উল্লেখ করেছেন যে, চাঁদ সদাগরের বাণিজ্যতরী সপ্তগ্রাম ও গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত ত্রিবেণী হয়ে সমুদ্রের পথে যাত্রা করত। চাঁদ সদাগরের উপাখ্যানের সঙ্গে সর্পদেবী মনসার পূজা প্রচারের কাহিনিটি জড়িত।

পুজোর পদ্ধতি---অধিকাংশ ক্ষেত্রে, প্রতিমায় মনসা পূজা করা হয় না। মনসা পূজিতা হন স্নুহী বা সীজ বৃক্ষের ডালে অথবা বিশেষভাবে সর্পচিত্রিত ঘট বা ঝাঁপিতে। যদিও কোথাও কোথাও মনসা মূর্তিরও পূজা হয়। বিশেষ করে বাংলার গ্রামে গ্রামে মনসা পূজা বহুল প্রচলিত। এই অঞ্চলে মনসার মন্দিরও দেখা যায়। বর্ষাকালে সাপেদের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে বলে এই সময়ই মনসা পূজা প্রচলিত। শ্রাবণ মাসে নাগপঞ্চমীতেও মনসার পূজা করা হয়। বাঙালি মেয়েরা এই দিন উপবাস ব্রত করে সাপের গর্তে দুধ ঢালেন।

হাতের তালুতে দু-এক ফোঁটা জল নিয়ে ‘ওঁ বিষ্ণু’ মন্ত্রে পান করবেন। মোট তিন বার এইভাবে জল পান করতে হবে। তারপর করজোড়ে বলবেন—
ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্।
ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।।
‘ওঁ বিষ্ণু’‘ওঁ বিষ্ণু’‘ওঁ বিষ্ণু’


========>>
মস্তকে তুলসী রেখে বলবেন :
নমঃ তুলসী দর্শনে পুণ্য
স্পর্শনে পাপ নাশন
স্মরণে তির্থানি
ভক্তিমে মুক্তি লক্ষণ নমঃ
========>>


মনসা ধ্যান :


ওঁ দেবীমন বামহীনাং শশধর বদনাং চারুকান্তি বদান্যাং হংসারুঢ়া উদারাং সুললিত নয়নাং সেবিতা সিদ্ধিকামৈঃ। স্মেরাস্যাং মণ্ডিতাঙ্গীং কণক মণি গণৈর নাগ রত্নৈরনেকৈর বন্দেহহং সাষ্টনাগম উরু কুচ যুগলাং ভোগিনীং কামরূপাং।
=========>>


মনসা অঞ্জলি :


১)আস্তিকস্য মুনের মাত জগৎ আনন্দকারিনী। এহ্যেহি মনসাদেবী নাগমাতা নমোহস্তুতে।
-----------এসো স্ব চন্দন বিল্বপত্র পুস্পাঞ্জলি ওঁ শ্রী মনসা দেবিভ্যই নমঃ।।
২)আগচ্ছে বরদা দেবী সর্ব কল্যাণ কারিনী। সর্পভয় বিনাশিনী মনসা দেবী নমোহস্তুতে।
-----------এসো স্ব চন্দন বিল্বপত্র পুস্পাঞ্জলি ওঁ শ্রী মনসা দেবিভ্যই নমঃ।।
৩)আস্তিকস্য মুনির মাতা ভগিনী বাসুকেস্তথা। জরৎকারু মুনে পত্নী মনসাদেবী নমোহস্তুতে।
-----------এসো স্ব চন্দন বিল্বপত্র পুস্পাঞ্জলি ওঁ শ্রী মনসা দেবিভ্যই নমঃ।।
========>>


প্রণাম মন্ত্রঃ
ওঁ অযোনিসম্ভবে মাতর্মহেশ্বরসুতে শুভে । পদ্মালয়ে নমস্তুভ্যং রক্ষ মাং বৃজিনার্ণবাত্ । আস্তিকস্য মুনের্মাতা ভগিনী বাসুকেস্তথা । জরত্কারুমুনেঃ পত্নী মনসাদেবী নমোহস্তু তে ॥

দেবী মনসার বারােটি নাম : জরৎকারু , জগৎগৌরী , মনসা , সিদ্ধযােগিনী , বৈষ্ণবী , নাগভগিনী , শৈবী , নাগেশ্বরী , জরৎকারুপ্রিয়া , আস্তীকমাতা , বিষহরী ও মহাজ্ঞানযুতা- এই দ্বাদশ নামে দেবীর কোন রূপের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে , বলুন তাে ? একদম ঠিক , এই বারােটি নাম স্বয়ং দেবী মনসার । স্তোত্রে বলা হয়েছে , জরৎকারুজগদগৌরী মনসা সিদ্ধযােগিনী । বৈষ্ণবী নাগভগিনী শৈবী নাগেশ্বরী তথা ।। জরৎকারুপ্রিয়াস্তীকমাতা বিষহরীতি চ । মহাজ্ঞানযুতা চৈব সা দেবী বিশ্বপূজিতা ।। দ্বাদশৈতানি নামানি পূজাকালে চ জঃ পঠেৎ । তস্য নাগভয়ং নাস্তি তস্য বংশােদ্ভবস্য চ ।। দেবী মনসার এই বারােটি নামে সমগ্র বিশ্বে পূজিতা । পূজাকালে এই বারােটি নাম স্মরণ করলে স্মরণকারী নিজে বা তাঁর বংশের সকলে সর্পভয় থেকে মুক্ত থাকেন ।