গুয়াতেমালা | সনাতনী ধর্ম ও মায়া সংস্কৃতির দেশ গুয়াতেমালা

গুয়াতেমালা | সনাতনী ধর্ম ও মায়া সংস্কৃতির দেশ গুয়াতেমালা

মধ্য আমেরিকার কেন্দ্রীয় দেশ হচ্ছে গুয়াতেমালা। এই দেশের উত্তর ও পশ্চিম দিকে আছে মেক্সিকো। দক্ষিণ-পশ্চিমে আছে প্রশান্ত মহাসাগর। উত্তর-পূর্বে রয়েছে বেলিজে। পূর্বে রয়েছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং হান্ডুরাস। আর দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে এল সালভাদোর। জনসংখ্যা • জুলাই ২০১১ আনুমানিক ১৩,৮২৪,৪৬৩।গুয়াতেমালার সংস্কৃতি পুরাতন আর নূতনের মিশ্রণ। এর বিরাটসংখ্যক আদিবাসী জনগণ এখনও প্রাচীন রীতিনীতি ধরে রেখেছে। অন্যদিকে গুয়াতেমালা সিটি ও অন্যান্য শহর এলাকাকে কেন্দ্র করে লাদিনোরা আধুনিক ইউরোপীয় ও উত্তর আমেরিকান ধাঁচের জীবনযাপন করে। গুয়াতেমালার পল্লী উচ্চভূমির জীবনে মায়া সংস্কৃতির শেকড় এখনও গভীর।

এসব এলাকায় এখনও বহু আদিবাসী মানুষ কোন না কোন মায়া ভাষাতে কথা বলেন, সনাতনী ধর্ম ও গ্রামীণ রীতিনীতি পালন করেন এবং ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র ও অন্যান্য হস্তশিল্প প্রস্তুত করে থাকেন। লাদিনো ও মায়া সংস্কৃতির এই সহাবস্থান গুয়াতেমালার সমাজে জটিলতার সৃষ্টি করেছে, যে সমাজে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য প্রকট।এই বিভাজন গুয়াতেমালার ইতিহাসের নানা টানাপোড়েন ও সংঘাতের প্রধান উৎস।অপরূপ প্রাকৃতিরক শোভায় শোভিত গুয়াতেমালার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মায়া সভ্যতার নাম। কারণ, ৮০০ খীষ্ট্রপূর্বার্দে এই গুয়াতেমালা ছিল মায়া সভ্যতার পীঠস্থান। আজও গুয়াতেমালার জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে মায়া সভ্যতার সব চিহ্ন।

বলতে গেলে পরতে পরতে মায়া সভ্যতার ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে গুয়াতেমালাকে। মায়া সভ্যতার অবলুপ্তির দীর্ঘ কয়েক শতকপরে গুয়াতেমালাকে দখল করেছিল স্প্যানিশরা। ষোল শতকে স্প্যানিশরা তাঁদের উপনিবেশ হিসাবে গুয়াতেমালাকে পরিণত করেছিল। স্প্যানিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর গুয়াতেমালার বর্তমান নাম রিপাবলিক অফ গুয়াতেমালা।এছাড়াও 'গাছেদের দেশ' বলেও অনেকে গুয়াতেমালাকে ডেকে থাকেন।  গুয়াতেমালার রাজধানী গুয়াতেমালার সিটি থেকে এর দূরত্ব ৫৮৮ কিলোমিটার। তিকাল পেটেল আসলে মায়া সভ্যতার এক জ্বলন্ত নির্দশন। যার স্থাপত্য এবং গাত্রে থাকা বিভিন্ন নকসা মায়া সভ্যতার এক ইতিহাসের দিকেই ইসারা করে।

একদম গহন জঙ্গলের মধ্যে এই তিকাল পেটেন। বলা হয় এখানে নাকি আজও লুকিয়ে আছে মায়া সভ্যতার অজানা নানা রহস্য।  এক অপরূপ প্রাকৃতিক শোভায় মণ্ডিত গুয়াতেমালার ছবি। এই স্থানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঔপনিবেশিক ইতিহাস। অ্য়ান্টিগুয়া গুয়াতেমালাকে ঘিরে রয়েছে একাধিক সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। এই স্থানটি একটি ভ্যালির উপরে। গুয়াতেমালা সিটি থেকে এই স্থানের দূরত্ব ৪৭ কিলোমিটার।গুয়াতেমালার পর্যটনে এই স্থানটি যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের অন্যতন এক সুন্দর সরোবর এই অ্যাটিটলান লেক। প্রাকৃতিক শোভার ঋদ্ধ এই সরোবরকে ঘিরে রয়েছে বেশ কয়েকটি আগ্নেগিরি। বহু পর্যটক আবার এই তিন আগ্নেয়গিরিতে ট্রেকিং-ও করেন। গুয়াতেমালার বাসিন্দারা বলেন, এই সরোবরেই মায়া সভ্যতা ও ক্যাথলিক খীষ্ট্র ধর্ম একে অপরের হাত ধরাধরি করেছে।

গুয়াতেমালা সিটি থেকে এই স্থানের দূরত্ব ১৪৪ কিলোমিটার।  বিশ্বের অন্যতম এক পরিচিত আগ্নেয়গিরি এই পাচায়া। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু পর্যটক শুধু আসেন এই পাচায়া আগ্নেয়গিরিতে ট্রেকিং-এর জন্য। বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে একটি এই পাচায়া। একদম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি এটি। কিন্তু, এর ট্রেকিং রুট এতটাই অসাধারণ যে পর্যটকরা তার হাতছানিকে অগ্রাহ্য করতে পারেন না।

পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে গনগনে লাভার স্রোত আর তাকে পাশ কাটিয়ে উঠে যাচ্ছে পর্যটকরা। এ এক পরিচিত ছবি।   প্রকৃতির সৃষ্টি কেমন অবাক করা হতে পারে তার যেন নিদর্শন এই সেমাক চ্যাম্পে। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া কাহাবন রিভারএর উপরে তৈরি হয়েছে প্রাকৃতিক সাঁকো।এর এই নদীর তলদেশে রয়েছে চুণা পাথরের বিশাল ভাণ্ডার। এর ফলে নদীর জলে তৈরি হয়েছে এক রঙিন রহস্য। বলতে গেলে নদীর উপরে তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক সাঁকো আর তলদেশের চুণা পাথর এক মায়ার জগৎ তৈরি করেছে। তারমধ্যে এই নদীপথে জঙ্গলের স্থানে স্থানে রয়েছে ছোট ছোট ঝরণা এবং অগভীর লেক। যাতে সূর্যের আলো এক মায়াবি পরিবেশের জন্ম দেয়।

গুয়াতেমালা সিটি থেকে এই স্থানের দূরত্ব ২৯৬ কিলোমিটার।  কেমন ছিল মায়া সভ্যতা? কেমন ছিল মায়া সভ্যতার আমলের ব্যবসায়িক লেনদেনের পদ্ধতি? তারই স্মৃতি বহন করছে ছি-ছি কাস্তেনানগো। আসলে একটি বাজার। যেখানে আজও ব্যবসায়িক লেনদেন হয় মায়া সভ্যতার নিয়ম-কানুনকে মাথায় রেখে।এই বাজারে বিক্রি হওয়া জিনিসপত্র থেকে শুরু করে এর আবহ এক আকর্ষণ তৈরি করে পর্যটকদের কাছে। গুয়াতেমালা সিটি থেকে ১৪৬কিলোমিটার দূরে বসে এই বাজার।  ১৫৪১ সালে এই ক্য়াথলিক গীর্জাটি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, তারপর একাধিকবার ভূমিকম্পের কবলে পড়ে গীর্জাটির বিপুল ক্ষতি হয়।

১৭৭৩ সালে গুয়াতেমালার ভয়াবহ ভূমিকম্পে গীর্জাটির অধিকাংশ অংশই ভেঙে পড়ে। তবে, এর স্থাপত্য আজও দেখার মতো ।  এককালে স্প্যানিশ উপনিবেশের শাসনকার্য চলত এই রয়্যাল প্যালেস থেকে। ১৫৫৮ সালে তৈরি হওয়া এই রয়্যাল প্যালেস এখন পরিণত হয়েছে একটি হোটেলে। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রসংঙ্ঘের হেরিটেজ বিভাগ এটিকে 'হেরিটেজ'-এর তকমা দেয়।