গাজর খেলে যে ১০ টি উপকার পাবেন তা জেনে নিন -

আজ বাংলা: আমরা সবাই জানি আমরা প্রতিদিন যেসব সকসব্জী খায় তার মধ্যে অনেক এমন গুণ আছে যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাক-সব্জীর ভূমিকা অসীম। সুলভ ও সস্তা শাক সব্জী শরীর কে সুস্থ রাখে সেই সঙ্গে যদি কোনো কারণে শারীরিক অসুবিধা বা অসুস্থতা দেখা দেয় , তাহলে নির্দেশ অনুসারে এগুলোর প্রয়োগেও রোগ সারে।
তবে আমার অনেকে জানি না কোন সব্জীর কোন গুণ আছে । আপনি যদি গাজর খেতে পছন্দ না করেন , তবে আপনাকে বলছি আপনি গাজরের গুনা গুন্ জেনে গাজরের প্রেমে পরে যাবেন।মিষ্টি সবজি গাজর। কমবেশি আমরা সবাই খেতে ভালোবাসি। স্যালাড হিসেবে, কখনোবা হালুয়া, আবার ফ্রাইড রাইস এও ব্যবহার করা হয় গাজর। গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু শীতকালীন সবজি, যা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়।
গাজরের উপকারিতা ও পুষ্টিগুনে আধিক্যতার কারনে গাজরকে বলা হয় সুপার ফুড। কাচাঁ ও রান্না দুভাবেই খাওয়া যায় গাজর, তাই গাজরকে সবজি এবং ফল দুটাই বলা যায়। নানা প্রকার খাদ্য তৈরিতে গাজর ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে তরকারি, ভাঁজি, হালুয়া ও সালাদ হিসেবে গাজর অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে সর্বোচ্চ পুষ্টিগুনের লাভের জন্য কাচা গাজর খাওয়াই সর্বোত্তম। তাই কাঁচা গাজর অথবা গাজরের জুস বানিয়ে খেলেই গাজরের সর্বোচ্চ পুষ্টি উপাদান পাবেন।
গাজরে প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। গাজরের ভিটামিন ও মিনারেলস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এটি স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও সৌন্দর্যচর্চায় বহুদিন থেকে সমাদৃত, তবে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে উপকারটি হ’ল দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়া। গাজর এর ইংরেজি নাম Carrot এবং বৈজ্ঞানিক নাম Daucus Carota যা একপ্রকার মূল জাতীয় সবজি।
১)চোখের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় গাজর। গাজরের নিজস্ব যে রঙ তাই চোখের জন্য খুব উপকারী।গাজরের মধ্যে থাকা বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন এ তে রুপান্তরিত হয়ে শরীরে কাজে লাগে। আর এই ভিটামিন এ চোখের জন্য খুবই উপকারী। গাজর চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে বিটা-ক্যারোটিন (ভিটামিন এ) একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গাজর এ প্রচুর পরিমাণ বিটা-ক্যারোটিন নামের এক ধরনের উপাদান থাকে। এই উপাদানটি শরীরে ভিটামিন ‘এ’-তে পরিণত হয়। তাই গাজরে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, চোখের কোষকলা তৈরীতে সাহায্য করে রাতকানা, গ্লুকোমা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করে।
২)হজমের জন্য গাজরের জুড়ি মেলা ভার। গাজরের রস লিভারের কার্য ক্ষমতা বাড়ায়।
৩) গাজরের মধ্যে থাকে অস্টিওপোরোসিস, আর্থাইটিস, ও বিভিন্ন রকমের উপকারী রস যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। গাজরের মধ্যে যে ক্যারটিনয়েড থাকে তা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ক্ষতিকর জীবাণু, ভাইরাস এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে বিষমুক্ত করে, হৃদরোগ এবং ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। গাজরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খনিজ যেমন, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি থাকে যা হাড় গঠন, নার্ভাস সিস্টেমকে শক্ত করা ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৪) ক্যান্সার প্রতিরোধেও গাজরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গাজর এর মধ্যে থাকা ভিটামিন-ই ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। গাজরের মধ্যে যে বিটা ক্যারোটিন থাকে তা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের বাঁচায়। গাজর এ প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরে থেকে ফ্রি র্যাডিকেলস দূর করে। ফ্রি র্যাডিকেলস হল শরীরের উচ্ছিষ্টাংশ যা শরীরের উপকারী কোষ নষ্ট করে এবং ক্যান্সার সহ আরও অনেক জটিল রোগ সৃষ্টি করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে গাজরে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গুলো ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। নিয়মিত গাজর খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলোন ক্যান্সার ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
৫) আপনার ত্বকে বয়সের ছাপ এলে গাজর তা প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিটা ক্যারোটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও কোষ কে ক্ষয় হতে দেয় না।
৬) গাজরে বেশি পরিমান ক্যালরি থাকে না ফলে ওজন হ্রাসে সহায়ক।পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ গাজরে ক্যালরি এবং সুগারের পরিমাণ খুবই কম থাকে। এটি খেলে পেট ভরা থাকে বলে ক্যালরিবহুল অন্য খাবার খেতে হয়না। এ ছাড়া গাজর চর্বি কমাতে সাহায্য করে বলে ওজন কমে। তাই ওজন কমাতে বেশি বেশি গাজর খান।
৭) গাজরে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় তা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।গাজরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পলিএসিটিলিন ও ডায়েটরি ফাইবার হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। এই উপাদানগুলো ধমনির ওপর কোন কিছুর আস্তর জমতে না দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং হার্টকে সুস্থ রাখে। গাজরের উচ্চমান সম্পন্ন ক্যারোটিনয়েডস হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত গ্রহণে গাজরের বিটা ও আলফা ক্যারোটিন রক্তনালী সংকোচন, অ্যাসিডিটির প্রকোপ কমায়।
৮) গাজরের রস লিভারের জমে থাকা চর্বি এবং পিত্ত কমাতে সাহায্য করে। গাজরে ক্যালরি এবং সুগারের উপাদান খুবই কম। গাজরে থাকা পটাশিয়াম কোলেস্টরেল এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গাজর চর্বি কমাতে সাহায্য করে বলে ওজনও কমে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে যে সব ভিটামিন এবং খনিজের প্রয়োজন তাও বিদ্যমান।
৯) ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে প্রতিদিন গাজর খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এছাড়াও গাজরে বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বককে ব্রণ থেকে রক্ষা করে, চুল পড়া রোধ করে, চুলকে শক্ত, মজবুত ও ঝলমলে করে। নিয়মিত গাজরের জুস খেলে চুলের গোড়া মজবুত হয়। তাই, প্রতিদিন একটি করে গাঁজর হতে পারে আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষা ও সৌন্দর্যচর্চার অংশ।
১০) বয়সের কারণে যদি ব্যথা বেদনা শরীরে অনুভূত হয় তাও কমাতে সাহায্য করে গাজর।