বাংলাদেশে কট্টরপন্থী মুসলমানদেরদের অত্যাচার ও হুমকির মুখে হিন্দুরা

বাংলাদেশে কট্টরপন্থী মুসলমানদেরদের  অত্যাচার ও হুমকির  মুখে হিন্দুরা

যত দিন যাচ্ছে হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে বাাংলাদেশে।  বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড মহামারী। ইসলামিক বাংলাদেশও এর বাইরে নেই৷ দেশটিতে এই মহামারীর মাঝেও নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছে না দেশটির সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়। প্রতিদিনই দেশটির কোন না কোন প্রান্তে ঘটে চলেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনা। একাধিক পরিবারকে ইসলাম না মানলে দেশ ছাড়ার নিদান দিয়েছে সেই দেশের কট্টরপন্থী ইসলামিক সংগঠন। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আতঙ্কে বাংলাদেশের একাধিক হিন্দু পরিবার।

১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানি নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ দলের উত্থান বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সূচনা করে। ফলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে তথা বাংলাদেশে হিন্দুদের গণহত্যা করে।   পশ্চিমবঙ্গে এক কোটিরও বেশি শরণার্থী বাঙালি হিন্দু আসে।ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে। কিন্তু শীঘ্রই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেদেশে হিন্দুদের উপর পুনরায় নিপীড়ন শুরু হয়।

১৯৭১ সালের পর অনেক বাঙালি হিন্দু ভারতে শরণার্থী হিসেবে চলে আসে মুসলমানদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে।সেখানে অবশিষ্ট হিন্দুদের বিরুদ্ধে অকথ্য অত্যাচার করা হয়। মন্দিরগুলি ভেঙে ফেলা হয়। নারীদের অপহরণ ও ধর্ষণ করা হয়।"লজ্জা" উপন্যাসে লেখিকা তসলিমা নাসরিন হিন্দুদের উপর হওয়া সহিংসতা এবং বাংলাদেশে হিন্দু নারীর প্রতি অত্যাচারের প্রতিবাদ করেন। ফলে তাকে ফতোয়া জারি করে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়।এবার দুর্গাপুজো চলাকালীন  কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশে কুমিল্লা শহরের একাধিক জায়গায় দুর্গাপুজো মণ্ডপে ও মন্দিরে হামলা চালায় মুসলমান দুষ্কৃতীরা।

কুমিল্লা, চট্টগ্রামের বাঁশখালি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এবং কক্সবাজারের পেকুয়ায় বিভিন্ন মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। বেশ কিছু ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, দুর্গা প্রতিমা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  উল্লেখ্য, ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার একটি পুজো মণ্ডপে কোরান শরীফ পাওয়াকে কেন্দ্র করে সহিংসতার জের ধরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বেশ কয়েকটি মন্দিরে হামলা ও পুলিশের সাথে হামলাকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এই ঘটনায় চার জন নিহত হয়েছে। এমনকি এই পুরো ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে তারপরও কমেনি এমন হামলার ঘটনা। জানা গিয়েছে, শুক্রবার বাংলাদেশের নোয়াখালিতে অবস্থিত ইসকনের একটি মন্দিরে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের অভিযোগ ওঠে। মন্দিরে কিছু জিনিসে আগুন লাগানো এবং উপস্থিত ভক্তদের মারধরেরও অভিযোগ ওঠে। খবর, শুক্রবার এই নোয়াখালির চৌমুহনীতে হিন্দুদের ১০টি মন্দির ও বাড়িতে হামলা হয়েছে।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সিকদার জানান, ইসকন মন্দির হামলার ঘটনায় চারজন মারাত্মকভাবে আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একজন নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজ প্রান্ত চন্দ্র দাসের মৃতদেহই মেলে এদিন মন্দির সংলগ্ন জলাশয় থেকে। সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, এই ঘটনায় গতকালই যতন সাহা নামে একজনের মৃত্যু ঘটেছিল। শনিবার একই ঘটনায় এলাকার এক জলাশয় থেকে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃতের নাম প্রান্ত চন্দ্র দাস (২৬)। নোয়াখালির বেগমগঞ্জে চৌমুহনীতে এই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। শনিবার সকাল থেকেই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। দুর্গাপুজোর সময় এমন ঘটনায় নানা মহলে উঠেছে বিতর্কের ঝড়।এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। কুমিল্লা সহ নোয়াখালির ইসকন মন্দিরের হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন বিরোধীদলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী ও সাংসদ শান্তনু ঠাকুর।

পাশাপাশি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র ও সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ। একটি টুইটের মাধ্যমে কুনাল ঘোষ উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করেছেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ২২টি জেলায় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলার সীমানায় চাদপুর হাজিগঞ্জ উপজেলায় পুলিশ ও হামলাকারীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়।