ভদ্রেশ্বর তেঁতুলতলার জগদ্ধাত্রী পুজোর ঐতিহাসিক কাহিনি

আজবাংলা দুর্গা এবং কালীরপুজোর রেশ যখন স্তিমিত হয়, ঠিক সেই সময়েই জগতের ধারণকর্ত্রী রূপে বঙ্গদেশে উপাস্য হন দেবী জগদ্ধাত্রী। আমাদের রাজ্যে যেসব অঞ্চলে এই জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে অন্যতম চন্দননগর। তবে ভদ্রেশ্বরেও পূজিতা হন দেবী।
প্রায় ২৭৭ বছর ধরে তেঁতুলতলায় জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে আসছে। এই পুজো হুগলীর সবথেকে বিখ্যাত পুজো বলেই খ্যাত। তেঁতুলতলায় পুজো জাঁকজমক বা কোনো থিমে হয় নয়। এটি অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে লক্ষীগঞ্জ বাজারের মধ্যে নিজস্ব মন্দিরে এই দেবীর আরাধনা হয়। এই পুজো শুরু হওয়ার পিছনে একটি কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। তখন সময়টা ছিল রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এর আমলের যুগ।
কৃষ্ণচন্দ্র রাজবাড়ির নায়েব, গোমস্তা, কোষাধ্যক্ষ, সবাইকে অনুদান দিয়েছিলেন নিজ নিজ এলাকায় পুজো করার জন্য। তাঁর বিশ্বস্ত কর্মচারীদের মধ্যে একজন ছিলেন দাতারাম সুর। মনে করা হয়, ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দ বা তার কিছু পরে চন্দননগর সংলগ্ন গৌরহাটিতে নিজের বাড়িতে দুই বিধবা মেয়েকে নিয়ে তিনি জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন।
গৌরহাটি যেহেতু চন্দননগর এলাকায় ছিল, তাই এই পুজোকেই কেউ কেউ চন্দননগরের প্রথম পুজো বলেন। প্রায় ৩০ বছর পুজো চলার পর দাতারাম সুরের অবর্তমানে এই পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। পরে স্থানীয় মানুষদের উদ্যোগে পুজো স্থানান্তরিত হয় কাছেই বিশালাক্ষীতলায়। পরে, সেখানেও কিছু অসুবিধা দেখা দেয়।
তখন শ্রীরামপুরের জমিদার গোস্বামীরা ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলায় গঙ্গার ঘাটের কাছে পুজোর জন্য জমি দেন। সেখানেই এই পুজো হচ্ছে এখনও। তেঁতুলতলার পুজোয় রীতিমতো জাঁকজমক হয়। পুজোয় পুরোহিতই থাকেন প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন। ১০০টি বেনারসি দিয়ে দেবীর বস্ত্র তৈরি হয়।
তবে,তেঁতুলতলার পুজোয় একটি বিশেষ বিশেষত্ব রয়েছে। সেটি হল ছেলেরা দেবীকে বিদায়ের সময় বরণ করেন মহিলাদের মতো শাড়ি ও সিদুঁর পরে। কী ভাবে এই প্রথার উদ্ভব, তা সঠিক জানা যায় না। ওই অঞ্চলের মানুষজন বলেন, দাতারাম সুরের কন্যারা যেহেতু পুজো শুরু করেছিলেন, তাই তাঁদের স্মরণে পুজো বারোয়ারি হওয়ার পর থেকে এই ভাবে দেবীবরণ হয়।
তবে, আবার ওখানকার কিছু লোকেদের বক্তব্য, সেই সময় ফরাসিরা এবং পরবর্তী কালে ইংরেজরা এই পুজো দেখতে আসতেন। বাড়ির মেয়েরা তাঁদের সামনে বেরোবেন না বলে পুজোর যাবতীয় কাজ করতেন পুরুষরা। সেই থেকেই এই প্রথার জন্ম।