মালদায় বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে হুলিয়া জারি তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে

তনুজ জৈন হরিশচন্দ্রপুর দুর্গতদের জন্য বরাদ্দ বন্যা ত্রানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এফআইআর হলেও শাসকদলের প্রধানকে ধরতে পারেনি পুলিশ। দুমাস বাদেও প্রধান ধরা না পড়ায় এবার তাকে ধরতে হুলিয়া জারি করল আদালত। সোমবার আদালতের ওই নির্দেশ ফেরার প্রধানের বাড়িতে ঝুলিয়ে দিয়ে এসেছে পুলিশ। মালদহের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। ২০১৭ সালে বন্যাত্রাণের টাকা লুঠের অভিযোগ ওঠে প্রধানের বিরুদ্ধে। প্রশাসন গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান।
তারপর আদালত সক্রিয় হতেই দুমাস আগে প্রধান সোনামনি সাহার বিরুদ্ধে এফআইআর করে প্রশাসন। ঘটনায় অভিযোগের তদন্তের পর তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে এফআইআর করল প্রশাসন। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। তদন্তে বন্যা ত্রানের ৭৬ লক্ষ টাকা লুঠ হওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। প্রধানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাস ভঙ্গের মতো জামিন অযোগ্য একাধিক ধারায় মামলা হতেই গা ঢাকা দেন প্রধান। কিন্তু প্রধানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুলিশের তরফে আদালতে জানানো হয়।
তারপরেই আদালত প্রধানের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। একমাসের মধ্যে প্রধান ধরা না দিলে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মতো প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। হুলিয়া জারির পাশাপাশি ফেরার প্রধানের বাড়ির সামনে পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে শাসকদলের প্রধানের হুলিয়া জারি হতেই শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে জোর তরজা শুরু হয়েছে।
তবে শুধু প্রধান নন। বন্যাত্রাণের টাকা লুঠের অভিযোগে হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। সভাপতি কোয়েল দাসও এখনও অধরা। তার খোঁজ না মেলায় তার বিরুদ্ধেও প্রধানের মতোই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে মহকুমাজুড়ে ভয়াবহ বন্যায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ৩৩০০ টাকা ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। বরুইয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হন ৭৩৯৪ জন।
কিন্তু তালিকায় নাম থাকলেও তারা টাকা পাননি বলে দুর্গতদের অনেকেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। তদন্তে নেমে প্রশাসন জানতে পারে, তালিকায় দুর্গতদের নাম থাকলেও তাদের নামের পাশে অন্য একাউন্ট দিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। এদিকে প্রশাসন পদক্ষেপ করছে না বলে আদালতে মামলা করেন পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। তারপরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। অভিযোগ, একটি অ্যাকাউন্টে একাধিকবার টাকা পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, কয়েকটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টেই বারবার টাকা ঢুকেছে বলে অভিযোগ।
মালদহের হরিশচন্দ্রপুর ও মুর্শিদাবাদের একাধিক জায়গা নিয়েও একই অভিযোগ ওঠে। এবছর জুলাই মাসে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস বলেন, দল দুর্নীতি সমর্থন করে না। বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। ফলে আলাদা করে বলার কিছু নেই। আইন আইনের পথেই চলবে।
যদিও এই প্রসঙ্গে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি রূপেশ আগরওয়াল বলেন, শুধু একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নয়। দুর্নীতির যথাযথ তদন্ত হলে তৃণমূল নেতা, জনপ্রতিনিধিদের অনেককেই জেলে থাকতে হবে। প্রশাসন শাসকদলের নেতা, জনপ্রতিনিধিদের বাঁচানোর চেষ্টা করলেও আদালতের উপরে আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, প্রধানকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে আমরা আদালতে জানাই। তারপরেই আদালত ফেরার প্রধানের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করার নির্দেশ দেয়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তেমন হলে তার বিষয়টিও আমরা আদালতকে জানাব।