বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত প্রেমের পরিবারের সামনে হুংকার অভিষেকের

বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত প্রেমের পরিবারের সামনে হুংকার অভিষেকের

দুয়ারে একদিকে যেমন কড়া নাড়ছে ত্রিপুরা বিধানসভা ভোট। ঠিক তেমনই এ রাজ্যে আবার পঞ্চায়েত ভোট। তাই জমি শক্ত করতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার (গতকাল) ত্রিপুরাতে জনসভা করছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) । সেই সফর সেরে শনিবার কোচবিহারের (Coochbehar) মাথাভাঙায় জনসভায় যোগদান তিনি। এ দিন পঞ্চানন বর্মাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অভিষেক।

অভিষেক বলেন, “কোচবিহারের একজন যুবক যুবতি বলুক যাঁদের কেন্দ্রীয় সরকার চাকরির নিয়োগ হাতে তুলে দিয়েছে। আমরা দলের আবর্জনা বের করে দিয়েছি। কারণ আমরা বিস্বাস করি  দুষ্টু গরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভাল। আর বিজেপি ওনাকে সাংসদ করে পাঠিয়েছে।” অভিষেক বলেন, “কেউ যদি বলেন আমি অভিষেকের লোক তাঁকে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করবেন। কেউ আমার লোক নয়।

একমাত্র সাধারণ মানুষ আমার লোক।” অভিষেক বলেন, “আচ্ছে দিনের নমুনা কী? রান্নার গ্যাস এগারোশো টাকা, পেট্রোল ১০০ টাকা। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের গ্রাস করেছে এই নমুনা।” নিশীথ প্রামাণিক এর নাম তুলে একাধিকবার আক্রমণ। অভিষেক বলেন, “বাংলা আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখেছে। যাদের পাকা বাড়ি ছিল তাদের ঘর বাতিল করা হয়েছে। আমাদের ঐক্য বদ্ধ হয়েই লড়াই করতে হবে।” অভিষেক বলেন,”২০১৮ সালে ১২৭ টি পঞ্চায়েত তৃণমূল জিতেছিল ।

১ টি জিতেছিল বিজেপি।সেই পঞ্চায়েত ঘোকসাডাঙা। সেই পঞ্চায়েতের বিজেপির প্রধান দীপ্তি দেবী স্বামীর নামে জব কার্ড তৈরি করেছে। স্বামীর নাম রতন বর্মণ, স্বামীর কাকা বিজন কুমার বর্মণ বাংলা আবাস যোজনার নাম লিস্টে নামের জন্য আবেদন করেছেন। আমি মিথ্যা কথা বলছি না। অর্থাৎ একই পরিবারের তিনজনের নামে ঘর। উনি একটা পঞ্চায়েতে জিতেই তিনটে জমি কিনেছে। একটা পঞ্চায়েত জিতেই এই অবস্থা।

অথচ কেশপুরে স্বামী-স্ত্রী তৃণমূল করে বলে বাড়ি পর্যন্ত নেয়নি।” উত্তরবঙ্গ ইস্যুতে বলেন, “এক মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ সকলে এসে বলুক তাঁরা আলাদা রাজ্য চায় আমি এরপর থেকে আর মুখ দেখাব না। আমাদের ভাওতাবাজির বিরুদ্ধে লড়তে হবে।” অভিষেক বলেন, “আলাদা রাজ্য? একটা ২৪ বছরের যুবককে…মানুষের ভুল হয়। ভুল হলে স্বীকার করুক। এর অবশ্যই শেষ দেখে ছাড়ব।” অভিষেক বলেন, “বিজেপি কথায় কথায় রাজবংশীদের কথা বলে।

একবার কি বিজেপি নেতারা যেতে পারলেন না এদের বাড়িতে? পরিবারের পক্ষ থেকে FIR করা হয়েছে । কলকাতা গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলব। আজ থেকে কোচবিহারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছি।” বিএসএফকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “দিনহাটা ১ নং ব্লকের প্রেম কুমার বর্মণ, বয়স ২৩ । ব্যাঙ্গালোরে কাজ করতো। চার বছর পর বাড়ি ফিরেছে । বিএসএফ এর জোয়ান তাকে গুলি করে মেরেছে। এর শেষ আমি দেখে থাকব।” এরপর মঞ্চে ওঠেন প্রেম কুমার বর্মণের বাবা।

তিনি বলেন, “ওর কাছ থেকে কিছুই উদ্ধার হয়নি। কেন মেরে ফেলা হল?” অভিষেক বলেন, “যে এই কাজ করেছে তার মাথায় যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাত থাকে তাও আমি শেষ দেখে ছাড়ব। এক থেকে দুমাসের মধ্যে এর শেষ দেখে ছাড়ব।” অভিষেক বলেন, “২০২১ সালে মানুষ  সাতটি আসনে জিতিয়েছিলেন বিজেপিকে ।

একজন ও মানুষের দাবি নিয়ে সরব হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “আজ আবার বলছি , গ্রামের মানুষ যাকে সার্টিফিকেট দেবে তাকেই প্রার্থী করা হবে পঞ্চায়েতে।কোনও দাদার ব্যাগ বয়ে প্রার্থী হওয়া হবে না।” এ দিন অভিষেক বলেন, ” যারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল তারা আজ বুঝতে পারছে খাল কেটে কুমির এনেছে। আজ মানুষ বুঝতে পেরেছে বিজেপিকে ভোট দিয়ে কতটা ভুল করেছে।

কয়েকটা লোকের অপকর্মের জন্যে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। আমি কেশপুরের সভায় বলেছি আমরা বাংলার মানুষের কাছে মাথা নত করব। কিন্তু দু চারটে নেতার জন্য যদি দলের মাথা নত হয় আমি ছেড়ে কথা বলব না।” অভিষেক বলেন, “আজকে ভোট চাইতে আসিনি। পঞ্চায়েত আরও মাস সময় আছে।পরপর দুটো নির্বাচনে আমাদের ভুল ত্রুটির কারণে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।

আমাদের ভুলের জন্য, ২০১৯ এবং ২০২১ এ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি আজকে মানুষের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে এই সমাবেশ পালা বদলের সমাবেশ।” অভিষেক বলেন, “আমার উত্তরবঙ্গ কথায় আপত্তি আছে। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ-দার্জিলিং থেকে দেগঙ্গা একটাই বঙ্গ সেটা হল পশ্চিমবঙ্গ।” অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজকের সভার সতস্ফুর্ততা চোখে পড়ার মতো।আজকের সভা বিজেপির বিভাজনের বিরুদ্ধে। বাংলা কে ভাঙার চক্রান্তের বিরুদ্ধে এই সভা।অখন্ড বাংলার পক্ষে এই সভা।”