এই নিয়ম মেনে ভগবান শিবের পূজা করলে মনের ইচ্ছা পূরণ হবেই হবে

আজবাংলা মাঝে মধ্যে জীবন এতটাই কষ্টে ভরে যায় যে ভগবানের ছবির দিকে তাকিয়ে বলতে ইচ্ছা করে, হে ভগবান এমন কি কোনও রাস্তা নেই যা অনুসরণ করলে মনের সব ইচ্ছা পূরণ হবে এবং সেই সঙ্গে এমন খারাপ সময় থেকে বেরিয়ে আসাও যাবে। উত্তর মেলে না কোনও। মন ভেঙে যায়।
শরীর সঙ্গ ছেড়ে দেয়। এক সময় গিয়ে ইচ্ছাগুলি মনেই মরে যায়। আর একদিক সেই সব ইচ্ছার শবদেহগুলো তুলে ভেজা চোখে পৃথিবী ছাড়তে হয়। কিন্তু আর নয়! আমার জীবন এমন হয়েছে তো কী! আপনাদের হবে না। তাই তো এই প্রবন্ধে ভগবান শিবের এমন একটি মন্ত্রের সম্পর্কে আলোচনা করা হল,
যা নিয়মিত জপ করলে যে কোনও ইচ্ছা পূরণ হবে। হয়তো আমার কথায় বিশ্বাস রাখতে পারছেন না, তাই না! ক্ষতি নেই। একবার মন্ত্রটা আউড়েই দেখুন না। লাভ ছাড়া যে কোনও ক্ষতি হবে না, সে কথা হলফ করে বলতে পারি।
শিব প্রণাম মন্ত্র ॥
নমঃ শিবায় শান্তায় কারুণাত্রায়
হেতবে নিবেদিতামি চাত্মানং ত্বং গত্বিং পরমেশ্বর॥
সরলার্থ :
তিন কারণের (সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশের)
হেতু শান্ত শিবকে প্রণাম ।
হে পরমেশ্বর তুমিই পরমগতি ।
তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করি ।
'তস্মৈ নমঃ পরমকারণ কারণায় দীপ্তোজ্জ্বলজ্জ্বলিত পিঙ্গললোচনায়!
নাগেন্দ্রহাররকৃত কুন্ডলভূষণায় ব্রহ্মেন্দ্রবিষ্ণু বরদায় নমঃ শিবায়!!'
—যিনি কারণের পরম কারণ, যাঁর অতি উজ্জ্বল দেদীপ্যমান পিঙ্গল নয়ন, কুন্ডলীকৃত সর্পরাজের হার যাঁর কন্ঠভূষণ, ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং ইন্দ্রাদি দেবতাকে যিনি বর প্রদান করেন, সেই পরম শিবকে আমার প্রনাম!!'
শিবের ধ্যান —-
একটি ফুল নিয়ে (সম্ভব হলে কূর্মমুদ্রায় ফুলটি নেবেন) শিবের ধ্যান করবেন। শিবের সাধারণ ধ্যানমন্ত্র ও বাণেশ্বর ধ্যানমন্ত্র দুটি নিচে দেওয়া হল —-
সাধারণ ধ্যানমন্ত্র —-
ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসং
রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরাভীতিহস্তং প্রসন্নম্।
পদ্মাসীনং সমন্তাত্ স্তুতমমরগণৈর্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানং
বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্ত্রং ত্রিনেত্রম্।।
বাণেশ্বর শিবের ধ্যান —
ঐঁ প্রমত্তং শক্তিসংযুক্তং বাণাখ্যঞ্চ মহাপ্রভাং।
কামবাণান্বিতং দেবং সংসারদহনক্ষমম্।।
শৃঙ্গারাদি-রসোল্লাসং বাণাখ্যং পরমেশ্বরম্।
এবং ধ্যাত্বা বাণলিঙ্গং যজেত্তং পরমং শিবম্।।
স্নান —-
এরপর শিবকে স্নান করাবেন। গঙ্গাজলে শুদ্ধজলে চন্দন মিশ্রিত করে ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে শিবকে স্নান করাবেন এই মন্ত্রে শিবকে স্নান করাবেন —-
ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্।
উর্বারুকমিব বন্ধনান্মৃত্যোর্মুক্ষীয় মাঽমৃতাত্।।
ওঁ তত্পুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াত্ ওঁ।
সাধারণ শিবলিঙ্গ ও বাণেশ্বর — উভয়ক্ষেত্রেই স্নান মন্ত্র এক।
প্রধান পূজা —
স্নানের পর আরেকবার আগের ধ্যানমন্ত্রটি পাঠ করে শিবের ধ্যান করবেন। তারপর মনে মনে উপচারগুলি শিবকে উত্সর্গ করে মানসপূজা করবেন। মানসপূজার পর একে একে উপচারগুলি বাহ্যিকভাবে শিবকে সমর্পণ করবেন।
ওঁ নমঃ শিবায় এতত্ পাদ্যং শিবায় নমঃ। (সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন)
ওঁ নমঃ শিবায় এষঃ অর্ঘ্যঃ শিবায় নমঃ। (আতপচাল ও দূর্বা একটি সচন্দন বেলপাতায় করে ফুল সহ দিন)
ওঁ নমঃ শিবায় ইদমাচমনীয়ং শিবায় নমঃ। (সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন)
ওঁ নমঃ শিবায় ইদং স্নানীয়ং শিবায় নমঃ। (সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন)
ওঁ নমঃ শিবায় এষ গন্ধঃ শিবায় নমঃ। (চন্দনের ফোঁটা দিন)
ওঁ নমঃ শিবায় ইদং সচন্দনপুষ্পং শিবায় নমঃ। (একটি চন্দনমাখানো ফুল দিন)
ওঁ নমঃ শিবায় ইদং সচন্দনবিল্বপত্রং শিবায় নমঃ। (একটি চন্দনমাখানো বেলপাতা দিন)
ওঁ নমঃ শিবায় এষ ধূপঃ শিবায় নমঃ। (ধূপটি শিবের সামনে তিনবার ঘুরিয়ে দেবতার বাঁ দিকে, অর্থাত্ নিজের ডানদিকে রাখুন)
ওঁ নমঃ শিবায় এষ দীপঃ শিবায় নমঃ। (প্রদীপটি শিবের সামনে তিনবার ঘুরিয়ে দেবতার ডানদিকে, অর্থাত্ নিজের বাঁ দিকে রাখুন)
ওঁ নমঃ শিবায় ইদং সোপকরণনৈবেদ্যং শিবায় নিবেদয়ামি। (নৈবেদ্যের উপর অল্প সামান্যার্ঘ্য জল ছিটিয়ে দিন)
ওঁ নমঃ শিবায় ইদং পানার্থোদকং শিবায় নমঃ। (পানীয় জলের উপর অল্প সামান্যার্ঘ্য জল ছিটিয়ে দিন)
ওঁ নমঃ শিবায় ইদং পুনরাচমনীয়ং শিবায় নমঃ। (সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন)
ওঁ নমঃ শিবায় ইদং তাম্বুলং শিবায় নমঃ। (একটি পান দিন, অভাবে সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন।)
ওঁ নমঃ শিবায় ইদং মাল্যং শিবায় নমঃ। (মালা থাকলে মালাটি পরিয়ে দিন)
বাণেশ্বর শিবলিঙ্গে দশোপচার পূজার মন্ত্র —
ঐঁ এতত্ পাদ্যং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ঐঁ এষঃ অর্ঘ্যঃ বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ঐঁ ইদমাচমনীয়ং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ঐঁ ইদং স্নানীয়ং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ঐঁ এষ গন্ধঃ বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ঐঁ ইদং সচন্দনপুষ্পং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ঐঁ ইদং সচন্দনবিল্বপত্রং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ঐঁ এষ ধূপঃ বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ঐঁ এষ দীপঃ বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ঐঁ ইদং সোপকরণনৈবেদ্যং বাণেশ্বরশিবায় নিবেদয়ামি।
ঐঁ ইদং পানার্থোদকং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ঐঁ ইদং পুনরাচমনীয়ং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ঐঁ ইদং তাম্বুলং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ঐঁ ইদং মাল্যং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
পুষ্পাঞ্জলি —
সচন্দন পুষ্প ও বেলপাতা নিয়ে এই মন্ত্রে এক, তিন অথবা পাঁচ বার অঞ্জলি দেবেন —
সাধারণ পুষ্পাঞ্জলি —-
ওঁ নমো শিবায় এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি নমো শিবায় নমঃ।
বাণেশ্বর শিবের পুষ্পাঞ্জলি —
ঐঁ এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
গৌরীপূজা —
এইভাবে শিবপূজা শেষ করে শিবলিঙ্গের গৌরীপীঠে একটি ফুল দিয়ে এই মন্ত্রে গৌরীর পূজা করুন —
ওঁ হ্রীঁ এতে গন্ধপুষ্পে গৌর্যৈ নমঃ।
অষ্টমূর্তি পূজা —
বাণেশ্বর শিবে অষ্টমূর্তির পূজা করতে হয় না। কিন্তু অন্যান্য শিবলিঙ্গের ক্ষেত্রে করতে হয়। একটি ফুল দিয়ে এই মন্ত্রে অষ্টমূর্তির পূজা করুন —
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অষ্টমূর্তিভ্যো নমঃ।
জপ ও জপসমর্পণ —
এরপর 'ওঁ নমঃ শিবায়' বা দীক্ষামন্ত্র ১০৮ বার জপ করে এই মন্ত্রে এক গণ্ডুষ জল শিবের নিচের দিকের ডান হাতের উদ্দেশ্যে প্রদান করুন —
ওঁ গুহ্যাতিগুহ্যগোপ্তা ত্বং গৃহাণাস্মত্কৃতং জপম্।
সিদ্ধির্ভবতু মে দেব ত্বত্প্রসাদান্মহেশ্বর।।
প্রণাম —
এইবার এই মন্ত্রটি পড়ে সাষ্টাঙ্গে শিবকে প্রণাম করে পূজা সমাপ্ত করুন —
সাধারণ শিবলিঙ্গের ক্ষেত্রে —
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং গতিস্তং পরমেশ্বরম্।।
বাণেশ্বর শিবের ক্ষেত্রে —
ওঁ বাণেশ্বরং নরকার্ণবতারণায় জ্ঞানপ্রদায় করুণাময়সাগরায়।
কর্পূরকুন্দধবলেন্দুজটাধরায় দারিদ্র্যদুঃখদহনায় নমঃ শিবায়।।