কলকাতার শহরে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে মা কালীর মন্দির

কলকাতার শহরে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে মা কালীর মন্দির

আজবাংলা        অনেকেই হয়ত জানেন না এই শহরেই রয়েছে এক চিনা কালীর মন্দির | কি অবাক হচ্ছেন নিশ্চ্যই? যে কেন কালী মায়ের মন্দিরকে বলা হয় চিনা কালী মন্দির | মায়ের এই মন্দিরেও হিন্দুদের মতো সকাল সন্ধে পুজো হয় | ফুল, প্রসাদ, হুবহু এক, যেমন অন্য মন্দিরে হয়ে থাকে | সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে রয়েছে এক অদ্ভুত কাহিনি | 

বর্তমানে ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক একদমই ভাল নয় | চিনা সেনাদের হাতে শহিদ হয়েছেন  ভারতীয় ২০ জন জওয়ান | তারপর থেকেই চিনার বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠেন প্রতিটা ভারতবাসী | যেভাবে ভারতীয় সেনাদের প্রাণ নিয়েছে চিনা তা মনে পড়লেই চোখে জল আসে প্রতিটা ভারতবাসীর | তবে এই পরিস্থিতির মধ্যে আজ আপনাদের সঙ্গে এমন এক কালী মন্দির কথা ভাগ করে নেব, যা অনেকেই জানেন না | 

খোদ কলকাতার বুকে ট্যাংরা’র মঠেশ্বরতলা রোডে অবস্থিত চিনা কালী মন্দির | প্রায় ছ’দশক আগে, এই কালী মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন এক চিনা ব্যবসায়ী | আজ থেকে প্রায় বছর ৬০-৭০ বছর আগে, ট্যাংরার মঠেশ্বরতলা রোডে একটা অশ্বত্থ গাছের নীচে স্থানীয়রাই পাথরের একটি ছোট কালী মূর্তি রেখেছিলেন | তখন সেই জায়গায় কোনও মন্দির ছিল না | চারিদিক খোলা শুধু ছিল মাথার ওপরে অ্যাসবেস্টসের চাল | 

মায়ের দর্শন পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই হিন্দুরা সেখানে এসে মায়ের পুজো দিতে শুরু করেন | তাদের দেখে দেখে সেখানে আসতে শুরু করেন ওই অঞ্চলের চিনারাও | প্রথমে তাঁরা পুজো দেখতে আসতেন | তার পর যখন তারা স্থানীয় হিন্দুদের কাছে শুনলেন, যে দেবী কালিকা ভক্তকে সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করেন তখন থেকে দলে দলে চিনারা কালীভক্ত হয়ে উঠলেন | ধর্মে বৌদ্ধ হয়েও এরপর থেকে  কালীর পুজোয় অংশ নিতে লাগলেন | 

তাদের মধ্যে এক ভক্ত ছিলেন ফাং চুং | তিনি আগে এ অঞ্চলেই থাকতেন, কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল বড় ব্যবসায়ী হওয়ার | তিনি বিদেশে গিয়ে রেস্তোরাঁ খোলার স্বপ্ন দেখতেন | নিজের মনের আসা যাতে পূর্ণ হয়, সেই জন্য ওই গাছতলার মা কালীর কাছে মানত করেন ওই চিনা ভক্ত | এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই ফাং চুংর ব্যবসায় বেশ সাফল্য আসে | বিদেশে রেস্তোরাঁ খোলার সুযোগ পেয়ে যান এবং কলকাতা ছেড়ে সেখানে পাড়িও দেন দিয়েছিলেন | 

পাঁচ বছর কেটে যাওয়ার পরে ফাং চুং ট্যাংরায় ফিরে আসেন | কলকাতায় ফিরে সোজা চলে যান সেই গাছতলায় মায়ের কাছে, মানত পূর্ণ হওয়ার কৃতজ্ঞতা জানাতে | এরপরেই কৃতজ্ঞতা হিসেবে ফাং চুং পাকা ছাদওয়ালা করে সেখানে একটি মন্দির গড়ে তোলেন | সঙ্গে আরও একটা নতুন কালী মূর্তি ও শিবের মূর্তিও তৈরি করে দেন সে | সেই সময় থেকেই এই চিনা মন্দিরে জোড়া কালী মূর্তি রাখা হয়ে আসছে | এরপর থেকেই ওই মন্দিরের নাম হয়ে গেল চাইনিজ কালী মন্দির | 

অন্যান্য মন্দিরের মতোই এই মন্দিরেও পুজো আচ্ছা হয় | একজন ব্রাহ্মণ পুজারীও রয়েছেন, যিনি প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যায় পুজো করেন | বছরের অন্যান্য দিন সাদামাটা পুজো হলেও, ফলহারিণী কালীপুজো ইত্যাদি বিশেষ দিনে একটু বেশিই আয়োজন লাগে পুজোর, আর বড় করে উৎসব হয় কার্তিক মাসের কালীপুজোয় | প্রচুর ভক্ত এসে উপস্থিত হন মায়ের থেকে আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য |