কল্পতরু উৎসব

কল্পতরু উৎসব

কল্পতরু উৎসবের Kalpataru Utsav ইতিহাস ভারতের সংস্কৃতিতে অত্যন্ত গভীরে প্রোথিত। এটি আমাদের দেশের অত্যন্ত প্রাচীন একটি উৎসব। জানা যায় যে গৌতম বুদ্ধের সংসার ত্যাগের ঘটনা স্মরণ করে বৌদ্ধ রাজারা বছরে একবার করে Kalpataru কল্পতরু হতেন। সেই সময় তাঁর কাছে যে যা চাইতো তিনি তাই দিয়েই সেই প্রার্থনা মঞ্জুর করতেন। পরবর্তীতে স্বাধীন হিন্দু রাজারাও কল্পতরু উৎসব Kalpataru Utsav শুরু করেন। ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণ অনুযায়ী শেষ কল্পতরু রাজা হয়েছিলেন যশোহর রাজ প্রতাপ আদিত্য।

এই দিনটি তাই ভক্তদের কাছে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে জাগতিক চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে অসীমের সাথে নিজেকে একাত্ম করে নেওয়ার অনুষ্ঠানে। এই দিনটিকে তাই ‘কল্পতরু দিবস’ হিসেবে জানেন সবাই। কিন্তু মনে রাখা উচিৎ যে এই প্রাপ্তি কোনও জাগতিক চাওয়া পাওয়ায় আবদ্ধ নয়। এই প্রাপ্তি একান্তই আধ্যাত্মিক! যা নিহিত আছে রামকৃষ্ণদেবের এই বিখ্যাত আশীর্বাদে – “চিন্ময় চৈতন্য সত্তার জাগরণের আশিস”!

১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি প্রথম কল্পতরু উৎসবের দিনটি রামকৃষ্ণ পরমহংস ও তাঁর অনুগামীদের জীবনে ছিল এক “অভূতপূর্ব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।  রামকৃষ্ণ পরমহংস সেই সময় দুরারোগ্য গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থারও যথেষ্ট অবনতি ঘটেছিল। উত্তর কলকাতার কাশীপুর অঞ্চলের একটি বাগানবাড়িতে চিকিৎসার সুবিধার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল।

১ জানুয়ারি একটু সুস্থ বোধ করায় তিনি বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তাঁর অনুগামী নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার কী মনে হয়, আমি কে?  গিরিশচন্দ্র বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে রামকৃষ্ণ পরমহংস “মানবকল্যাণের জন্য মর্ত্যে অবতীর্ণ ঈশ্বরের অবতার। রামকৃষ্ণ পরমহংস বলে, “আমি আর কী বলব? তোমাদের চৈতন্য হোক।

এরপর তিনি সমাধিস্থ হয়ে তাঁর প্রত্যেক শিষ্যকে স্পর্শ করেন। রামকৃষ্ণ-অনুগামীদের মতে, তাঁর স্পর্শে সেদিন প্রত্যেকের অদ্ভুত কিছু আধ্যাত্মিক অনুভূতি হয়েছিল। রামকৃষ্ণ পরমহংসের অন্যতম শিষ্য রামচন্দ্র দত্ত ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, সেই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংস হিন্দু পুরাণে বর্ণিত কল্পতরুতে পরিণত হয়েছিলেন।  তিনিই এই দিনটিকে কল্পতরু দিবস নাম দিয়েছিলেন, যা পরে কল্পতরু উৎসব নামে পরিণত হয়েছিল।  উল্লেখ্য, এই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংসের গৃহস্থ শিষ্যরাই তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সন্ন্যাসী শিষ্যেরা সেই দিন তাঁর কাছে ছিলেন না।

সেই থেকে এই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংসের অনুগামীরা এই উৎসবকে "ঠাকুরের বিশেষ উৎসব"গুলির অন্যতম উৎসব হিসেবে গণ্য করেন। রামকৃষ্ণ মঠের সন্ন্যাসীবৃন্দ ও রামকৃষ্ণ মিশনের গৃহস্থরা এই উৎসব পালন করেন। বিশ্বব্যাপী বেদান্ত সোসাইটিগুলিতেও এই উৎসব পালিত হয়। বিভিন্ন জায়গায় এই উৎসব পালিত হলেও কাশীপুর উদ্যান বাটীতে বর্তমানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের একটি শাখাকেন্দ্র এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। এখানেই রামকৃষ্ণ পরমহংস জীবনের শেষ দিনগুলি অতিবাহিত করেছিলেন।

দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতেও এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। সারা দেশ থেকে রামকৃষ্ণ-অনুগামী তীর্থযাত্রীরা এই দিন দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে পুজো দিতে আসেন। এই বছরও এই উৎসব উপলক্ষে পূর্ব রেল দক্ষিণেশ্বরের তীর্থযাত্রীদের জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছেন। এই উৎসবে দরিদ্রদের দাতব্য চিকিৎসা ও কম্বল বিতরণের আয়োজন করা হয়।