দক্ষিণবঙ্গের প্রাচীন কালী মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম কঙ্কালেশ্বরী কালী মন্দির

দক্ষিণবঙ্গের প্রাচীন কালী মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম কঙ্কালেশ্বরী কালী মন্দির

আজবাংলা    শ্রীশ্রী কঙ্কালেশ্বরী কালী দেবী মূর্তি, কাঞ্চন নগর, বর্ধমান। ঐতিহাসিক মতে, প্রাচীন গৌড় বঙ্গে, কাঞ্চন নগর ছিল গৌড় অধিপতি শশাঙ্কর প্রধান কার্য্যালয়। প্রাচীন নথি অনুযায়ী, খ্রিস্টীয় ১৭০০ শতকে, দামোদর নদীর তীরে এই অদ্ভুত দর্শন মা কালীর মূর্তিটি পাওয়া গিয়েছিল।মূর্তিটি একটি বড় কালো রঙের ব্যাসাল্ট পাথরের ওপরে খোদিত। ঐতিহাসিকদের মতে, এই ধরণের মূর্তি, আর্য্য পূর্ব যুগে নির্মিত হত। মূর্তিটিতে মানুষের কঙ্কাল, স্নায়ুতন্ত্র ইত্যাদি পরিষ্কার ভাবে খোদিত। মূর্তিটিকে পরে মন্দিরে স্থাপিত করা হয়। যদিও মন্দিরটি কে বা কারা নির্মাণ করিয়েছিলেন, তা নিয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায় না।

মন্দিরটি নবরত্ন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, এই মূর্তি বৌদ্ধ বা পাল যুগের। দু হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন। মানব দেহের প্রতিটি শিরা উপশিরা খোদাই করা রয়েছে দেবীমূর্তিতে। দক্ষিণবঙ্গের প্রাচীন কালীমন্দির গুলির মধ্যে অন্যতম বর্ধমানের কাঞ্চননগরের কঙ্কালেশ্বরী কালীমন্দির।শান্ত মনোরম পরিবেশ । বিস্তৃত অঙ্গনের পাশে নানান গাছের জটলা। প্রঙ্গন ছেড়ে একটু এগলেই খেলার মাঠ । পাশে প্রাচীন একটি বিষ্ণু মন্দির। এরকমই এক পরিবেশে ১৯০০ সালে একটি আশ্রম স্হাপন করেছিলেন সাধনমার্গের মানুষ কালীচৈতন্য ভারতী । এই আশ্রম প্রাঙ্গনেই স্হাপিত ছিল একটি নবরত্ন মন্দির।

এর নির্মান কাল ১৪৮৬-১৫৩৩ সাল । ১৯১৩ মতান্তরে ১৯১৬ সালে এই মন্দিরেই প্রতিষ্ঠা করে হয় কঙ্কালেশ্বরী কালীকে। বিগ্রহ কিভাবে পাওয়া যায় এই নিয়ে বিভিন্ন মত আছে , অনেকের মতে ১৯১৩ সালে (বাংলার ১৩২০ সন) এক ভয়াবহ বন্যা হয় দামোদরে ।শহর বর্ধমানের পশ্চিমে দামোদরগর্ভে সেবার অপ্রত্যাশিত ভাবে পাওয়া যায় দেবী বিগ্রহ ।স্হাপন করা হয় নবরত্ন মন্দিরে। তবে সন্দেহাতীত ভাবে অতি প্রচীন কঙ্কালেশ্বরী বিগ্রহের বয়স আজও অনির্ণীত। আবার কারোরর মতে , বাংলার ১৩২৩ সালে দামোদর নদীর তীরে পাওয়া যায় কঙ্কালেশ্বরী কালীর মূর্তি। কমলানন্দ পরিব্রাজক নামে এক সাধক স্বপ্নাদেশ পান।

তিনিই দেবীমূর্তি সংগ্রহ করে কাঞ্চননগরের এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। দেবী কঙ্কালেশ্বরী কালীর আবির্ভাব প্রসঙ্গে একটি ঘটনা লোকপরম্পরায় চলে আসছে। ১৯১৬ সালে কোন এক বর্ষা দিনের কথা। দামোদর নদের বামতীরে খর্গেশ্বর মৌজার বারোদুয়ারি গ্রামে আবির্ভাব হয় অপরূপ এক দেবী মূর্তির। মাটি থেকে উঠে এসেছে এক পাথরের খন্ড। এক পিঠে স্থানীয় বাসীন্দা ও রজক পরিবাররা কাপড় কাচার কাজ করেন।বিস্ময়ে তারা লক্ষ্য করেন অপর পিঠে খোদাই রয়েছে দেবী বিগ্রহ। পরে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে বর্ধমানের মহারাজ বিজয়চাঁদ বিষয়টি শুনলেন। মন্দির প্রাঙ্গনের জন্য তিনি এক একর চুয়ান্ন শতক জমিদান করলেন। গড়ে উঠল কঙ্কালেশ্বরী কালীর মন্দির।

বর্ধমান শহরের উপকন্ঠে কাঞ্চননগরে অতি প্রাচীন কালী বিগ্রহ মা কঙ্কালেশ্বরী। গর্ভমন্দিরের আসনবেদিতে তিন ফুট চওড়া ও পাঁচ ফুট উচ্চতার একটি অখন্ড পাথরে খোদিত দেবী বিগ্রহ। দেবীর বাঁদিকে চারটি ও ডানদিকে চারটি করে মোট আটটি হাত। প্রতিটি হাতে রয়েছে একটি করে অস্ত্র।উপর থেকে বাঁদিকের হাতে জয় পতাকা, একটি হাত চিবুকে দিয়ে বিষণ্ণতায় ভরা মুখমন্ডল, বাদ্য ঘন্টা ও চন্ডের কাটা মুন্ডের কেশ ধরা। উপর থেকে ডানদিকের হাতে যথাক্রমে ধরা আছে অসি, খর্পর, ত্রিশূল ও খড়্গ। বিগ্রহের মাথার পেছনে চাঁদোয়ার মতো দুটি হাতির মাথা।

কন্ঠে রুদ্রাক্ষ ও গলায় মুন্ডমালা। দেবী ত্রিনয়না। মাথায় মুকুট। কানে সাপের ফণারকৃতি কুন্ডল। দেবীদেহ কঙ্কালময়। দেবীতনুতে প্রস্ফুটিত হয়েছে অসংখ্য শিরা উপশিরা। প্রত্যহ চামুণ্ডা মতে পুজো হয় মা কঙ্কালেশ্বরীর মন্দিরে । নিষ্ঠার সঙ্গে সারা বছর নিত্যপুজো হয় এখানে। বিশেষ পুজো হয় দীপান্বিতা কালীপুজোয়।প্রতি বছর, কার্তিক মাসের পূর্ণিমায় এই মন্দিরে বিশাল পূজার আয়োজন হয় ও তাতে প্রচুর মানুষের আগমন হয়। দূর দূরান্ত থেকে ভিড় জমান ভক্তরা। কাঞ্চননগরে আসতে গেলে বর্ধমান স্টেশনে নেমে উদয়পল্লী-বর্ধমান স্টেশন-কালনাগেট লোকাল সার্ভিস বাসে নামতে হবে কালীবাড়ি কিংবা কাঞ্চননগর বাজার স্টপেজ। এখান থেকে হাঁটা পথে লাগে মিনিট পাঁচেকের মত। স্টেশন থেকে রিকশয় আসা যায়। দূরত্ব ৮ কিলোমিটার।