রাজ্যে ভেঙে পড়েছে আইন শৃঙ্খলা ,রামপুরহাটের ঘটনা উসকে দিল ছোট আঙারিয়ার স্মৃতি

রাজ্যে ভেঙে পড়েছে আইন শৃঙ্খলা ,রামপুরহাটের ঘটনা উসকে দিল ছোট আঙারিয়ার স্মৃতি

রাজ্যে ভেঙে পড়েছে আইন শৃঙ্খলা। Rampurhat-এর উসকে দিল ২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার ছোট আঙারিয়ায় (Vhhoto Angaria) তৃণমূল নেতা বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে মিটিং চলার সময় আগুন লাগিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। ঘটনায় প্রাণ হারান মোক্তার খাঁ, রবিয়াল মণ্ডল সহ পাঁচজন। সেই ঘটনার স্মৃতিই মনে করিয়ে দিল মঙ্গলবার সকালে বীরভূমের রামপুরহাটে পরপর ১০টি বাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা। ছোট আঙারিয়ায় গণহত্যার ঘটনায় অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন শাসকদল CPIM-এর বিরুদ্ধে।

আর এবারও অভিযোগের কাঠগড়ায় সেই শাসকদল। এ ক্ষেত্রে অবশ্য সরকারে তৃণমূল কংগ্রেস। রামপুরহাটের ঘটনা শুনে রীতিমতো আঁতকে উঠল ছোট আঙারিয়ায় মানুষেরা। সেখানকার এক বাসিন্দার কথায়, “সেই দিনটার কথা আজও ভুলিনি। ২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি। বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে গুলি করে, জ্বলন্ত পুড়িয়ে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছিল। বাড়িটা জ্বলছিল।

পরে বাড়ির বাইরে দেহগুলির কঙ্কাল পড়ে ছিল। সেই ঘটনা মনে পড়লে এখনও দেহে শিহরণ হয়। এবার রামপুরহাটেও সেই একইভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে বক্তার মণ্ডল মারা গিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের বুকে হার্মাদ বাহিনী আজও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রামপুরহাটের এই ঘটনারও দোষীরা কতটা সাজা পাবে জানি না।” 

রাজনৈতিক বিরোধের জেরে নির্বিচারে খুন আর রক্তস্নানের জন্য গত অর্ধ শতকে বিভিন্ন সময়েই খবরের শিরোনামে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের নানা এলাকা। বস্তুত, রাজ্যে ৭০-এর দশকেরই সূচনা হয়েছিল এমন হিংসা ও গণহত্যার রাজনীতির ধারার। পরবর্তী সময়েও তার অন্যথা হয়নি। একুশ শতকে নন্দীগ্রামের ধারাবাহিক হিংসাপর্ব আর দু’দফায় গণহত্যার ঘটনা নজর কেড়েছিল আন্তর্জাতিক মহলেরও। তার কয়েক বছর আগে বীরভূমের নানুরও সাক্ষী হয় রাজনৈতিক হিংসার। সেই তালিকায়ই নতুন সংযোজন বীরভূমের রামপুরহাট-১ ব্লকের বগটুই গ্রাম।

 প্রসঙ্গত, সোমবার রামপুরহাটের বকটুই গ্রামে বোমা হামলায় মৃত্যু হয় স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা রামপুরহাট-১ নম্বর ব্লকের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান ভাদু শেখের। তারপরই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোটা গ্রাম। সোমবার রাতেই বকটুই গ্রামের অন্তত ১০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে দমকল বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং রাতেই ৩ জনের দেহ উদ্ধার করে।

মঙ্গলবার সকালে আরও সাতজনের দেহ উদ্ধার হয়। তৃণমূল নেতার মৃত্যুর বদলা নিতেই গ্রামবাসীদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। রাজ্যে ভেঙে পড়েছে আইন শৃঙ্খলা। প্রয়োজন কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ। এই দাবি নিয়ে মঙ্গলবার সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

সঙ্গে ছিলেন দিলীপ ঘোষ, অর্জুন সিংহেরা। অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার পর সুকান্ত দাবি করেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। রাজ্যে কেন্দ্রীয় দলও পাঠাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, দাবি সুকান্তের। রামপুরহাটের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্লোজ করা হয়েছে থানার ওসিকে। অপসারিত হয়েছেন এসডিপিও। তদন্তের ভার গিয়েছে তিন সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) হাতে।

যদিও রামপুরহাটের অগ্নিকাণ্ড ও জ্বলন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েই কলকাতা থেকে কপ্টারে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। উপপ্রধান খুনের সঙ্গে পরপর বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনার কোনও যোগসূত্র রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী। যদিও আগুন লাগানোর অভিযোগ একেবারে খারিজ করে দিয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।