তেঁতুল| জেনে নিন তেঁতুলের অসাধারণ উপকারি গুণ

যার নাম শুনলেই জিভে জল আসে তা হল তেঁতুল। টক-জাতীয় খাবার যাদের পছন্দ, তাঁদের পছন্দের খাবারের তালিকায়। টক, ঝাল, মিষ্টির স্বাদে আহ্লাদে ভরপুর এই বাংলা। তবে টক বলতেই যার কথা মনে আসে সেটি হল তেঁতুল। শুধু মনেই না তেঁতুলের নাম শুনলে জিভেও জল চলে আসে। কম বেশি সবাইই তেঁতুল খেতে পছন্দ করি। আর এটা বসন্তের ফল হলেও শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সবসময়ই পাওয়া যায়। তাই যারা এটা পছন্দ করে তাদের খাদ্যতালিকায় তেঁতুলের আচার সবসময় পাওয়া যায়।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান খাবারের মধ্যে তেঁতুল অন্যতম। সারাবিশ্বে রস আস্বাদন ফল হিসেবে পরিচয় লাভ করেছে এই তেঁতুল। কাঁচা, পাকা, আচার কিংবা সস তৈরি করে বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। পাকা তেঁতুল সংরক্ষণ করে সারাবছর খাওয়া যায়।তেঁতুল একপ্রকার টক ফলবিশেষ। হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে এটি খুব উপকারী। তেঁতুল বসন্তকালের ফল হলেও সারা বছরই এটি পাওয়া যায়। তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর ভেষজ ও পুষ্টিগুণ। এটি পরিপাকবর্ধন ও রুচিককারক।
খাদ্যশক্তির পরিমাণ ওণযাণ্য ফলের চেয়ে অনেক বেশি। তেতুলে আয়রনের পরিমাণ সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ২০ গুণ বেশি। এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ১৭ গুণ বেশি।প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলে মোট খনিজ পদার্থ ২.৯ গ্রাম, খাদ্য-শক্তি ২৮৩ কিলোক্যালোরি, আমিষ ৩.১ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ৬৬.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৭০ মিলিগ্রাম, আয়রণ ১০.৯ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৬০ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম। নিম্নে তেঁতুল খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ডায়বেটিস কন্ট্রোল করে:–তেঁতুলের বীজ ডায়বেটিস কন্টোল করতে সক্ষম। এছাড়াও রক্তে চিনির মাত্রাও ঠিক রাখে। এতে উপস্থিত এক ধরনের এনজাইম যার নাম alpha-amylase রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
হার্ট ঠিক রাখে:– দেখা গেছে তেঁতুল খুবই হার্ট ফ্রেন্ডলি। এতে উপস্থিত ফ্ল্যাভরনয়েড ব্যাড কোলেস্টেরল কমায় এবং গুড কোলেস্টেরল বাড়ায়। এছাড়াও রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড (এক ধরনের ফ্যাট) জমতে দেয় না। এতে উপস্থিত উচ্চ পটাশিয়াম রক্ত চাপ কম করতে সাহায্য করে।
ত্বক উজ্জ্বল ও রোগমুক্ত রাখতে:– তেঁতুল ক্ষতিকারক আলট্রা ভায়োলেট রে-র হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতে সাহায্য করে। এছাড়াও যাদের ব্রণ রয়েছে তাদের জন্য তেঁতুল উপকারী। এতে উপস্থিত হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকের মৃত চামড়া কোষ অপসারণ করতে সাহায্য করে। এতে ত্বক উজ্জ্বল ও রোগমুক্ত থাকে ।
ক্যান্সার প্রতিরোধে:–তেঁতুলে অধিক মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা কিডনি ফেলিওর এবং কিডনি ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে।
লিভার সুরক্ষিত রাখে:– দেখা গেছে তেঁতুল আমাদের লিভার বা যকৃতকেও ভালো রাখে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে নিয়মিত তেঁতুল পাতা ব্যবহার করে উচ্চ মাত্রায় মদ্যপানের ফলে ড্যামেজড লিভার অনেকটা সেরে উঠেছে।
ওজন কমায়:–তেঁতুলে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার আছে আর একই সঙ্গে এটা সম্পূর্ণ ফ্যাট ফ্রি। রিসার্চ করে দেখা গেছে রোজ তেঁতুল খেলে ওজন কমে।প্রচন্ড টক স্বাদের এই ফলটি অনেকেরই প্রিয় খাবার। এতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় তা ত্বক, মাড়ি ও চুলের জন্য উপকারী। এছাড়া তেঁতুল খাবারের রুচিও বাড়ায়। তাই আমাদের নিয়মিত শারীরিক উপকারিতার জন্য কিছুটা পরিমানে হলেও তেঁতুল খাওয়া উচিৎ।
পুষ্টি উপাদান পাকা তেঁতুল কাঁচা তেঁতুল বিলাতি তেঁতুল
- জলীয় অংশ (গ্রাম) ২০.৯ ৮৩.৬ ৭৯.২
- মোট খনিজ পদার্থ (গ্রাম) ২.৯ ১.২ ০.৭
- আঁশ (গ্রাম) ৫.৬ – ১.০
- খাদ্যশক্তি (কিলোক্যালরি) ২৮৩ ৬২ ৭৮
- আমিষ (গ্রাম) ৩.১ ১.১ ২.৭
- চর্বি (গ্রাম) ০.১ ০.২ .০৪
- শর্করা (গ্রাম) ৬৬.৪ ১৩.৯ ১৬
- ক্যালসিয়াম (মিলিগ্রাম) ১৭০ ২৪ ১৪
- আয়রন (মিলিগ্রাম) ১০.৯ – ১.০
- ক্যারোটিন (মাইক্রোগ্রাম) ৬০ – –
- ভিটামিন বি১ (মিলিগ্রাম) – ০.০১ .০২২
- ভিটামিন বি ২ (মিলিগ্রাম) ০.০৭ ০.০২ .০০৩
- ভিটামিন সি (মিলিগ্রাম) ৩ ৬ ১০৮