জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণকে দেওয়া ৫৬ ভোগের ইতিহাস জানুন 

জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণকে দেওয়া ৫৬ ভোগের ইতিহাস জানুন 

শ্রী কৃষ্ণের জন্ম তিথি উপলক্ষে পালন করা হয় জন্মাষ্টমী।নিঃসন্তান বা পুত্রহীন দম্পতি কৃষ্ণের গোপাল রূপকে পুত্র হিসেবে প্রতিপালন করেন। গোপাল ঘরে ঘরে পূজিত হয় পুত্ররূপেও। দেশের বাইরেও মহাসমারোহে পালিত হয় এই জন্মাষ্টমী উৎসব। এই দিনটিতে শ্রীকৃষ্ণকে ৫৬ ভোগ উৎর্গ করার প্রথাও রয়েছে। যুগ যুগ ধরে এই ঐতিহ্য চলে আসছে। কিন্তু কেন এই দিন শ্রী কৃষ্ণেকে ৫৬ভোগ উৎর্গ করা হয় ? এর পিছনেও রয়েছে এক কাহিনী। জনশ্রুতি অনুসারে, যখন ইন্দ্র ব্রজবাসীর উপর ভারী বৃষ্টিপাত করেন,  ব্রজবাসী অত্যন্ত অসহায় হয়ে শরণাপন্ন হন কৃষ্ণের।

কৃষ্ণ ব্রজবাসীর রক্ষার্থে বিশালাকায় গোবর্ধন পর্বত আঙ্গুলের উপর তুলে ধরে থাকেন। শ্রী কৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বতটিকে আঙ্গুলের উপরে সাত দিন ধরে রেখেছিলেন, এই সময়ে ব্রজ এবং প্রাণী পাখিরা গোবর্ধনের অধীনে আশ্রয় নেন। সাত দিন পরে, যখন বৃষ্টিপাত শেষ হয়েছিল, তখন তারা সকলেই গোবর্ধনের পর্বত থেকে বেরিয়ে আসেন।মা যশোদা প্রতিদিন কৃষ্ণকে দৈনিক আট বার করে খেতে দিতেন।  ব্রজবাসী ওই নিরন্তর বৃষ্টির মধ্যেও সাতদিন ধরে কৃষ্ণকে দৈনিক আট বার নানা সুস্বাদু পদ বানিয়ে দিতেন।  সাত দিন ধরে দৈনিক আটটি পদ, অর্থাৎ মোট ছাপান্নটি পদ ব্রজবাসী কৃষ্ণের জন্য তৈরি করেছিলেন।

তাই প্রতি বছর জন্মাষ্টমীতে কৃষ্ণের নৈবেদ্য হিসেবে রাখা হয় ছাপান্ন রকমের পদ।এই ৫৬ টি ভোগের মধ্যে রয়েছে মাখন মিশ্রি, ক্ষীর,খিঁচুড়ি,লাড্ডু, টিক্কি, কাজু, বাদাম, পিঠা, রসগুলা, জালেবি, মুং ডাল হালওয়া, রাবড়ি, মালপুয়া,  বাদাম দুধ, পাকোড়া, মোহনভোগ, চাটনি,  বেগুনী, নানা ধরণের শাক-সবজি  ইত্যাদি । আবার অনেকে ভগবান কৃষ্ণকে ২০ ধরণের মিষ্টি,  তালের বড়  এবং নানা ধরণের শুকনো ফলও দেন। কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পুজো শুরু হয় সূর্য ডোবার পর। পুজো, ভজন, কীর্তনের মাধ্যমে রাতে উপবাস ভাঙার পরের দিন পালিত হয় নন্দ উৎসব। এ দিন গোপালকে ৫৬ পদে ভোগ দেওয়ার নিয়ম।

৫৬ ভোগে কী কী থাকে?ভাত (ভক্ত), ডাল (সুপ), চাটনি (প্রলেহ), কঢ়ী (সদিকা), দই-সব্জির কঢ়ী (দধিশাকজা), সিখরন (সিখরিণী), শরবৎ (অবলেহ), বাটী (বালকা), মোরব্বা (ইক্ষু খেরিণী), শর্করা যুক্ত (ত্রিকোণ), বড়া (বটক), মঠরী (মধু শীর্ষক), ফেনি (ফেণিকা), পুরী বা লুচি (পরিষ্টশ্চ), খজলা (শতপত্র), ঘেওয়ার (সধিদ্রক), মালপুয়া (চক্রাম), চোলা (চিল্ডিকা), জিলিপি (সুধাকুন্ডলিকা), মেসু (ধৃতপূর), রসগোল্লা (বায়ুপূর), চন্দ্রকলা (পগী হুই), মহারায়তা (দই), থুলি (স্থূলী), লবঙ্গপুরী (কর্পূরনাড়ী), খুরমা (খণ্ড মণ্ডল), ডালিয়া (গোধূম), পরিখা, সুফলঢয়া (মৌরী যুক্ত), বিলসারু (দধিরূপ), লাড্ডু (মোদক), শাক, অধানৌ আচার (সৌধান), মোঠ (মণ্ডকা), পায়েস (ক্ষীর), দই, গাওয়া ঘি, মাখন (হৈয়ঙ্গপীনম), মালাই (মন্ডূরী), রাবড়ি (কূপিকা), পাপড় (পর্পট), সীরা (শক্তিকা), লস্যি (লসিকা), সুবত, মোহন (সংঘায়), সুপারি (সুফলা), এলাচ (সিতা), ফল, তাম্বুল, মোহন ভোগ, লবণ, কষায়, মধুর, তিক্ত, কটূ, অম্ল।