তেজপাতার ঘরোয়া ও ভেষজ গুণ গুলো জেনে নেওয়া যাক -

তেজপাতার ঘরোয়া ও ভেষজ গুণ গুলো জেনে নেওয়া যাক -
Bay leaves

আজ বাংলা: তেজপাতা আমাদের সবার রান্নাঘরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কোনো রান্নাতে তেজপাতা দিলে সেটা আমরা ফেলে তারপরেই খাই, কিন্তু এর উপকারিতা অনেক। ভেষজ গুণ এর পাশাপাশি ঘরোয়া টোটকা হিসেবে কাজ করে তেজপাতা। তেজপাতা গুঁড়ো করে তা জলের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত পান করলে যাদের হজমের সমস্যা আছে তারা রাতারাতি রেহাই পাবে, মেটাবোলিজম বাড়াতে সাহায্য করে তেজপাতা। ফলে অতিরিক্ত ওজন হ্রাস হয়।

অনেকেই সারা বছর সর্দি কাশিতে ভোগেন। বুকে কফ জমলে তা থেকে যদি শ্বাসকষ্ট হয় তবে তেজপাতা ফোটানো জল খেলে রিলিফ পাওয়া যায়। এছাড়া তেজপাতা সেদ্ধ করে বুকে মালিশ করলেও কাজ হয়।আপনি যদি হঠাৎ করে কোন জায়গায় চোট পান, বা কোন ফোলা জায়গায় তেজপাতার তেল মালিশ করলে তা কমে যায়। মাথা ব্যাথা, মাইগ্রেন ইত্যাদিতেও তেজপাতা দিয়ে তৈরি তেল মাখতে পারেন।

কিডনির সমস্যায় ভুগছেন অনেক দিন ধরে? কিডনিতে পাথর থাকলে তেজপাতা ফোটানো জল খান। আরাম পাবেন।ত্বকের কেয়ার নিতেও তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। চন্দন ও তেজপাতা একসাথে বেটে মুখে কিছুক্ষন লাগিয়ে রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি হয়েছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
একটি গবেষণায় দেখা যায় দিনে অন্তত দু’বার তেজপাতা গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে। এটি প্রমাণ হয়েছে যে, তেজপাতায় থাকা উপাদান ইনসুলিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে নিয়ন্ত্রণে রাখে। যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন তাদের জন্যেও তেজপাতা বেশ উপকারী।

হজমে সাহায্য করে
কোষ্ঠকাঠিন্য? তেজপাতা আপনার স্বাভাবিক হজমশক্তি ফিরিয়ে আনবে। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয়। অতিরিক্ত প্রস্রাবের সমস্যা কমায় ও হজম রস তৈরিতে এটি উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। তেজপাতায় থাকা এনজাইম দ্রুত খাবার ভাঙতে পারে ফলে যারা অন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য তেজপাতা অনেক উপকারী।

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
তেজপাতায় রয়েছে রুটিন ও ক্যাফেক অ্যাসিড। এ উপাদানগুলো হার্টের দেয়ালকে মজবুত করে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

ব্যথা উপশম করে
তেজপাতা প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি যেকোনো ধরনের মাথা ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা এমনকি বাতের ব্যথা উপশমে কার্যকরী। তেজপাতা ও রেড়ির পাতার (ক্যাস্টর) পেস্ট আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখলেই ব্যথা কমে যাবে। এছাড়া পাতার তেল কপালে ম্যাসাজ করলে মাথা ব্যথা থাকবে না।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে
কিছু গবেষণায় দেখা যায় তেজপাতা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। এতে ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান থাকায় এটি ক্যান্সার কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণা অনুযায়ী তেজপাতা ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে।

ক্ষত নিরাময় করে
তেজপাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি ক্ষত সারাতে দারুণভাবে কাজ করে। এটি ক্যান্ডিডার মত ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।

গলা খুশখুশ ও কাঁশি
আপনি যদি ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হন ও কাঁশির সমস্যায় ভোগেন তাহলে ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে এটি আপনাকে চমৎকারভাবে সাহায্য করবে। ৪-৫টি তেজপাতা গরম জলেতে সিদ্ধ করুন। জল কুসুম ঠাণ্ডা করে নিন। একটি পরিষ্কার কাপড় জলেতে ভিজিয়ে বুক মুছুন। কয়েকবার এটি করুন। আর খেয়াল রাখবেন জলে যেন খুব বেশি গরম না হয়। 

কিডনির পাথরের চিকিৎসায়
একটি গবেষণা অনুযায়ী তেজপাতা শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে এটি কিডনির সমস্যা করে ও অন্যান্য গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে।

উদ্বিগ্নতা ও চাপ কমায়
যদি দিনের শেষে আপনার মনমেজাজ ভালো না লাগে তাহলে এক কাপ তেজপাতার চা খেয়ে দেখতে পারেন। এটি আপনার স্নায়ু শান্ত করে ও উদ্বিগ্নতা কমায় এমনকি ভালো ঘুমের জন্যেও উপকারী।