দেবী কালিকার মতোই দেবীরা ছড়িয়ে আছেন পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও

দেবী কালিকার মতোই দেবীরা ছড়িয়ে আছেন পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও। সভ্যতার আদি থেকেই তাঁরা ছিলেন। মেক্সিকোর অ্যাজটেক সভ্যতায় কোটলিকিউ নামে এক দেবীর দেখা পাওয়া যায়। তিনি সৃষ্টি এবং ধ্বংসের দেবী। এই দেবীকে বলা হয় ‘Lady of Serpents-skirt’ এবং ‘Goddess of Serpent Petticoat’। দেবীর কটিবন্ধটি সাপের সমাহার। বুক থেকে নেমে আসা মালাটি মানবদেহের হৃদযন্ত্র দিয়ে তৈরি। মাঝে লকেট হিসেবে শোভা পায় নরকপাল। এই দেবীকে আবার ‘আওয়ার মাদার’ বলে সম্বোধন করা হয়।
জীবন এবং মৃত্যু দুয়েরই অধিষ্ঠাত্রী তিনি। আজও মেক্সিকোর রেডইন্ডিয়ান সম্প্রদায়েরআরাধ্য তিনি। প্রাচীন ক্রিট সভ্যতায় রিয়া নামে এক দেবী আছেন। রাশিয়ার দক্ষিণ অংশে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। আমাদের দেবী কালিকার থেকে তাঁর তফাৎ গায়ের রঙে। দেবী রিয়া রক্তবর্ণা। মানে লাল। আয়ারল্যান্ডে কোলিয়েক আর ভারতের কালীর মিল খুঁযে পেয়েছেন অনেকে।কোলিয়েক সাদা চুল বৃদ্ধা। একচক্ষু রমনী। তিনি শীতের দেবী। ঘনঘর কৃষ্ণবর্ণ শীতকাল।
মহাপ্লাবন আর ধ্বংস তাঁর করতলে। সংহারী মূর্তির পাশাপাশি তিনিই আবার বরদাও। প্রবল শৈত্যের মাঝে জমিকে ফলবতী করে তোলেন নতুন শস্যকণায়। স্কটল্যান্ডের দেবী স্কটিয়ার। এই দেবী ঘোরকৃষ্ণবর্ণা। দেবী স্কটিয়ারের নাম থেকে স্কটভূমির নাম হয়েছে ‘স্কটল্যান্ড’। স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় আছেন দেবী স্কাডি। স্কটিয়া এবং স্কাডি দেবী কোলিয়েক-এরই রূপভেদ।
অসুখ এবং বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভারতে রক্ষাকালীর কাছে মানত করে ভক্তরা। পশুবলিও দেওয়া হয় বিপদ থেকে উদ্ধার পেলে। একই ভাবে স্কট দেবী স্কটিয়ারের কাছেও রোগ সেরে গেলে ভেড়া মানত করে ভক্তরা। তবে স্মল পক্সের ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা যায়। প্রাচীন স্পেনেরউপকথায় পাওয়া যায় রানী ‘ক্যালিফা’ বা ‘ক্যালিপিয়া’র নাম। ধন রত্নে পরিপূর্ণ রাজত্বের সম্রাজ্ঞী ছিলেন ক্যালিফা নামে এক কৃষ্ণবর্ণা নারী। তাঁর নামেই পশ্চিম আমেরিকার ভূখণ্ডের নামকরণ করা হয় ক্যালিফোর্নিয়া। দেবী ক্যালিফাই ‘স্পিরিট অফ ক্যালিফোর্নিয়া’।
ফিনল্যান্ডেও এক ঘোর কৃষ্ণা দেবী আছেন। নাম শুনলে অবাক হতে হয়। ‘কালমা’। অনেকটা ‘কালী-মা’র মতোই শোনাচ্ছে না? এই কালমা দেবীর সম্বন্ধে বলা হয় ‘a hunter of tombs’। সমাধিক্ষেত্র তাঁর পছন্দের জায়গা। আমাদের শ্যামাও শ্মশানবাসিনী। দেবী কালিকার ধ্যানে তাঁকে‘শ্মশানালয়বাসিনীম’ বলে উল্লেখ করা হয়। সৃষ্টি এবং বিনাশ এই দুই রূপের একত্র আধার রূপেই দেশে দেশে সৃষ্টি হয়েছে কালিকা সদৃশ্য দেবীর। তার দর্শন এবং ব্যাখ্যা বিবর্তিত হয়েছে বারবার। কিন্তু মূল ভাব একই। দেবী কালিকার দিগম্বরী রূপ হয়ে উঠেছে নারীত্বের প্রতীক। সে স্বাধীন। মুক্ত। একক সম্পূর্ণা। তার এই রূপটিতেই মুগ্ধ তাবৎ বিশ্ব।