লোদী রাজবংশ এর ইতিহাস

লোদী’-রা ছিল আফগানিস্তানের অধিবাসী। আফগান ‘লোদী’ উপজাতির ‘শাহু খেল’ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মালিক বাহরাম সুলতান ফিরোজ তুঘলকের আমলে মুলতানে আসেন এবং সেখানকার গভর্নর মর্দান দৌলতের অধীনে চাকুরি নেন। বাহরামের এক পুত্র সুলতান শাহ শিরহিন্দের শাসক নিযুক্ত হন এবং খিজির খাঁ কর্তৃক ইসলাম খাঁ' উপাধিতে ভূষিত হন। বাহরামের অপর পুত্র মালিক কারার পুত্র ছিলেন বহলুল।
বহলুল তাঁর কাকা ইসলাম খাঁ-র খুব প্রিয়পাত্র ছিলেন। আরবি ও ফারসিতে তাঁর যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি ছিল। সামরিক শিক্ষাতেও তিনি পারদর্শিতা দেখান। সুলতান শাহ'র ইচ্ছানুযায়ী তাঁর মৃত্যুর পর বহলুল লোদী শিরহিন্দের গভর্নর নিযুক্ত হন। দিল্লির সুলতান মহম্মদ শাহের স্বপক্ষে যুদ্ধ করে মালবের শাসক মহম্মদ খলজিকে বহলুল পরাজিত করে পুরস্কার হিসেবে লাহোরের শাসক পদ পান।
অতঃপর দিল্লির উজির হামিদ খাঁকে পরাজিত করে দিল্লি দখল করেন। সেই সময় সুলতান আলম শাহ বদাউনে অবস্থান করছিলেন। বহলুল লোদী সুলতানকে দিল্লি এসে সিংহাসন গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আলম শাহ স্বেচ্ছায় সিংহাসন বহলুলকে সমর্পণ করে ‘বদাউনে’ থাকার সিদ্ধান্ত নেন। আঞ্চলিক শাসক রূপেই তিনি জীবনের শেষ দিনগুলি কাটিয়ে দেন।
বহলুল সিংহাসনে বসে ‘লোদী বংশের’ শাসনের সূচনা করেন ১৪৫১ খ্রীস্টাব্দে। পূর্ব ভারতের অভিজাতদের সাথে ইব্রাহিমের সংঘাত পশ্চিম প্রান্তেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তখন পাঞ্জাবের গভর্নর ছিলেন দৌলত খাঁ লোদী। কার্যত তিনি স্বাধীনভাবেই রাজত্ব করতেন। দৌলতের পুত্র দিলওয়ার খাঁ দিল্লিতে গিয়ে নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেন সুলতান কী নির্মম আচরণ করেন বন্দি অভিজাত ও তাদের পরিবারের সাথে।
স্বভাবতই দৌলত খাঁ ইব্রাহিমের হাত থেকে স্থায়িভাবে মুক্তি পাওয়ার পথ খুঁজতে থাকে। ঠিক তখনই তৈমুরের বংশধর রাজ্যচ্যুত জহিরুদ্দিন বাবর কাবুলের অনিশ্চিত আশ্রয় থেকে হিন্দুস্তানের সমৃদ্ধ ও সহজ ভূমিতে অভিযানের পরিকল্পনা করেছিলেন। দৌলত খাঁ বাবরকে দিয়ে ইব্রাহিমকে জব্দ করার সিদ্ধান্ত নেন। অবশ্য এ কাজে তিনি সিংহাসনের আর এক দাবিদার আলম খাঁ -এর মদত পান।
বিচক্ষণ বাবর সানন্দে এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। পানিপথের প্রান্তরে মুঘল-বাহিনীর সাথে ইব্রাহিম লোদীর চূড়ান্ত সংঘর্ষ হয়। অন্তর্দ্বন্দ্বে দীর্ণ সুলতানি-বাহিনী শক্তিশালী মুঘলদের হাতে বিধ্বস্ত হয়। পানিপথের প্রান্তরে সূচিত হয় ভারত-ইতিহাসের এক নবতম অধ্যায়।ইবরাহিম লোদির আমলে লোদি রাজবংশের পতন ঘটে। তিনি মেবারের রানা সাঙ্গার সাথে কাছ থেকে বেশ কিছু আক্রমণের সম্মুখীন হন।
রানা সাঙ্গা লোদিদেরকে বেশ কয়েকবার পরাজিত করে ফলে রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। ইবরাহিম লোদি বাবরের কাছে পরাজিত হওয়ার পর লোদি রাজবংশের সমাপ্তি ঘটে। বাবর মুঘল রাজবংশের সূচনা করেন।এই ভাবে ইব্রাহিম লোদীর আমলে বহুলুল লোদীর প্রতিষ্ঠিত লোদী রাজবংশের পতন ঘটে।