লোকনাথ বাবার বাণী

লোকনাথ বাবার  বাণী

Loknath Brahmachari লোকনাথ ব্রহ্মচারী ছিলেন একজন সনাতন সিদ্ধপুরুষ। ভক্তদের কাছে তিনি বাবা লোকনাথ নামে বেশী পরিচিত। হিন্দু ধর্মানুসারীদের নিকট লোকনাথ ব্রহ্মচারী অত্যন্ত পূজনীয় ব্যাক্তিত্ব। বাবা লোকনাথ শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি জন্মাষ্টমীতে ১৭৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ আগস্ট কলকাতা থেকে কিছু দূরে বর্তমান উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার চৌরাশী চাক্‌লা গ্রামে একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দেহত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বারদী আশ্রমে অবস্থান করেছিলেন। বারদীর লোকনাথ মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু তীর্থভূমি।

বিশেষত বাঙালি হিন্দুদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় তীর্থস্থান। সনাতন পন্ডিতের আজকের আয়োজনে আমরা জানবো, বাবা লোকনাথের মুখনিঃসৃত এমন কিছু বাণী, যা জীবনে চলার পথে অনুপ্রেরণা জোগাবে। চলুন জেনে নিই বাবা লোকনাথের অমীয় সেই বাণীগুলো। যাহারা আমার নিকট আসিয়া, আমার আশ্রয় গ্রহণ করে তাহাদের দুঃখে আমার হৃদয় আর্দ্র হয়, এই আর্দ্রতাই আমার দয়া ইহাই আমার শক্তি যা তাদের উপর প্রসারিত হয় এবং তাহাদের দুঃখ দূর হয়।

অন্ধকার ঘরে থাকিলে, তোকে যদি কেহ জিজ্ঞেস করে তুই কে? তুই বলিস ‘আমি’। আমাকে যদি কেহ জিজ্ঞেস করে আমিও বলি ‘আমি’। নামে নামে এত মিত্রতা হয় আর আমিতে আমিতে কী কোনও মিত্রতা হইতে পারে না? সত্যের মতো পবিত্র আর কিছু নেই। সত্যই স্বর্গ গমনের একমাত্র সোপানস্বরূপ, সন্দেহ নেই। যে ব্যক্তি সকলের সুহৃদ। আর যিনি কায়মনোবাক্যে সকলের কল্যাণ সাধন করেন তিনি যথার্থ জ্ঞানী।

অর্থ উপার্জন করা, তা রক্ষা করা আর তা ব্যয় করার সময় দুঃখ ভোগ করতে হয়। অর্থ সকল অবস্থাতেই মানুষকে কষ্ট দেয়। তাই অর্থ ব্যয় হলে বা চুরি হলে তার জন্য চিন্তা করে কোনও লাভ নেই। ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, যে সন্তান মায়ের আদেশ পালন করে, ভগবান তার মঙ্গল করেন। গর্জন করবি কিন্তু আহাম্মক হবি না, ক্রোধ করবি কিন্তু ক্রোধান্ধ হবি না।

রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়িবে, আমাকে স্মরণ করিও, আমিই রক্ষা করিব। বাক্যবাণ, বন্ধুবিচ্ছেদবাণ ও বিত্তবিচ্ছেদবাণ; এই তিনটি বাণকে সহ্য করিতে পারিলে মৃত্যুকেও হটাইয়া দেওয়া যায় যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞ, ধার্মিক, সত্যাচারী, উদারচিত্ত, ভক্তিপরায়ণ, জিতেন্দ্রিয়, মর্যাদা রক্ষা করতে জানে, আর কখনো আপন সন্তানকে পরিত্যাগ করেন না, এমন ব্যক্তির সঙ্গেই বন্ধুত্ব করবি। আমিও তোদের মত খাই-দাই, মল-মূত্র ত্যাগ করি, আমাকেও তোদের মতই একজন ভেবে নিস।

আমাকে তোরা শরীর ভেবে ভেবেই সব মাটি করলি, আর আমি যে কে, তা আর কাকে বুঝাবো? সবাই তো ছোট ছোট চাওয়া নিয়েই ভুলে রয়েছে আমার প্রকৃত আমি কে। দীন দরিদ্র অসহায় মানুষের হাতে যখন যা দিবি, তা আমিই পাব, আমি গ্রহণ করবো। দারিদ্রতায় ভরা সমাজের দুঃখ দূর করার চেষ্টা করবি। ধার্মিক হতে চাইলে প্রতিদিন রাতে শোবার সময় সারাদিন কাজের হিসাব নিকাশ করবি, অর্থাৎ ভাল কাজ কি করেছিস এবং মন্দ কাজ কি করেছিস, সেটা ভেবে মন্দ কাজ যাতে আর না করতে হয় তার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হবি।

যারা ধর্ম নেই মনে করে সাধুগণকে উপহাস করে, আর ধর্মের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করে, তারা নিঃসন্দেহে বিনাশ প্রাপ্ত হয়। গুরু প্রদত্ত মন্ত্রের শুদ্ধাশুদ্ধ বিচার করা শিষ্যের কর্ম নহে। গুরু যাহা দিয়েছেন শিষ্য তাহাই জপ করিবে। এই বিরাট সৃষ্টির মধ্যে এমন কিছু নেই যাকে উপেক্ষা করা চলে বা ছোট ভাবা যায়। প্রতিটি সৃষ্টি বস্তু বা প্রাণী নিজ নিজ স্থলে স্বমহিমায় মহিমান্বিত হয়ে আছে জানবি। যা মনে আসে তাই করবি, কিন্তু বিচার করবি। সচেতন হতে হবে। অসচেতনাই জীবনের ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিরন্তর অভ্যাস এবং চেষ্টার ফলে তাকে সচেতনতায় রূপান্তরিত করতে হবে। বিদ্যা, তপস্যা, ইন্দ্রিয় সংযম ও লোক পরিত্যাগ ছাড়া কেউই শান্তি লাভ করতে পারে না। অহং চলে গেলে নিজের মনই নিজের গুরু হয়, সৎ ও অসৎ বিচার আসে। জ্ঞানের সঙ্গে ভক্তির মণিকাঞ্চন যোগ হলে শ্রদ্ধা হবে তোদের আশ্রয়, শ্রদ্ধা হবে তোদের বান্ধব এবং শ্রদ্ধাই হবে তোদের পাথেয়। মন যা বলে শোন, কিন্তু আত্মবিচার ছেড়ো না।

কারণ মনের মতো প্রতারক আর কেউ নেই। মহাপুরুষদের বাক্য, শাস্ত্র বাক্যে শ্রদ্ধাবান না-হলে প্রকৃত আত্মবিচার সম্ভব নয়। কাম, ক্রোধ সব রিপুই অবচেতন মনের স্তরে স্তরে সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। সুযোগ পেলেই তারা প্রকাশ হয়, কারণ মানুষ তাদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সচেতন নয়। অচেতন মন রিপুদের অবাধ ক্রীড়াক্ষেত্র। ওরে, সে জগতের কথা মুখে বলা যায় না, বলতে গেলেই কম পড়ে যায়। বোবা যেমন মিষ্টির স্বাদ বলতে পারে না, সে রকম আর কি! অন্ধ সমাজ চোখ থাকতেও অন্ধের মতো চলছে। যে তার মন-প্রাণ আমাকে দিতে পেরেছে, আমি তারই হয়ে গেছি, তার কাছে ঋণী।

 যে তার মন-প্রাণ আমাকে দিতে পেরেছে, আমি তারই হয়ে গেছি, তার কাছে ঋণী। বাবা লোকনাথের এই অমীয় বাণীগুলো অনুসরণ করলে আমাদের জীবনও হতে পারে অনেক সুন্দর ও প্রাণবন্ত। তাই চলুন সবাই বাবা লোকনাথের উপদেশ মেনে চলি।